আমি নবম শ্রেণির ছাত্র। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাঝারি মানের ছাত্র থাকলেও অষ্টম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় আমি অসাধারণ ফলাফল করি। মাত্র দশমিক ৫ নম্বরের ব্যবধানে আমি দেড় শতাধিক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। এই ফলাফল ধরে রাখতে পারব কি না, তা নিয়ে চিন্তা থাকলেও একইভাবে আমি নির্বাচনী পরীক্ষা এবং জেএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করি। এমনকি বৃত্তি পেয়ে উপজেলায় স্ট্যান্ডও করি। পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে অনেক আনন্দের হতো, যদি সবাই ব্যাপারটা ভালোভাবে গ্রহণ করত। হঠাৎ করেই আমি আবিষ্কার করি, আমার আশপাশের মানুষগুলো ব্যাপারটা ঠিকভাবে দেখছে না। আমি আমার এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে পড়াশোনা করি। এত বছরে আমি তাদের সঙ্গে পুরোপুরিভাবে মিশে গিয়েছিলাম। কিন্তু অন্য কারও বাসা থেকে পড়ে আমি ভালো করব, এটা অনেকে মানতে পারেনি। এমনকি আমার প্রিয় বন্ধুরাও একসময় পাল্টে গেল। বাসায় গিয়ে আমার নামে আজেবাজে কথা লাগল। একসময় আমি আবিষ্কার করলাম, কিছু না করেই এলাকার খারাপ ছেলে হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেলাম। একসময় আমি নিজেকে খারাপ ভাবতে শুরু করি। পড়াশোনা থেকে আমার দূরত্ব আবার বাড়তে থাকে। সামনে আমার পরীক্ষা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমি আবার আগের রেজাল্টে ফিরে যাব। কিন্তু আমি প্রমাণ করতে চাই, আমার মা-বাবা না হয়েও আমার এই আত্মীয় আমাকে এমনভাবে আগলে রাখেন যে আমি খারাপ করতে পারি না। কিন্তু তবু পড়াশোনায় আমার মনোযোগ বসছে না। আমি অনেক বড় বিপদে আছি। আমাকে সাহায্য করবেন।
নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: তোমাকে অসংখ্য অভিনন্দন যে তুমি এত প্রতিকূলতার মাঝে থেকেও প্রতিটি পরীক্ষাতে এত ভালো ফল করেছ। হ্যাঁ, বিষয়টা তুমি ঠিকই ধরেছ। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ থাকবে, যারা তোমার এই সফলতাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারবে না। কারণ, তুমি এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে অন্যদের তুলনায় ভালো করতে পেরেছ। তারা তোমার এই ঈর্ষণীয় সাফল্য মেনে না নিতে পেরেই তোমার প্রতি এমন নেতিবাচক আচরণ করেছে। তবে তুমি যদি এই ব্যবহারে মন খারাপ করে নিয়মিত পড়াশোনা না করো, তাহলে কিন্তু সম্পূর্ণ ক্ষতি তোমার হবে। যেকোনো সফলতায় কিন্তু ইতিবাচক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নেতিবাচক অভিজ্ঞতাও (মানুষের নেতিবাচক/মন ছোট করা মন্তব্য) থাকতে পারে। উচিত হলো ভালো অভিজ্ঞতার আনন্দটুকু নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং নেতিবাচক মন্তব্য (যার কোনো ভিত্তি নেই) সেটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা। সারা জীবন তুমি যতবার সফল হওয়ার চেষ্টা করবে, একদল মানুষ তোমাকে হেয় করে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। সফলতার অন্যতম শর্ত হলো জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সহজভাবে নেওয়া এবং কোনোভাবেই এসব ছোটখাটো বিষয় যেন গুরুত্বপূর্ণ না হয়ে ওঠে। মানুষের নেতিবাচক আচরণ অবশ্যই আমাদের মন খারাপ করবে, কিন্তু সেই মন খারাপ যেন এতটা দীর্ঘস্থায়ী না হয় যে সেটা তোমার মূল কাজকে বাধাগ্রস্ত করে বা তোমাকে থামিয়ে দেয়।
এ ছাড়া তোমার চারপাশের সব মানুষ কিন্তু এমন নয়। তুমি যদি একটি তালিকা বানিয়ে ফেল যে এমন ভালো ফলাফল করার পর কে কে তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে আর কে কে খারাপ ব্যবহার করেছে, তাহলে তুমি কিন্তু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ বেশি খুঁজে পাবে। তাই এই অল্পসংখ্যক মানুষের জন্য সময় নষ্ট না করে বরং তোমার উচিত হবে পড়াশোনা করা এবং অচিরেই তুমি সামনে এগিয়ে যাবে। পড়াশোনার সময় নেতিবাচক চিন্তা এলে এটাকে প্রশ্রয় না দিয়ে অন্য কোনো ইতিবাচক চিন্তায় মনোযোগ নিয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে কয়েকবার লম্বা করে পেটে শ্বাস নিয়ে আবার ধীরে ধীরে বের করে দিলেও মনোযোগ আনতে সাহায্য করবে।
এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - ‘মনোবন্ধু’, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।