পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হলো। আমরা এরই মধ্যে শুরু করে দিলাম মামার বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি। যে যার মতো করে প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিলাম। যেদিন রওনা দেব, সেদিনই সবার মাথায় অদ্ভুত এক দুশ্চিন্তা ভর করে বসল। বাড়িতে আছে একটা বড়সড় লাল মোরগ। খুবই শখ করে মোরগটাকে মা বড় করেছে। মোরগটাকে কিনতে চেয়েছে অনেকে। কিন্তু আমাদের খাওয়াবে বলে মোরগটা বিক্রি করেনি মা। এখন বেশ কদিনের জন্য মামার বাড়ি চলে যাচ্ছি। আমরা বাড়িতে থাকব না, এই সুযোগে যদি কেউ মোরগটা ধরে খেয়ে ফেলে, তাহলে সর্বনাশ হবে। মাটি হয়ে যাবে মায়ের ইচ্ছাটা। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম মোরগটাকে নিয়েই মামার বাড়ি যাব আমরা।
যেই কথা সেই কাজ। অমনি সবাই ধরাধরি করে মোরগ বাবাজিকে বেঁধে ফেললাম। তারপর চিন্তামুক্ত হয়ে সবাই রওনা দিলাম বাসের টিকিট কাউন্টারে। আমার মামার বাড়ি চট্টগ্রাম শহরে। আমাদের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। তাই যেতে বেশ সময় লাগবে। যথারীতি বাসের টিকিট কেটে চেপে বসলাম বাসে। বাস চলতে লাগল তার আপন গতিতে। কখনো হালকা ব্রেক আবার কখনো আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে এগোতে লাগল বাসটি। বাসভর্তি যাত্রীদের কেউ ঘুমাচ্ছে, আবার কেউ মোবাইল টিপছে। আর মোরগ বাবাজি পলিথিনের ফুটো দিয়ে মাথা বের করে চুপ করে বসে আছে সিটের নিচে। ঘণ্টা দেড়েক পর হঠাৎ কখকখকখ শব্দ করে ডানা ঝাপটে আমাদের মোরগ গাড়ির সুপারভাইজারের সামনে দিয়ে ঝাঁপ দিল। সবাই হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘুমন্ত যাত্রীরা জেগে উঠল, ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে অনুরোধ করল বাবা। ড্রাইভারও অগত্যা বাস থামাল। বাস থামার সঙ্গে সঙ্গে সুপারভাইজার, বাবা ও আরও কয়েকজন যাত্রী ‘ধর ধর’ বলে মোরগের পেছন পেছন দিল দৌড়। ওদিকে আমাদের শখের মোরগ খাড়া পায়ে কখকখকখ করে মেইন রোডের মধ্য দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে। সড়কে একটা যানজটের সৃষ্টি হয়ে গেল। মোরগটি হয়ে উঠল সবার মধ্যমণি। অবশ্য কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর কবজায় চলে এল মোরগটি। মোরগটাকে বগলদাবা করে বাসে ফিরল বাবা। তদন্ত করে দেখা গেল রওনা দেওয়ার সময় তাড়াহুড়ায় মোরগের পা শক্ত করে বাঁধা হয়নি। বাসের যাত্রীরা কাণ্ডটি দেখে সে কী হাসি। মোরগটা অবশ্য চুপচাপ বসে ছিল সিটের নিচে।
লেখক : শিক্ষার্থী, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, কক্সবাজার