সমস্যাকে তুচ্ছ ভাবা যাবে না— রিচার্ড ফাইনম্যান

রিচার্ড ফাইনম্যান

আজ ১১ মে নোবেল বিজয়ী বিখ্যাত বিজ্ঞানী রিচার্ড পি. ফাইনম্যানের জন্মদিন। রিচার্ড ফাইনম্যান ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী পদার্থবিজ্ঞানী। কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডায়নামিক্সের উন্নয়নে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৫ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। একইসাথে, জটিল বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপনের অসাধারণ ক্ষমতা এবং কৌতূহলী ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি বিখ্যাত। তিনি তাঁর ছাত্র কোইচি মানোকে একটি চিঠিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার গুরুত্ব নিয়ে বলেছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এই চিঠিটি ফাইনম্যান লিখেছেন। ফাইনম্যান মনে করতেন, যেকোনো সমস্যাই মূল্যবান, তা যতই ছোট বা তুচ্ছ হোক না কেন, যদি আমরা এর সমাধান করতে পারি। কোইচি যখন ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক ওয়েভের সমস্যা নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন ফাইনম্যান তাঁকে উৎসাহ দিতে চিঠি লেখেন। ফাইনম্যান সহজ সমস্যা নিয়ে কাজ করতে পরামর্শ দেন। কোইচিকে নিজের মূল্য বুঝতে ও নিজের কাজকে ছোট করে না দেখতে বলেছিলেন ফাইনম্যান। সেই চিঠিটি ‘পারফেক্টলি রিজনেবল ডেভিয়েশন্স ফ্রম দ্য বিটেন ট্র্যাক: দ্য লেটারস অব রিচার্ড পি ফাইনম্যান’ বইতে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রিয় কোইচি,

তোমার কথা শুনে ও গবেষণাগারে তোমার যোগদানের খবর পেয়ে আমি খুবই খুশি হয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত তোমার চিঠি আমাকে বেশ অসন্তুষ্ট করেছে। আমার মনে হয়েছে, তুমি দুঃখ পেয়েছো বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, তোমার শিক্ষকদের প্রভাব তোমাকে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তা নিয়ে ভুল ধারণা দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সেগুলো, যা তুমি সত্যিই সমাধান করতে পারবে বা সমাধানে সহায়তা করতে পারো। যে সমাধানে তুমি সত্যিই কিছু অবদান রাখতে পারো। বিজ্ঞানে একটি সমস্যা তখনই বড় হয়, যখন তা আমাদের সামনে অমীমাংসিত থাকে। অমীমাংসিত সূত্র থেকে আমরা অগ্রগতির কোন না কোন উপায় দেখতে পাই। আমি তোমাকে আরও সহজ বা তুমি যেমন চাইছো, তেমন সরল সমস্যা বেছে নেয়ার কথা বলব। সেই ধরনের সমস্যা গ্রহণ করার পরামর্শ দেব, তুমি এমন কিছু খুঁজতে থাকো, যতক্ষণ না সত্যিকারে তুমি তা সহজেই সমাধান করতে পারবে। যতই তুচ্ছ হোক না কেন সেই সমস্যা খুঁজে বের কর। তুমি তখন সাফল্যের আনন্দ পাবে। তোমার সহকর্মীকে সাহায্য করার আনন্দ পাবে। তোমার চেয়ে কম দক্ষ সহকর্মীর মনের প্রশ্নের উত্তর দিলেও আনন্দ পাবে। আসলে কী মূল্যবান তা নিয়ে ভুল ধারণার কারণে তোমার এই সব আনন্দ নিজের থেকে কেড়ে নেওয়া উচিত নয়।

তুমি তোমার ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকার সময় আমার সঙ্গে দেখা করেছিলে। আমি তোমাকে তখন বিশাল সব সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে মনে করতাম। একই সময়ে আমার আরেকজন পিএইচডি গবেষক(আলবার্ট হিবস) ছিল, যার থিসিস ছিল সমুদ্রের পানির ওপর দিয়ে বাতাস কীভাবে ঢেউ তোলে তা নিয়ে। আমি তাকে ছাত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। কারণ হিসেবে বলা যায়, সে আমার কাছে যে সমস্যা নিয়ে এসেছিল, যা সে নিজে সমাধান করতে চেয়েছিল। তোমার জন্য আমি ভুল করেছিলাম। তোমাকে তোমার সমস্যা খুঁজে বের করতে দেওয়ার পরিবর্তে আমি তোমাকে সমস্যা দিয়েছিলাম। কোন সমস্যা আকর্ষণীয়, মনোরম বা কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি করেছিলাম। (সেই সব সমস্যা দেখ যা সমাধানের জন্য তুমি কিছু করতে পারবে)। আমি দুঃখিত, ক্ষমা করবে আমাকে। আমি আশা করি এই চিঠির মাধ্যমে আমি ভুল কিছুটা সংশোধন করতে পারব।

আমি অসংখ্য সমস্যা নিয়ে কাজ করেছি। যেগুলোকে তুমি সরল বলবে। এসব সমস্যা কিন্তু আমি উপভোগ করেছি। খুব ভালো অনুভব করেছি, কারণ আমি কখনও কখনও আংশিকভাবে সফল হতাম।

কোনও সমস্যা খুব ছোট বা খুব তুচ্ছ নয় যদি আমরা সত্যিই তার সম্পর্কে কিছু করতে পারি।

তুমি বলেছ, তুমি একজন নামহীন মানুষ। তুমি তোমার স্ত্রী ও তোমার সন্তানের কাছে নামহীন নও। তোমার পাশের সহকর্মীরা যখন তোমার অফিসে আসবে তখন তুমি তাদের সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে তুমি তাদের কাছে বেশিদিন নামহীন থাকবে না। তুমি আমার কাছে নামহীন নও। নিজের কাছে নামহীন থেকো না - এটা কিন্তু খুবই দুঃখজনক। পৃথিবীতে তোমার স্থান জানার চেষ্টা করো। নিজেকে ন্যায্যভাবে মূল্যায়ন করো। তোমার নিজের তারুণ্যের সরল আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করো না, বা তোমার শিক্ষকের আদর্শকে ভুলভাবে কল্পনা করার ভিত্তি হিসেবে মেনে নিও না।

তোমার জন্য শুভকামনা ও সুখে থাকো।

আন্তরিকভাবে,

রিচার্ড পি. ফাইনম্যান

সূত্র: এফএস ব্লগ থেকে, কিছুটা সংক্ষেপিত

আরও পড়ুন