অন্ধকারের সেই চোখ
জুনের ১৩ তারিখ। ২৩ দিন হলো আমি ভারতেশ্বরী হোমস ছেড়ে এসেছি। এই প্রতিষ্ঠান আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। বসন্তে যেমন ফুল ফোটে, কোকিল ডাকে, প্রকৃতি ধারণ করে তার নতুন রূপ, তেমনি ভারতেশ্বরী হোমস এতগুলো বছর ধরে আমাদের জীবনকে বসন্তের রঙে রাঙিয়েছে। ভারতেশ্বরী হোমসের প্রতিটা ছাত্রী রঙিন প্রজাপতির মতো। পাখা মেলে আনন্দ ছড়ায়। এ প্রতিষ্ঠান আমাকে শিখিয়েছে মাথা উঁচু করে বাঁচতে, সম্মানের সঙ্গে সত্যের পথে এগোতে।
আমি হোস্টেলে থাকতাম, তাই নানা রকম হাসি, মজা আর ভয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে। যারা হোস্টেলে থাকে, তারা জানে হোস্টেল জীবনটা কত আনন্দের! একদিকে যেমন ছিল পরিবারকে ছেড়ে থাকার কষ্ট, অন্যদিকে ছিল বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, একসঙ্গে মুড়িমাখা খাওয়া, রোজ ভোরে ড্রিল, ডিউটি করা—কত রকম অভিজ্ঞতা। এ রকম এক দিনের কথা। আমি ছাত্রী সংসদের সদস্য ছিলাম। আমাদের ছাত্রী সংসদের মেয়েদের ওপর দায়িত্ব ছিল, রোজ রাতে হোস্টেল রাউন্ডে যাওয়া।
কোনো মেয়ের সমস্যা হচ্ছে কি না, তা দেখাই ছিল আমাদের কাজ। সেদিন আমি আর সায়মা (আমার খুব প্রিয় বন্ধু) গেলাম রাউন্ড দিতে। রাউন্ড দিতে দিতে কথা হচ্ছিল ভূত নিয়ে। সায়মা বলল, সব হোস্টেলেই তো ভূত থাকে, এখানেও কি আছে? তত দিনে আমরা হোস্টেল নিয়ে হাজারটা আজগুবি ভূতের গল্প শুনেছি। তখন রাত বেশ গভীর। আমাদের পায়ের আওয়াজ ছাড়া কিছুই প্রায় শোনা যাচ্ছে না। আমি সায়মাকে বললাম, এখন যদি ভূত আসে, কী করবি?
হঠাৎ দুজনের চোখ পড়ল দূর থেকে আসা একটা চকচকে আলোর দিকে। অন্ধকারে তা জ্বলজ্বল করছিল। হঠাৎ সে জিনিসটা আমাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকল। থমকে দাঁড়ালাম দুজন। আমাদের সামনে দৃশ্যমান হলো চার পা–বিশিষ্ট এক প্রাণী। যেন আমাদের বুক থেকে আত্মা বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
দুজন চোখ বন্ধ করে একনিশ্বাসে দৌড় দিলাম উল্টো দিকে। ভোঁ–দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপাচ্ছি দুজন। হঠাৎ চোখ পড়ল সিঁড়ির দিকে। দেখলাম, রীতিমতো আমাদের ভয় দেখিয়ে সিঁড়ি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে নেমে যাচ্ছে জ্বলজ্বল চোখের বেশ স্বাস্থ্যবান এক বিড়াল! অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম দুজন। সামান্য একটা বিড়াল দেখে এত ভয় পেলাম!
লেখক: শিক্ষার্থী, এসএসসি ২০২৫, ভারতেশ্বরী হোমস, টাঙ্গাইল