আমার একটি টাইম মেশিন দরকার

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

কী অদ্ভুত জীবনের গণ্ডি। একটি পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে না নিতেই সেই পরিবেশ ছেড়ে পাড়ি জমাতে হয় অন্য গন্তব্যে। ২০১৯ সালের কথা। ছোট্ট আমি প্রাইমারি স্কুলের সীমা ছাড়িয়ে নাকি হাইস্কুলে যাব। অথচ আব্বু-আম্মুর হাতটা আমার ছোট্ট হাতের মুঠোয় নিয়ে স্কুলে যেতাম। সিঁড়ি দিয়ে নামতে ভয় হতো বলে রেলিং ঘেঁষে বসে বসে নামতাম। এই ছোট ছোট ভয়কে জয় করতে না করতেই পাঁচ বছর শেষ।

২০২০ সালে আবার আব্বুর হাত ধরে অন্য একটি স্কুলে ভর্তি হলাম। কিছুই চিনি না, জানি না। অচেনা পরিবেশ। মার্চের পর থেকে লকডাউন। দীর্ঘ লকডাউন শেষে স্কুল খুলল ২০২২ সালের মাঝামাঝি। খুব খুশি ছিলাম—লকডাউন শেষে আবার স্কুলে যাব। নীল রঙের ড্রেস আর সাদা হিজাব। চিরচেনা স্কুল ইউনিফর্ম। ধীরে ধীরে বেস্ট ফ্রেন্ড হলো। নিজের একটা ফ্রেন্ড সার্কেল হলো। টিচারদের সঙ্গে কত সুন্দর সম্পর্ক। একটু একটু করে কত টুকরা টুকরা স্মৃতি জমা হতে লাগল মনের গহিনে। আজ পুরো স্কুলজীবন শুধু স্মৃতি। সেই স্কুলড্রেস, সেই মা–বাবা সমতুল্য শিক্ষক-শিক্ষিকা, সেই বন্ধুবান্ধব, চিরচেনা ক্যাম্পাস, সব চিরতরে জীবন থেকে চলে গেল।

আরও পড়ুন

এপ্রিলের ১৫ তারিখে ব্যবহারিক পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল। আর কখনো বলা হবে না ‘আমি স্কুলে যাব।’ আর কখনো জানালার পাশে বসার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করা হবে না। গল্প করা হবে না মাঠে বসে। নারকেলগাছটার তলায় বসে সেই ১০ জনের আড্ডা আর হবে না। পানি খাওয়ার নাম দিয়ে পুরো স্কুল ট্যুর দেওয়া আর হবে না। ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে আর পড়া হবে না গল্পের বই। প্রবল বৃষ্টিতেও আব্বু-আম্মুর বকা উপেক্ষা করে স্কুলে আসার তাগাদা থাকবে না। পড়ে রবে শুধু কিছু স্মৃতি।

সযত্নে স্মৃতিগুলো মনের গহিনে জমা রাখলাম। কোনো পড়ন্ত বিকেলে আবার খুলে দেখব স্মৃতির কৌটা। মন খারাপের সময় আনমনে হাসির পাথেয় হবে স্মৃতিগুলো। হয়তো আবারও ব্যস্ত হয়ে যাব নিজের জীবনের নতুন কোনো পর্বে। ব্যস্ততার শহরে চাপা পড়ে যাবে সেই সুন্দর দিনগুলোর হাহাকার। তবে বুকের হাহাকার কমছে না। আমার একটি টাইম মেশিন দরকার, যা দিয়ে পাড়ি দেওয়া যায় স্মৃতির শহরে।

লেখক: এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০২৫, পূর্ব সন্দ্বীপ এনাম নাহার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন