প্রিয় মনোবন্ধু,
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমি কিছুটা সংকোচ বোধ করি। এটি নিয়ে কথা বললেই গা শিউরে ওঠে আমার। তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়তাম। ডিসেম্বরের একদিন আমি একজন ড্রাইভারের কাছে নির্যাতনের শিকার হই। আমি আসলে তখন এসবের কোনো মানে বুঝিনি। তাই কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। ওই ঘটনার পর প্রায় তিন মাস পর্যন্ত আমি খুব ভয় ও অস্থিরতায় কাটিয়েছি। এখন তিন বছরের বেশি হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে সেই ড্রাইভারের কখনো আর দেখা হয়নি। তবু কোনো ছেলে, আঙ্কেল বা কাজিনের কাছে বসলে অথবা স্যারদের ক্লাসে থাকলে আমার মধ্যে তীব্র ভয় কাজ করে। আমি আমার কিছু বন্ধুকে এ ব্যাপারে বলেছি। তবে তাদের পরামর্শে খুব একটা লাভ হয়নি। তিন বছরে এ ব্যাপারে অনেকটা ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। তবে কিছুদিন ধরে আবার সেই ভয় ও আতঙ্ক অনুভব করছি কারও কাছে গেলে। রাতে ঘুমাতে গেলে আমি ভুল করে যার সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছি বা পাশে বসেছি, তার চেহারা চোখের সামনে ভেসে ওঠে এবং খুবই ভয় লাগে। আমার ছেলেবন্ধু বা যেকোনো আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমার মধ্যে এখন আতঙ্ক কাজ করে। আমি জানি না, এই ভয় কাটানোর জন্য কী করতে পারি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: প্রিয় বন্ধু, তোমার মনের অবস্থা আমরা বুঝতে পারছি। তুমি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পার হয়েছ, তা তোমার মনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এই মুহূর্তে তোমার মধ্যে যে ভয় বা আতঙ্ক বিরাজ করছে, তা তিন বছর আগের ঘটনারই প্রতিক্রিয়া। এটি পিটিএসডির (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার) অন্যতম একটি লক্ষণ, কোনো ট্রমার পর এমনটা হয়ে থাকে। তোমার প্রয়োজন সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং, পাশাপাশি তাৎক্ষণিক আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তুমি যে শহরে থাকো, সেখানে কোনো সাইকোলজিস্ট থাকলে তাঁর কাছে কাউন্সেলিং গ্রহণ করতে পারো। কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারো। নিকটবর্তী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগ বা ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে যোগাযোগ করেও ওষুধ আর সাইকোথেরাপি একসঙ্গে নিতে পারো।
এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো editor@kishoralo.com-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - ‘মনোবন্ধু’, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।