আমি বই ছাড়া বাঁচতে পারব না

আমি গল্পের বইয়ের খাঁটি পোকা। তিন বছর বয়সেই খবরের কাগজ পড়তাম। তখনই মা বুঝেছে আমি গল্পের বই পড়ব উৎসাহ নিয়ে। তখন থেকে আমি ‘আউট বই’ পড়ি। কিন্তু আমার মনে হয় না পড়ার বই ছাড়া অন্য বইকে আউট বই বলা উচিত। সেগুলোও কাজের। আমি গত মাসে জে কে রাউলিংয়ের ‘হ্যারিপটার’ সিরিজটা পড়েছি। এরপর থেকে আমি তার পাগল। আম্মু বলে আমি নাকি নেশাগ্রস্ত। আমার বিশ্বাস হয় না। কিন্তু আমার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে দেখে আম্মু আমার সব গল্পের বই নিয়ে নিয়েছে (প্রায় ৩০০টি)। তা দেখে আমি খুব কেঁদেছি। আম্মু বলে, সেটা নাকি ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’। আমি তা-ও অবুঝের মতো প্রতি রাতে কাঁদতাম। স্বপ্ন দেখতাম আম্মু একটা রাক্ষস, আমাকে মারতে আসছে। একদিন বই চুরি করে পড়েছিলাম। ধরা পড়ে খুব মার খেয়েছি। তাও উন্নতি হয়নি। ধ্যান করার চেষ্টা করেছি, লাভ হয়নি। আমি বই ছাড়া বাঁচতে পারব না। কিন্তু আমার রেজাল্টও খারাপ হচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে আমার রোল ১ থেকে ২০-এ নেমে যাবে। কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারলে হতো। কিন্তু আম্মুর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললেই আমাকে গালাগাল করে। এখন আমি কী করব? সমাধান দিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: এখন তুমি কোন ক্লাসে পড়ো, কত বয়স, চিঠি পড়ে কিছুই বুঝলাম না। আমি তোমার সঙ্গে একমত। পাঠ্যবইয়ের বাইরের বই শেখার সহায়ক অবশ্যই। এখনকার সৃজনশীল পরীক্ষাপদ্ধতিতে যে যত বাইরের বই পড়বে, তত সফল হবে। কেবল নির্দিষ্ট সিলেবাসের আওতায় গত্বাঁধা একঘেয়ে পড়া মুখস্থ করে ভালো ফলাফলই কি যথেষ্ট? সংবেদনশীল অনুভূতিসম্পন্ন ভালো মানুষ হওয়াও জরুরি। তোমার মায়ের সঙ্গে একধরনের বোঝাবুঝির টানাপোড়েন চলছে। তিনিই তোমাকে একসময় বই পড়তে উৎসাহিত করেছেন। তুমি কি পাঠ্যবই পড়া একেবারেই কমিয়ে দিয়েছ? সবকিছুরই ভারসাম্য থাকতে হবে। তোমার ওপর তোমার মায়ের আবেগ, প্রত্যাশা, স্নেহ, ভালোবাসা, মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা সবকিছুরই আধিক্য হয়তো বেশি। অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ শিশুদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায়। সন্তান মন খুলে কথা বলতে না পারলে অনেক সময় লেখাপড়া বিমুখ হয়ে যায়। অভিভাবকের উচিত সন্তানের সঙ্গে একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা—যেখানে সততা, আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা থাকবে। সন্তানকে পরস্পরবিরোধী নির্দেশনা না দিয়ে তাকে অপার ভালোবাসা দিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মনির্ভরশীল পরিপূর্ণ মানুষ হতে সহায়তা করা।

এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - মনোবন্ধু, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।