এআইয়ের কাছে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে যা হতে পারে
একটা সময় অজানা কিছু জানতে হলে ভরসা ছিল গুগল। এখন সেই জায়গা এআই অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে। ব্যাপারটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, চ্যাটজিপিটি সব জানে! নির্দিষ্ট কোনো এআই চ্যাটবটকে একটা বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন করার সুযোগ আছে। এমনকি গুগলে কোনো বিষয় খুঁজলেও প্রায়ই দেখা যায়, একখানা এআই ওভারভিউ হাজির হয়েছে সামনে। কিন্তু এআইয়ের কাছে কি স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশ্ন করা ঠিক?
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন বলেন, ‘এটা ঠিক যে এআই স্বাস্থ্যবিষয়ক বহু পরামর্শ দিতে পারে। তবে তা কখনোই একজন বিশেষজ্ঞের মতামতের বিকল্প নয়। একজন চিকিৎসকই জানেন, রোগীর কোন সমস্যার জন্য আনুষঙ্গিক কোন বিষয়ে আরও প্রশ্ন করতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার কাছে থাকা সব তথ্যের ভিত্তিতে একটা সারকথা উপস্থাপন করে আমাদের সামনে, যা বাস্তবের সঙ্গে না–ও মিলতে পারে।’
এআইয়ের কাছে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে কী হতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক এই চিকিৎসকের কাছ থেকেই।
সঠিক তথ্য খুঁজে না পাওয়া
এমন অনেক রোগ আছে, যেগুলোয় কাছাকাছি ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। কাজেই একটি লক্ষণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে এআই সেটির বহু কারণ বলে দেয়। ধরা যাক, কারও বমি হচ্ছে। এআইয়ের কাছে বমির কারণ খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল বমির বহু কারণের খোঁজ। সব তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর ধারণা হলো, খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য বমি হচ্ছে। অথচ তাঁর বমির কারণ পেটের কৃমি। এআই ব্যবহার করতে গিয়ে বহু তথ্যের মধ্যে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করতে না পারার মতো সমস্যা হতেই পারে।
অসম্পূর্ণ তথ্য
হয়তো কারও পেটের ব্যথা হচ্ছে। পেটের ব্যথার অনেক কারণই থাকতে পারে। কিছু শারীরিক পরীক্ষা করে একজন চিকিৎসক তাঁর রোগীর ব্যথার কারণ খুঁজে বের করেন। প্রাথমিকভাবে যা বোঝা যায়, এরপর সে অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়। এআইয়ের মাধ্যমে এই বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। কেবল কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জেনে এআই যে তথ্য দেয়, অনেক ক্ষেত্রেই তা অসম্পূর্ণ হয়।
বিভ্রান্তিকর তথ্য
এআই বহু সূত্র থেকে তথ্য নেয়। সব সূত্র নির্ভরযোগ্য নয়। একটি গবেষণা হয়তো মাত্র ২০০ মানুষকে নিয়ে হয়েছে, অন্যটি হয়েছে দুই হাজার মানুষকে নিয়ে। এমনটা হতেই পারে যে কমসংখ্যক মানুষকে নিয়ে করা গবেষণাটি থেকে পাওয়া তথ্যই বেশি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করতে পারে এআই। যে রোগ বিরল অর্থাৎ যে রোগ হওয়ার আশঙ্কা নিতান্তই কম, সেই রোগের তথ্য সামনে চলে এলে একজন রোগী বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
বাড়তি দুশ্চিন্তা
একটি সাদামাটা লক্ষণের কারণ হিসেবে ক্যানসারের মতো জটিল রোগকেও উপস্থাপন করতে পারে এআই। এ ক্ষেত্রে রোগী সঠিক দিকনির্দেশনা না পেয়ে উল্টো পড়তে পারেন বাড়তি দুশ্চিন্তায়। একটি সাধারণ লক্ষণকে ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে ধারণা করতে হলে যে আনুষঙ্গিক অন্যান্য লক্ষণ ও শারীরিক চিহ্ন লক্ষ করা প্রয়োজন, এআই তা করতে পারে না। ফলে রোগী অকারণেই এক মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারেন।
আরও যা
• এআইয়ের কাছ থেকে নিজের রোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ভিন্ন ধারণা পেলে অনাস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
• জরুরি পরিস্থিতিতে এআইয়ের কাছে প্রশ্ন করতে গিয়ে কালক্ষেপণ করলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে।
• ইন্টারনেট দুনিয়ায় ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে এআইয়ের ওপর নির্ভর না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।