চেকমেট | মাই ফার্স্ট চেসবুক: সপ্তম পর্ব

নোটেশন নিয়ে আরও কিছু কথা

চেস নোটেশন ভালোমতো শেখার জন্য তোমাদের আরও তিনটি জিনিস সম্পর্কে জানতে হবে।

রাজার পাশ দিয়ে ক্যাসলিং করা হলে লিখতে হবে 0-0 এবং রানির পাশ দিয়ে ক্যাসলিং করা হলে লিখতে হবে 0-0-0।

এই ছবিতে দেখো, সাদা দল ক্যাসলিং করলে লেখা হবে 0-0-0 এবং কালো দল ক্যাসলিং করলে লেখা হবে 0-0।

যদি আ পঁসার মাধ্যমে কোনো সৈন্যকে কেটে দেওয়া হয়, তাহলে এমনভাবে নোট করতে হবে যেন যে সৈন্যকে কেটে দেওয়া হয়েছে, তা দুই ঘর নয়, এক ঘর সামনে এগিয়েছিল।

এই ছবিতে দেখো, কালো সৈন্যটি যদি দুই ঘর এগিয়ে c5 ঘরে আসে, তাহলে আ পঁসা অনুযায়ী সাদা সৈন্যটি একে c6 ঘরে গিয়ে কেটে দিতে পারবে। তাহলে তখন লিখতে হবে dxc6। একইভাবে, যদি সাদা সৈন্যটি দুই ঘর এগিয়ে g4 ঘরে যায়, তাহলে কালো সৈন্যটি hxg3 চালটি খেলতে পারবে।

তোমরা আগেই জেনেছ, যখন তোমার সৈন্য বোর্ডের শেষ র৵াঙ্কে, অর্থাৎ প্রতিপক্ষের শুরুর র‌্যাঙ্কে চলে যাবে, তখন সৈন্যটিকে অন্য ঘুঁটিতে উন্নীত করা যাবে। এ ক্ষেত্রে যে ঘুঁটিতে উন্নীত করা হবে, সেই ঘুঁটির চিহ্ন নোটেশন করার সময় ব্যবহার করতে হবে।

এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সাদা সৈন্যটি দুইভাবে অন্যান্য ঘুঁটিতে (এ ক্ষেত্রে রানিতে) উন্নীত হতে পারবে, c8Q অথবা cxb8Q—এই দুই উপায়ে। আবার কালো সৈন্যটি f1N চালের মাধ্যমে ঘোড়ায় উন্নীত হতে পারবে। (লক্ষ করো, এই চালের মাধ্যমে কালো সৈন্যটি ঘোড়ায় উন্নীত হওয়ায় সাদা রাজা চেকমেট হয়ে গেছে। ফলে সৈন্যকে অন্য ঘুঁটিতে উন্নীত করার সময় সব সময় যে মন্ত্রীকেই নামাতে হবে, এমন কোনো কথা কিন্তু নেই!)

এবার ঝটপট তোমার দাবার বোর্ড বের করে নিচের নোট করা চাল অনুযায়ী খেলা শুরু করো। মনে রাখবে, প্রতিটি নোটেশনের শুরুতে সাদা দলের এবং পরে কালো দলের চাল নোট করা হয়। অর্থাৎ,

1| e4 e5 –এর মানে হলো, সাদা দল চাল দিয়েছে e4 এবং কালো দল দিয়েছে e5। এবার নোটগুলো দেখে খেলা শুরু করো।

1| e4 e5
2| Nf3 Nc6
3| d4

এখানে যে ওপেনিং দেখানো হয়েছে, তার নাম ‘স্কচ গেম’

3| … exd4
4| Nxd4 Bb4+
5| Nc3 Nf6
6| Nxc6 bxc6
7| Bd3 0-0
8| 0-0 Bb7
9| Be3 Qe7
10| Qe2 Rfe8

লক্ষ করো

নোটেশনে শুরুর 1, 2, 3 দিয়ে কত নম্বর চাল, সেটা বোঝানো হয়েছে।

সাদা দলের ৩ নম্বর চালের পর একটা নোট লেখা হয়েছে এবং এরপর আবার আগের মতো খেলা শুরু হয়েছে। এখন যে কালো দলের চাল, সেটা বোঝানোর জন্য কালো দলের তিন নম্বর চালের আগে ‘…’ বসানো হয়েছে।

দশম চালে, কালো দল তার একটি নৌকাকে e8 ঘরে নিয়ে এসেছে। এটা একটু কায়দা করে নোট করতে হবে, কারণ কালো দলের দুটো নৌকার যেকোনোটিকেই e8 ঘরে নিয়ে আসা যায়। তাই Re8, এভাবে লিখে নোট করা হলে চালটা ঠিক পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় না। তাহলে কোন নৌকাটি নিয়ে আসা হয়েছে, তা বোঝা যাবে কীভাবে? এটা বোঝার জন্য, যে নৌকার চাল দেওয়া হয়েছে, সেটি আগে যে ফাইলে ছিল, নোটেশনে সেটা যুক্ত করে দেওয়া হয়। তাহলে Rfe8 নোট দেখে আমরা বুঝতে পারব, যে নৌকার চাল দেওয়া হয়েছে, সেটি আগে f ফাইলে ছিল। কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি আসতে পারে, যখন একটি দলের দুটো নৌকাই একই ফাইলে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তখন ফাইলের বদলে আগে যে র‌্যাঙ্কে নৌকাটি ছিল, সেটা লিখতে হবে।

তুমি যদি ওপরে দেওয়া নোটেশন বুঝে সব চাল খেলে থাকো, তাহলে এই ছবির মতো পজিশন পাবে।

কোন চাল কেমন হলো, খুবই ভালো নাকি একদমই ভালো নয়, তা বোঝানোর জন্য চালের শেষে বিশেষ কিছু চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। সেগুলো এমন—

! – Good Move (ভালো চাল)
!! – Brilliant Move (খুবই ভালো/অসাধারণ চাল)
? – Bad Move (বাজে চাল)
?? – Blunder (খুবই বাজে চাল।)
!? – Interesting Move (কৌতূহলোদ্দীপক চাল)
?! – Dubious Move (অনিশ্চিত চাল)

যা জানা প্রয়োজন

  • রাজার পাশে ক্যাসলিং করলে লিখতে হবে 0-0 এবং রানির পাশে ক্যাসলিং করলে লিখতে হবে 0-0-0

  • আ পঁসা নিয়মানুযায়ী কোনো ঘুঁটিকে কেটে দেওয়া হলে, সেটা এমনভাবে নোট করতে হবে যেন যে সৈন্য কাটা হয়েছে, সে দুই ঘর না এগিয়ে এক ঘর সামনে গেছে।

  • শুরুতে সাদা দলের চাল না থাকলে কালো দলের কোনো চাল নোট করার সময় এর আগে ‘…’ লিখতে হবে।

  • যদি কোনো নোট পরিষ্কারভাবে কোন ঘুঁটির চাল, তা বোঝাতে না পারে, তাহলে নোট করার সময় যে ফাইলে বা র‌্যাঙ্কে ঘুঁটিটি আগে ছিল, সেই ফাইল বা র‍্যাঙ্কের নাম নোটেশনে উল্লেখ করতে হবে।

খেলায় জেতা | রিজাইনিং (Resigning)

দাবায় রিজাইন বলতে মূলত প্রতিপক্ষের কাছে হার মেনে নেওয়া বোঝানো হয়। সাধারণত দাবা খেলা তখনই শেষ হয়, যখন এক পক্ষ আরেক পক্ষকে চেকমেট করে দেয়। কিন্তু দাবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে, অর্থাৎ গ্র্যান্ডমাস্টারদের খেলায় চেকমেট হয় না বললেই চলে। এক পক্ষের হার অবশ্যম্ভাবী, খেলায় এমন মুহূর্ত প্রায়ই আসে। আর ওই পজিশন থেকে সেই পক্ষের ম্যাচ জেতা বা ড্র করার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। তখনই এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যখন কোনো পক্ষের বেশি ঘুঁটি কাটা যায় কিংবা কয়েক চালেই যখন কোনো পক্ষের চেকমেট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এসব ক্ষেত্রে আসলে খেলা চালিয়ে নেওয়ার কোনো মানেই হয় না। তাই খেলার এমন পর্যায়ে কোনো খেলোয়াড় খেলা ছেড়ে দিয়ে হার মেনে নিতে পারেন। দুভাবে রিজাইন করা যায়, মুখে হার মেনে নেওয়ার কথা বলে অথবা নিজের দলের রাজাকে টোকা দিয়ে বোর্ডের ওপর ফেলে দিয়ে।

যেহেতু রিজাইন মানেই হেরে যাওয়া, তাই কখনোই খুব সহজে রিজাইন করার কথা ভাববে না। কারণ, রিজাইন করলেই তোমার হাতে জেতার যেসব ছোট সম্ভাবনা ছিল, সেগুলো আর থাকবে না। তবে তুমি যদি বুঝে ফেলো যে তোমার জেতার আর কোনো সম্ভাবনাই নেই, তখন শুধু শুধু বসে চেকমেট হওয়ার চেয়ে রিজাইন করে ফেলাই উত্তম।

এই ছবিতে একটি এন্ডগেম দেখা যাচ্ছে, যেখানে সাদা দলের তিনটি সৈন্য বেশি আছে। তোমরা তো জানোই, সৈন্যকে বোর্ডের শেষ র‌্যাঙ্কে বা প্রতিপক্ষের প্রথম র‌্যাঙ্কে নিতে পারলেই অন্য কোনো শক্তিশালী ঘুঁটিতে উন্নীত করা যায়। এ ক্ষেত্রে সাদা দল সহজেই অন্য কোনো ঘুঁটিতে নিজের সৈন্যকে উন্নীত করতে পারবে এবং খেলা জিতে নিতে পারবে। এই পজিশনে কালো দল খেলাটিকে অনেক লম্বা করতে পারবে, কিন্তু খেলাটি জিততে বা ড্র করতে পারবে না। এই পজিশনে সাদা পক্ষের কোনো ভুল করার তেমন আশঙ্কাই নেই, এতে খেলার ফলাফল বদলে যেতে পারে। ফলে এমন পজিশনে কালো দলের রিজাইন করা, অর্থাৎ হার মেনে নেওয়াই উত্তম।

সময়ের ব্যবধানে জেতা (Winning on Time)

দাবা খেলার সময় একধরনের বিশেষ ঘড়ি ব্যবহার করা হয়। কতটি চাল ঠিক কতক্ষণের মধ্যে দিতে হবে, তা খেলার শুরুতে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তুমি কতটি চাল দিয়েছ, তা তোমার জানা থাকবে, যেহেতু তুমি তোমার প্রতিটি চালই নোট করে রাখবে। সময় নির্ধারণ করার সাধারণ নিয়ম হলো, ৪০টি চাল দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয় দুই ঘণ্টা। যদি দুই ঘণ্টার মধ্যে তুমি ৪০টি চাল দিতে ব্যর্থ হও, তাহলে বলা হবে, তুমি সময়স্বল্পতার কারণে খেলাটি হেরে গেছ। দাবায় একে বলা হয় ‘Lost on Time’। যদি এমনও হয় যে তুমি ৪০তম চালটি এখনই দেবে এবং প্রতিপক্ষকে চেকমেট করবে, তাতেও কিছু করার নেই। তোমার ৩৯তম চালে যদি তোমার সময় শেষ হয়ে যায়, তাহলে খেলার অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন, তুমি সঙ্গে সঙ্গেই হেরে যাবে।

দাবার ক্লাসিক্যাল ঘড়িগুলোর ঘণ্টার কাঁটায় একটি পতাকা থাকে। ঘণ্টার কাঁটাটি যখনই ‘১২’ কাটিয়ে চলে যায়, তখন পতাকাটি নিচে পড়ে যায়, যার মাধ্যমে বোঝানো হয়, সময় শেষ। বর্তমানে এখন আর এমন ঘড়ি ব্যবহার করা হয় না। এখন সব জায়গায় ডিজিটাল ঘড়ি ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন