ডলারের প্রথম অক্ষর ‘ডি’, তবু এর প্রতীক ‘$’ কেন

আমরা যখন ‘ডলার’ শব্দটি শুনি, তখন আমাদের মনে সঙ্গে সঙ্গে এসে যায় যুক্তরাষ্ট্রের কথা। কারণ, ডলার যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি মুদ্রা এবং বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত মুদ্রাগুলোর একটি।

প্রতিটি দেশের নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। যেমন আমাদের টাকা, যুক্তরাষ্ট্রের ডলার। খেয়াল করে দেখেছ নিশ্চয়ই, বাংলাদেশের টাকার নোটে ‘ট’ আকৃতির চিহ্ন ব্যবহার করা হয় নোটের সংখ্যার সঙ্গে। অর্থাৎ, এই ‘ট’ হলো বাংলাদেশের টাকার প্রতীক।

আবার ডলারের চিহ্নে দেখবে, ডলারের প্রতীকে ইংরেজি বড় হাতের ‘এস’ বর্ণের মাঝখানে একটি রেখা আঁকা থাকে। কিন্তু ডলারের প্রথম অক্ষর ‘এস’ নয়, ‘ডি’। তাহলে ডলারের প্রতীকে এই ‘$’ কেন ব্যবহার করা হয়?

এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের ইতিহাসের দিকে নজর দিতে হবে। যদিও ডলারের চিহ্নের উৎপত্তি নিয়ে স্পষ্ট কোনো কারণ বলা নেই। তবে এই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসবিদের কিছু তত্ত্ব রয়েছে।

বিখ্যাত লেখক ও দার্শনিক আয়ন র‍্যান্ড-এর উপন্যাসে পাওয়া যায় ডলারের প্রতীকের উদ্ভাবনের একটি গল্প। ১৯৫৭ সালের তাঁর ডাইস্টোপিয়ান উপন্যাস ‘অ্যাটলাস শ্রাগড’-এর নায়িকার অন্য একটি চরিত্রের সঙ্গে কথোপকথনে উঠে আসে ডলার চিহ্নের অর্থ কী আর চিহ্নটি কোথা থেকে এসেছে, সে বিষয়টি। উত্তরে বলা হয়েছে, এই চিহ্নের শুরুটা হয়েছে ইউনাইটেড স্টেটসের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘ইউ’ ও ‘এস’ থেকে। শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে এই দুই বর্ণ দিয়েই ডলারের প্রতীকের চল শুরু হয়।

ইউএস থেকে যেভাবে এল ডলার সাইন

তখন ‘এস’ বর্ণের ওপর ‘ইউ’ বসিয়ে ডলারের প্রতীক ব্যবহার করা হতো। সময়ের সঙ্গে ‘ইউ’ ও ‘এস’–সংবলিত চিহ্ন থেকে ‘ইউ’–এর নিচের অংশ অদৃশ্য হয়ে যায়। ফলে তখন এটিকে ‘এস’ বর্ণের ওপরে দুটি লম্বালম্বি রেখার মতো দেখা যেত। পরে এই দুটি লম্বালম্বি রেখার মধ্যে থেকে যায় একটিমাত্র রেখা। সেটি এখন বিশ্বের সব স্থানে ডলারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তবে তত্ত্বটি নিয়ে তর্কবিতর্ক রয়েছে। ইতিহাসবিদেরা ধারণা করেন, ডলার চিহ্নের ইতিহাস নিয়ে লেখক ও দার্শনিক আয়ন র‍্যান্ডের বক্তব্য সঠিক না–ও হতে পারে। কারণ, ১৭৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার আগেও ডলার চিহ্ন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।

পিএস থেকে যেভাবে এল ডলার সাইন

ডলারের প্রতীকের উৎপত্তি নিয়ে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব এসেছে ইউরোপীয়দের কাছ থেকে। ষোড়শ শতাব্দীতে স্প্যানিশ নাবিকেরা দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল ভূখণ্ডে প্রচুর পরিমাণে রুপা আবিষ্কার করেন। এই অঞ্চলগুলো পরবর্তীকালে মেক্সিকো, পেরু ও বলিভিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তখনকার সময়ে প্রচুর পরিমাণে রুপার প্রাচুর্যের কারণে স্পেনে রৌপ্যমুদ্রা তৈরি ও এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। যা স্প্যানিশ ভাষায় ‘পেসো দে ওচো’ বা সংক্ষেপে ‘পেসো’ নামে পরিচিত লাভ করে। ‘পেসো দে ওচো’ শব্দের অর্থ হলো ‘আট টুকরা’। কারণ, প্রতিটি মুদ্রায় আট রিয়াল মূল্যের রুপা থাকত। এভাবে স্প্যানিশ ডলারের জন্ম হয়।

আরও পড়ুন

স্প্যানিশ ও আমেরিকান ব্যবসায়ীদের লেনদেনের হিসাব সহজভাবে লেখার জন্য তারা ‘পি’ ও ‘এস’ চিহ্ন ব্যবহার করতে শুরু করে। আস্তে আস্তে ‘পি’ ও ‘এস’ বর্ণের প্রতীকটি নানা নকশায় বিবর্তিত হতে হতে বর্তমান ডলার প্রতীকে রূপ নেয়। মূলত তত্ত্বটি তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই হওয়ায় সবাই গ্রহণ করেছে।

ইউএস কারেন্সি এডুকেশন প্রোগ্রামের বিবৃতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭৮৫ সালে ডলারের প্রতীকটি স্বীকৃতি দেয়। তাদের মতে, স্প্যানিশ আমেরিকান মুদ্রা পেসো থেকে প্রতীকটি বিবর্তিত হয়েছে। প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো এই ‘$’ চিহ্ন আজও আমেরিকান পতাকার মতো বিশ্বব্যাপী ‘আইকনিক’ হয়ে আছে।

আরও পড়ুন