কিশোর আলোর সঙ্গে আমার পরিচয়

বারো বছরে কিশোর আলো

পরিচয়। তখন কলেজে উঠেছি। মা-বাবার চোখে একটু বড় হওয়ায় প্রতিদিনের দেওয়া হাতখরচ বেড়েছে। তা থেকে নিয়মিত টাকা জমিয়ে সপ্তাহে এক দিন যেতাম পুরোনো বই আর ম্যাগাজিনের দোকানে। ছেঁড়া-কাটা তিন গোয়েন্দা, ওয়েস্টার্ন থেকে শুরু করে ফেলুদা-কাকাবাবু কিংবা পুরোনো দেশ-আনন্দমেলা ম্যাগাজিন উল্টেপাল্টে দেখতাম। কিন্তু সেইবার অক্টোবর মাসে পুরোনো বইয়ের দোকানে গিয়ে দেখলাম এক সারি নতুন ম্যাগাজিন! অবাক করা ব্যাপার। বুড়ো চাচাকে জিজ্ঞেস করতে জানা গেল, এটা নাকি নতুন বের হয়েছে, আমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্যই!

সীমাহীন কৌতূহল থেকে হাতে নিয়ে পাতা উল্টে দেখতে থাকলাম। ঝকঝকে লেখা, তকতকে ছাপা তো আছেই, আমাকে আটকে ফেলল লেখাগুলো। রকিব হাসান, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—কে নেই!

সেই যে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে আমার কিশোর আলোর সঙ্গে পরিচয়, আজ এক যুগ হয়ে গেল। খুলনা ছেড়ে ঢাকা এসেছি। কিশোর আলোর পাঠক থেকে স্বেচ্ছাসেবক হয়েছি। ছাপার অক্ষরে যাঁদের লেখা পড়ে অবাক হতাম, তাঁদের সামনাসামনি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তারপর একসময় কিশোর আলোতে নিজের লেখা দেখে বন্ধুদের কাছে গর্ব করে বলেছি, ‘দেখ! ছোটবেলায় আমরা যেই ম্যাগাজিন পড়তাম, এখন সেখানে আমার লেখা ছাপা হয়!’

আরও পড়ুন

সত্যি বলতে, কলেজে যখন কিশোর আলো পড়তাম, তখনো ভাবিনি যে একদিন এখানে কাজ করতে পারব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিকে কিআ ওয়েবসাইটের প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ এল সামনে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সেই কাজ আনন্দ নিয়ে করতাম। নিজে কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র হওয়ায় শেখার ক্ষেত্রটাও বড় ছিল আমার জন্য। তারপর ফটোগ্রাফি ক্লাব, বুক ক্লাব, আনন্দ আয়োজনের দলনেতা হওয়া—কত কত কাজ করার সুযোগ হলো। এখন পড়াশোনা শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি, কিন্তু কিআ থেকে শেখা দায়িত্ব-কর্তব্য-ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমাকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে।

কিশোর আলো ম্যাগাজিন হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ধীরে ধীরে এটা আমার মতো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য একটা দারুণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে থাকে। প্রতি মাসের মিটিংয়ে এসে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রখ্যাত মানুষ, শিল্পীর সঙ্গে দেখা হওয়ার মতো সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যায়? কিংবা সবাই মিলে একটা আনন্দ আয়োজন নামিয়ে ফেলা, দুর্দান্ত কাজ করে সেটা সফল করার মতো আনন্দও–বা কোথায় মেলে?

আরও পড়ুন