মাকে দেওয়া আমাদের সারপ্রাইজ
মায়ের কাছে একশটা বকা খেয়ে পড়তে বসেছি। কিছুক্ষণ রাগ হয়েছিল মায়ের ওপর, কিন্তু চার-পাঁচ মিনিট পরে সেই রাগ চলে গেছে। মা বকা দিলেও মায়ের ওপর রাগ করে থাকা যায় না। মা গতদিন আমাকে স্কুল থেকে নিতে এসেছিলেন। নিজের পার্স বেঞ্চের ওপর রেখে, না পেয়ে তো তিনি ভয়েই শেষ। মা ভুলেই গেছেন যে পেছনে বেঞ্চের ওপর পার্সটা রাখা। আমি তো মায়ের কাণ্ড দেখে হাসছি। মা পিছে ফিরে দেখেন যে পার্সটা বেঞ্চের ওপর। তারপর দু'জনেই হাসতে হাসতে শেষ।
কাল মায়ের জন্মদিন। আর মায়ের সে কথা মনেই নেই। আমি, বাবা আর আপি মিলে প্ল্যান করেছি যে মাকে একটা সারপ্রাইজ দেব। আপি কোচিং থেকে আসার সময় সবকিছু কিনে আনবে। মাকে নিয়ে বাবা ছাদে থাকবেন। আর আমি একটা বিশেষ জিনিস জোগাড় করব। মায়ের অনেকদিনের শখ জিনিসটার জন্য। আমার বড় বোন একটা ব্যাগ কিনে দেবে মাকে। কারণ মা অনেকবার হাতের পার্স প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন। এবার একটা কাঁধের ব্যাগ কিনে দেবে। বাবা একটা লাল শাড়ি কিনে দেবেন, মাকে লাল রঙে দারুণ লাগে। আর আমি সেই বিশেষ জিনিসটা দেব মাকে। যা বাবাকে মা অনেকবার এনে দিতে বললেও, বাবা সবসময়ই ভুলে যান।
পরদিন আপি তাড়াতাড়ি রওনা হয়ে গেল। আমি বাইরে যাবার কথা বলে বিকেলের দিকে বেরিয়ে গেলাম। এদিক সেদিক অনেকক্ষণ খুঁজলাম। দুটো দোকানে দুটো পছন্দ হলো। একটা কিছুতেই মিশতে চায় না, আরেকটা খুবই মিষ্টি দেখতে। আমি কাছে গিয়ে ওটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলাম। আবার হাত বুলিয়ে দেওয়ার জন্য আমার কাছে এসে ঘেঁষাঘেঁষি করতে লাগলো। ওটাকেই নিয়ে আসলাম। খুব চুপচাপ ছিল আনার সময়। বাসায় এনে ঘুম পাড়িয়ে রাখলাম।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাবা অনেক কষ্টে মাকে ছাদে নিয়ে গেলেন। আমি আর আপি জলদি করে সব গুছিয়ে সাজালাম। দেয়ালে বড় করে লাগালাম, 'HAPPY BIRTHDAY MA!'। মনে মনে ভাবছিলাম, মা কতই না খুশি হবে। সাজানো-গোছানো শেষে আমি বাবার ফোনে কল দিলাম। বাবা যেন মাকে নিয়ে আসে। নিয়ে আসার পর আমি তাড়াতাড়ি মায়ের চোখে কাপড় বেঁধে দিলাম। মাকে নিয়ে কেকের সামনে বসিয়ে, এরপর চোখের কাপড়টা খুলে দিলাম। বাবা বড় পার্টি পপারটা ফাটালেন। মা অনেক খুশি হলেন। কেক খেলেন। মায়ের মুখে অনেক আনন্দ দেখলাম। আপির দেওয়া পার্সটা পেয়ে বললেন, 'আর কখনো হারানোর ভয় থাকবে না।' বাবার শাড়ি পেয়ে বললেন, 'আমার এটা অনেক পছন্দ হয়েছে।' বাবাও খুব খুশি হলেন।
এবার আমার পালা। কেউ জানে না আমার দেওয়া বাক্সের ভিতরে কী আছে। মা ভাবলেন, ভেতরে যা-ই আছে অনেক দামি কিছু হয়তো। কারণ আমি অনেক সাবধানে দিয়েছি। মা বাক্স খুললেন। খুলে অবাক হয়ে চিৎকার করে বললেন, 'বিড়াল!'
মা সারা জীবন ওকে নিয়ে খুশি ছিলেন। আমাকে সব সময় ধন্যবাদ বলতেন। এখনো অফিসে যাবার সময় দরজা আটকাতে ওকে কোলে নিয়ে রাখেন। বিড়ালটাও মা-কে খুব ভালোবাসে। আমার মনে হয়, যাক মায়ের একটা স্বপ্ন তো পূরণ করতে পারলাম।
মালিহা রহমান
৬ষ্ঠ শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা