ঋতু পরিবর্তনের সময় কিছু মানুষ কেন অসুস্থ হয়ে পড়ে

আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে যে শীত বা ঠান্ডা লাগলেই বুঝি সর্দি-কাশি বা ফ্লু হয়ছবি: সংগৃহীত

কখনো খেয়াল করেছ কি, বছরের কিছু সময়ে সুস্থ থাকাটা বেশ কঠিন? যখনই গরম থেকে ঠান্ডা বা ঠান্ডা থেকে গরম—এই ঋতু পরিবর্তন হয়, তখন হঠাৎ সর্দি-কাশি, জ্বর বা অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। কিন্তু কেন এমন হয়? আবহাওয়া বা ঋতুগত এ পরিবর্তন হলে কেন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে?

আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে যে শীত বা ঠান্ডা লাগলেই বুঝি সর্দি-কাশি বা ফ্লু হয়। তাই যখন ঋতু পরিবর্তন হয় ও তাপমাত্রা একটু কমে, তখনই আমরা ভাবি ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়েছি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এটাকে ঠিক বলে মনে করেন না। তাঁরা বলছেন, তাপমাত্রা কমে যাওয়াটা সরাসরি রোগ হওয়ার কারণ নয়। এর পেছনে অন্য কারণ আছে।

মূলত তাপমাত্রা যখন বদলায়, তখন ক্ষতিকর ভাইরাসগুলো দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং চারপাশে ছড়ানোর সুযোগ পেয়ে যায়। রাইনোভাইরাস বা করোনাভাইরাসের মতো ভাইরাসগুলোই আমাদের সর্দি-কাশির মূল কারণ। বসন্ত বা শরতের মতো ঠান্ডা আবহাওয়ায় এই ভাইরাসগুলোই আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই শুধু ঠান্ডা লাগা নয়; বরং এ সময়ে ভাইরাসের আক্রমণ বেড়ে যাওয়াটাই আমাদের অসুস্থ হওয়ার আসল কারণ।

আরও পড়ুন

সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভাইরাসের ক্ষেত্রেও পরিবেশ কাজ করে। বাতাস যখন ঠান্ডা ও শুকনা থাকে, তখন ফ্লু ভাইরাস সবচেয়ে সহজে বংশবৃদ্ধি করে এবং দ্রুত ছড়ায়। এ কারণেই শীতকালে ফ্লু বা জ্বরের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়।

অন্যদিকে গরমে অসুস্থ হওয়ার কারণ একটু ভিন্ন। এ সময়ে যারা ঋতুভিত্তিক অ্যালার্জিতে ভোগে, পরাগ, ঘাস বা ধুলার সংস্পর্শে এলে তাদের হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা চোখ চুলকানো শুরু হয়। এই অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে এরা অন্যান্য ভাইরাস দ্বারা দ্রুত আক্রান্ত হয়। অনেকে এদের অ্যালার্জিকে ভুল করে সাধারণ ঠান্ডা বা জ্বর ভেবে বসে।

গবেষণায় দেখা গেছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বছরে গড়ে দুই থেকে চারবার এবং শিশুরা পাঁচ থেকে সাতবার ঠান্ডায় ভোগে। এ সংখ্যা প্রায় এক বছরে যতবার ঋতু পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে মিলে যায়। ঋতু পরিবর্তনের সময় প্রায় ২০০ রকমের ভাইরাস বেড়ে যায় চারপাশের পরিবেশে। মূলত এই ভাইরাস ও অ্যালার্জেনগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেই মানুষ বারবার অসুস্থ হয়।

আরও পড়ুন

ঋতু পরিবর্তনের সময় সুস্থ থাকতে হলে প্রথম ও প্রধান কাজ হলো হাত পরিষ্কার রাখা। কারণ, সাধারণ ঠান্ডার জন্য দায়ী রাইনোভাইরাস শরীরের বাইরে প্রায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এমনকি দরজার হাতল বা বাসাবাড়ির সুইচের মতো স্পর্শযোগ্য পৃষ্ঠে এই ভাইরাস ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে।

যেহেতু ভাইরাসগুলো হাত ও বিভিন্ন জিনিসের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা জরুরি। চোখ, নাক বা মুখ বারবার ছোঁয়া থেকে বিরত থাকা। কারণ, এগুলো ভাইরাস প্রবেশের প্রধান রাস্তা। পাশাপাশি, শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হয় এ সময়। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীর ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়।

তাপমাত্রা হঠাৎ পাল্টে গেলে ঠান্ডা-গরম এড়িয়ে চলো। ঋতু বদলের সময় হালকা ও গরম দুই ধরনের পোশাকই সঙ্গে রাখো। বেশি করে পানি পান করো। পানি পান করলে শ্বাসতন্ত্র আর্দ্র থাকে, যা ভাইরাসকে আটকে দিতে সাহায্য করে। আর যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তা নিয়ন্ত্রণে রাখো। মনে রেখো, অ্যালার্জির কারণে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বেশি কাজ করে দুর্বল হয়ে যায়, ফলে তোমরা দ্রুত ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হও। ঢাকা কিংবা অন্যান্য শহুরে এলাকায় যেহেতু ধুলা ও দূষণের মাত্রা বেশি। তাই সব সময় মাস্ক পরা ও সাবধান থাকা স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, হেলথ ইনফরমেশন সেন্টার

আরও পড়ুন