আমার জীবনে এই সমস্যাটাই প্রধান

প্রিয় মনোবন্ধু,

আমি দশম শ্রেণির ছাত্রী। আমার বয়স ১৫ বছর। বলা যায়, কিছুদিন পরেই আমি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেব। করোনার সময়ে যেহেতু অনেক দিন ঘরবন্দী ছিলাম, তাই মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়েছে (নেতিবাচক)। এত দিন ঘরবন্দী থাকায় নানা কারণে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এ ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দ “depression”–এর যেটা আসল, অর্থ সেটা বোঝাচ্ছি। আর এটা যে depression সেটা আমি নিশ্চিত। এই ঘরবন্দী থাকার সময়টাতে আমি পড়াশোনায়ও নিয়মিত ছিলাম না। পাঠ্যবই পড়তামই না বলা যায়। গল্পের বই পড়তাম, তা–ও মুঠোফোনে। কৌতূহলবশত ফেসবুকও ব্যবহার করতাম। নিজেরটা না, বাবা-মায়েরটা। তারাও তেমন কিছুই বলত না। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার চাপ ছিল না। এরপরের বছর আমি ইনস্টাগ্রামে নিজের আইডি খুলে ফেলি। সময় নষ্ট করার আরেকটা উৎস পাই। এসব কারণে আমি মুঠোফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি। তবে এখন মুঠোফোন ধরার পর সময় ব্যয়ের মাত্রা কমে গেছে। কারণ, বেশির ভাগ সময় স্কুলে থাকতে হয়। তারপর বাসায় এসে মুঠোফোন ধরি। কিছুক্ষণ দেখি। আবার রেখে দিই। স্কুলের পড়া করি। কখনো কখনো পড়ার মাঝখানে কোনো প্রয়োজন ছাড়া বা প্রয়োজন হলে একবার মুঠোফোন ধরলে অনেকটা সময় চলে যায়। আবার পড়া শুরু করলে আবার অনেকক্ষণ পরে মুঠোফোনই ধরি, কারণ ছাড়াই। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। আর গত দুই বছরে পড়াশোনায় নিয়মিত না থাকায় এখন মনোযোগও হারিয়ে ফেলেছি। আর এখন পড়ার মাঝখানে মুঠোফোন ধরার কারণে প্রতিদিনের সব পড়া প্রতিদিন ভালোভাবে পড়তে পারি না। কিছু না কিছু বাকি থেকেই যায়। এরপর যখন পরীক্ষার সময় হয়ে যায় তখন চাপ হয়ে যায় অনেক। আর এভাবে পড়ার মাঝখানে মোবাইল ধরে সময় ব্যয়ের জন্য অনুশোচনা হয়। যখন মোবাইল ধরি, তখন সেটা হয় না। আসলে মাথায় তখন এই অপকারী ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেনো ভালো চিন্তাই আসে না। নিজেকে থামাতে পারি না। আর পরীক্ষায় রেজাল্ট যেমন হওয়ার তেমনই হয়—অনেক বাজে। এরপর আর কী বাংলায় “হতাশ”, ইংরেজিতে “depressed” হয়ে যাই। আর এটা প্রায় দুই-তিনটা পরীক্ষার আগে-পরে রিপিট হচ্ছে। পরীক্ষার আগের দিন যখন দেখি আমার প্রস্তুতি খুবই বাজে, তখনো আমি হতাশ হয়ে পড়ি। আর হতাশা কাটাতে মুঠোফোন দেখি। আমি বের হতে পারছি না এই আসক্তি থেকে। আর মানসিক অবস্থা চূড়ান্ত খারাপ বলে পড়ায়ও মন দিতে পারছি না। কিন্তু এসএসসি কাছে চলে এসেছে। আমার আরও অনেক কথা ছিল। তবে এই মুহূর্তে আমার জীবনে এই সমস্যাটাই প্রধান। তাই এটাই বললাম। কী যে ভয়ংকর অবস্থায় আছি! দুঃখিত আমি হয়তো ছোট লেখাকে অনেক বড় করে লিখে ফেলেছি। আমায় সাহায্য করো। আর আমার নাম বলাটা কি খুবই জরুরি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: প্রথম উত্তর হচ্ছে, নাম বলা মোটেই জরুরি নয়। হয়তো করোনায় ঘরে থাকার কারণে তোমার মুঠোফোন ব্যবহার বেড়ে গেছে। তবে তুমি করোনায় নিজেকে ঘরবন্দী ভাবছ, এটা ঠিক না। আসলে কেউই ঘরে বন্দী ছিল না। ঘরেই মুক্ত ছিল, করোনামুক্ত থাকার জন্য ঘরে থাকতে হয়েছে। তাই বাইরের পৃথিবীটাই ছিল বন্দী, ঘর ছিল মুক্ত। এভাবে ভাবলে আর নেতিবাচক চিন্তা তোমার মধ্যে আসবে না। করোনায় তুমি স্কুলে যেতে পারোনি, পড়ালেখায় মনোযোগ কমে গিয়েছিল। কিন্তু পাশাপাশি সেই সময় তোমার কিন্তু অনেক বড় অর্জনও হয়েছে। তুমি প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে শিখেছ, অতিমারির মতো একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তুমি গিয়েছ। দু-এক শ বছরে এক প্রজন্ম সে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারে। এই অভিজ্ঞতা হয়তো ভীতিকর, কিন্তু এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে তোমার মাঝে ঘাতসহনশীলতা বেড়েছে, যা ভবিষ্যতে যেকোনো ট্রমায় তোমাকে শক্তি জোগাবে। আর মুঠোফোন ব্যবহার মানেই কিন্তু আসক্তি নয়। আমরা বলব এই যে তুমি বুঝতে পারছ যে মুঠোফোন ব্যবহারটা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। তার মানে তুমি আসলে নিজেকে সাহায্য করছ। তুমি নিজের জন্য একটা রুটিন তৈরি করো। সে রুটিনে প্রতিদিন কতটুকু সময় মুঠোফোনে থাকবে, তা নির্ধারণ করে কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করো রুটিনটাকে। প্রয়োজনে মা-বাবার কাছে সাহায্য চাও। নির্দিষ্ট সময় মুঠোফোন ব্যবহারের পর তুমি মা-বাবাকে মুঠোফোন জমা দিয়ে বলো। তুমি চাইলেও তারা যেন তা না দেয়। আর বিকল্প আনন্দের উৎস খুঁজে বের করো। গল্প-কবিতার বই আর কিআ পড়তে পারো। ভালো সিনেমা দেখবে। গান শুনবে। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাও। আর তুমি যে ভাবছ তোমাকে হেল্প করার মতো কেউ পাশে নেই, এটা কিন্তু পুরোপুরি ভুল। তোমাকে সাহায্য করার জন্য সবাই প্রস্তুত—মা, বাবা-শিক্ষক-বন্ধু এমনকি মনোবন্ধু!

আর সবকিছু করার পরও যদি তোমার মন ভালো না হয়, তবে কাছাকাছি কোনো মনোরোগ–বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারো।

এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - মনোবন্ধু, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।