অচেনা রাস্তায় আমরা

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

গত বছরের ঘটনা। ঈদুল আজহার আগের দিন আমরা তিন ভাইবোন (আমি ও আমার প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ভাই-বোন) দাদুর বাড়িতে যাচ্ছিলাম। প্রতিবছরই আমরা দাদুর বাড়িতে কোরবানি করি। গরু কেনার পর গরুটা দাদুর বাড়িতেই রাখা হয়। আমার কাজিন আর চাচিরা সব দেখাশোনা করে।

আমরা কোনো বছরই আমাদের গরুকে ভালোভাবে দেখতে পারি না। প্রতিবছরই ঈদের দিন দাদুর বাসায় যেতাম। আর যেতে না যেতেই আব্বু আর চাচারা মিলে গরুকে বাঁধতে শুরু করতেন। তাই গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ঈদের আগের দিনই আমরা দাদুর বাড়িতে চলে যাব।

যেমন ভাবা, তেমন কাজ। গাড়িতে উঠে আব্বু-আম্মুকে বিদায় দিয়ে আমরা তিন ভাইবোন দাদুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম। যেহেতু এর আগেও আমরা তিনজন আব্বু-আম্মুকে ছাড়া অনেক জায়গায় গেছি, তাই অভিজ্ঞতা ছিল।

আরও পড়ুন

যখন আরেকটু এগোলেই দাদুর বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ার কথা, তখনই ড্রাইভার আমাদের তিনজনকে অবাক করে দাদুর বাড়ির রাস্তা দিয়ে না গিয়ে অন্য রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলল। আমরা তিনজনই ভয় পেয়ে গেলাম। ড্রাইভারকে বারবার বলছিলাম, এটা আমাদের বাড়ির রাস্তা নয়। সে তো আমাদের কথা শুনলই না, বরং গাড়ির আয়নায় আমাদের ভয় পেতে দেখে হালকা হালকা হাসতে লাগল।

একে তো অচেনা রাস্তা, তার ওপর ড্রাইভারের গুন্ডা ধরনের চেহারা, সঙ্গে তার এই প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে আমাদের ভয় তিন গুণ বেড়ে গেল। যদিও ব্যাগে মুঠোফোন ছিল, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এই অচেনা রাস্তার সবাই মনে হয় তার চেনা, সবার সঙ্গে সে কথা বলছিল।

পাঁচ-সাত মিনিট এভাবেই কেটে গেল। পরক্ষণেই দেখতে পেলাম, আরেহ! এই তো সামনে দাদুর বাড়ি! গাড়িটি বাড়ির সামনে এসে থামল। এতক্ষণ পর মনে হলো যেন আমরা প্রাণ ফিরে পেলাম।

এরপর ড্রাইভার আবার হাসি দিয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা করল, এটা আমাদের বাড়ি কি না। আমরা ‘হ্যাঁ’ বলে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। দেখলাম দাদু সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আব্বুর কাছ থেকে খবর পেয়ে হয়তো আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। আব্বু আগেই গাড়ির ভাড়া দিয়ে ফেলেছিলেন, তাই আমাদের আর দিতে হয়নি।

আরও পড়ুন

এরপর বাড়িতে গিয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার পর দাদুকে সব ঘটনা খুলে বললাম। দাদু তো হাসতে হাসতে শেষ। বললেন, ওই রাস্তায় গরুর হাট বসেছিল বলে আমাদের অন্য রাস্তা দিয়ে এনেছে। তখন মনে পড়ল, আরে হ্যাঁ, তা–ই তো! অন্য রাস্তায় যখন গাড়ি ঘুরিয়েছিল, তখন দেখেছিলাম, আমাদের রাস্তায় গরুর হাট বসেছে। দুশ্চিন্তায় ভুলেই গেছিলাম।

আব্বুকেও কল করে পুরো ঘটনা জানালাম। শুনে আব্বুও হাসতে লাগলেন। অন্য রাস্তার কথা আমাদের নাকি বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাড়াহুড়োয় ভুলে গেছিলেন। আর এতেই কিনা এত কিছু হয়ে গেল।

এখনো মনে পড়লে হাসি পায়, ড্রাইভার কী ভেবেছিল আমাদের এই অবস্থা দেখে! তাই তো হাসছিল বারবার, আর আমরা কিনা কত কী ভেবে বসেছিলাম...!

লেখক: শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণি, রাউজান আর আর এসি মডেল সরকারি হাইস্কুল, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন