মানুষকে ভালোবাসতে পারলে দেশপ্রেম কখনো ফুরোবে না

আমি দেশকে খুব খুব ভালোবাসি। আমার স্বপ্ন, বড় হয়ে দেশের জন্য কিছু করব। কিন্তু আমার সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলেছে। আমার বাবা, যিনি দেশকে খুব ভালোবাসতেন, আজ তিনিই ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নানা বৈষম্যের শিকার। তিনি ঠিক করেছেন আগামী বছর অন্য এক দেশে চলে যাবেন পাকাপাকিভাবে। নাগরিকত্ব পাওয়ার সুবিধার্থে আমাদের জন্মস্থানও পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। আমার জন্ম নাকি ওই দেশে! আমি দেশকে ছেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই মানতে পারছি না। এ বছর আমার জেএসসি। কিন্তু পড়ায় মন বসছে না কিছুতেই। যেখানে আমার মাতৃভূমির পরিচয়ই ঝেড়ে ফেলতে হবে, সেখানে কী লাভ পড়ালেখা করে? মা-বাবাকে স্পষ্টভাবে আমার মতামত জানিয়েছি। তাঁরাসহ পরিবারের সবাই যেতে রাজি। আমার কী করা উচিত? নিজ সত্তাকে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে নতুন সত্তা সৃষ্টি করা?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: দেশ কিন্তু কোনো ভূখণ্ড নয়, নয় কোনো ধর্ম বা ভাষাভিত্তিক জাতির বাসস্থান। দেশ একটি ভালোবাসা, মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা। মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছ বলেই তুমি দেশকে ভালোবেসেছ। তোমাকে অভিনন্দন এই দেশপ্রেমের জন্য। যেকোনো পরিস্থিতির কারণে বা জীবিকার প্রয়োজনে অনেক সময় প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে যেতে হয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত তোমার অভিভাবকের, পরিবারের। তোমার প্রতি অনুরোধ, কোনো কিছুকে ভালোবাসতে হলে আগে নিজেকে তৈরি হতে হয়। সামনে তোমার পরীক্ষা, মন দিয়ে পড়ো। বিষণ্নতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে প্রিয় মানুষদের কাছে থাকো, প্রিয় কাজগুলো করো, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নাও। আর তোমার মনের মধ্যে যে এক টুকরো বাংলাদেশ রয়েছে, সেটাকে কখনোই হারিয়ে ফেলো না। যেখানেই থাকো, যেভাবেই থাকো, দুটি বিষয় মনে রাখবে: ১. নিজেকে তৈরি করে নেবে, অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ করা শিখবে, সামাজিক দক্ষতা বাড়াবে। ২. মানুষকে ভালোবাসবে, মানুষকে ভালোবাসতে পারলেই তোমার দেশপ্রেম কখনো ফুরোবে না।

তোমার কষ্টটা আমরা বুঝতে পারছি। তুমি যদি ভাবো এ দেশ তোমার, সব সময়ের জন্য তা তোমারই। এতে তোমার কষ্ট খানিকটা কমবে। নিজের সত্তাকে সক্রিয়ভাবে পরিবর্তন করার দরকার নেই। মনে রাখবে, পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের জ্ঞানীয় ধারণাকে (কগনিশন) পরিবর্তন করে, সত্তার রূপরেখাও পরিবর্তন হয়ে যায়। ভবিষ্যতে কী হবে, তা ভেবে বর্তমানকে নষ্ট করবে না। ভালো থেকো।

এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - মনোবন্ধু, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।