গ্রুপ সি প্রিভিউ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড নাকি আফগানিস্তান—কারা যাবে সুপার এইটে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে। চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বিশ্বকাপ খেলবে ২০টি দল। গ্রুপ অনুযায়ী দলগুলোর শক্তিমত্তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির ওয়েবসাইটে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে সেই বিশ্লেষণ তুলে ধরছেন কাজী আকাশ।
এ বছর বিশ্বকাপে একই গ্রুপে খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তান। গ্রুপ সিতে শক্তিশালী এই তিন দলের সঙ্গে আরও আছে পাপুয়া নিউগিনি ও উগান্ডা। এই গ্রুপের পাঁচটি দল বাকি চার দলের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলবে। সেরা দুই দল যাবে পরবর্তী রাউন্ডে, অর্থাৎ সুপার এইটে। এই পাঁচ দলের মধ্যে কোন দুটি দল শেষ পর্যন্ত পরের ধাপে যেতে পারে, তা নিয়েই আজকের আলোচনা। পাশাপাশি কোন দলের সেরা খেলোয়াড় কারা, কোন দিন কোন দলের খেলা ও শেষ পর্যন্ত দলে জায়গা করে নিয়েছে কারা—সেসবও থাকবে আলোচনায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরের মাটিতে খেলা। কদিন আগেই ঘরের মাঠে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। বোঝাই যাচ্ছে রোভম্যান পাওয়েলের নেতৃত্বে বর্তমানে বেশ ছন্দে আছে দলটি। দলে ফিরেছেন জনসন চার্লস, হেটমায়ার, আন্দ্রে রাসেলদের মতো হার্ডহিটার ব্যাটাররা। জোসেফ, আকিল ও ম্যাকয়রা রয়েছেন বোলিং লাইনআপে। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঘরের মাটিতে হারানো সহজ হবে না। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কিছুটা চাপে পড়েছিল স্বাগতিকেরা। একটা সময় মনে হয়েছিল, এই বুঝি হেরে যায় রাসেলরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাসেল ও রোস্টন চেজের কাঁধে ভর দিয়ে ৬ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা উগান্ডা। তুলনামূলক সহজ দুই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকতে চাইবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারপর নিউজিল্যান্ড ও আফগানিন্তানের মধ্যে যে কাউকে হারালেই তারা চলে যাবে সুপার এইটে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল
রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), আলজারি জোসেফ, জনসন চার্লস, রোস্টন চেজ, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ, আকিল হোসেন, শামার জোসেফ, ব্র্যান্ডন কিং, গুড়াকেশ মোতি, নিকোলাস পুরান, আন্দ্রে রাসেল, শেরফান রাদারফোর্ড, ওবেদ ম্যাকয় ও রোমারিও শেফার্ড।
সময়সূচী
সেরা খেলোয়াড়: আন্দ্রে রাসেল
বর্তমানে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন রাসেল। সম্প্রতি শেষ হওয়া আইপিএল-এ ১৫ ম্যাচ খেলে ২২২ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ১৯ উইকেট। স্ট্রাইক রেট ১৮৫। এমন খেলোয়াড় দলে থাকলে স্বস্তিতে থাকতে পারেন যেকোনো দলের অধিনায়ক। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের কথাই ধরো, পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে হাত ঘুরিয়ে রাসেল নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২ উইকেট। আবার দল যখন চাপে, তখন মাঠে এসে ৯ বলে ২৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে দলকে জেতালেন।
নিউজিল্যান্ড
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের কাছে হেরে অবশ্য টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল কিউইদের। প্রায় সেই দলটাই এবারও খেলবে বিশ্বকাপে। এত দিনে তাঁদের অভিজ্ঞতাও বেড়েছে। অভিজ্ঞতা ও ধারাবাহিকতাই নিউজিল্যান্ডের সবেচেয়ে বড় শক্তি। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজে তা আবারও প্রমাণ করে দেখিয়েছে কিউইরা।
নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবার ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলছেন। দলে আছেন রাচিন রবীন্দ্র, ফিন অ্যালেন, ডেভন কনওয়ে ও মার্ক চ্যাপম্যানের মতো ব্যাটার। মিডল অর্ডার সামলাবেন ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, মিচেল স্যান্টনাররা। বল হাতে অভিজ্ঞ টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, সোধিরা তো আছেনই।
নিউজিল্যান্ড দল
কেইন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ফিন অ্যালেন, ট্রেন্ট বোল্ট, মাইকেল ব্রেসওয়েল, মার্ক চ্যাপম্যান, ডেভন কনওয়ে, লকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, টিম সাউদি।
রিজার্ভ খেলোয়াড়: বেন সিয়ার্স।
সময়সূচী
সেরা খেলোয়াড়: রাচিন রবীন্দ্র
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নজর কেড়েছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। বিশ্বকাপ অভিষেকেই তাঁর পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। টি-টোয়েন্টিতে ২০২১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে অভিষেক হলেও একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় গত বছরই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো ম্যাচ ছিল না। ফলে সন্দেহ ছিল বিশ্বকাপে দলে জায়গা পাবেন কি না। অথচ ১০ ম্যাচে ৫৭৮ রান করে সবাইকে চমকে দিলেন রাচিন। হয়েছেন বিশ্বকাপের চতুর্থ সেরা রানসংগ্রাহক। বল হাতেও নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এমন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার এবারও যদি তেমন ঝলক দেখাতে পারেন, তাহলে আদতে নিউজিল্যান্ডেরই লাভ।
আফগানিস্তান
আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তান রয়েছে ১০ নম্বরে। কিন্তু এই ওপরের যেকোনো দলকেই হারিয়ে দিতে পারে অনায়াসে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত (২ বার), পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে আফগানিস্তান। দলের সবচেয়ে মজবুত জায়গা বোলিং বিভাগ। রশিদ খান, মুজিবুর রহমান, নবী, ওমরজাই, ফারুকি—সবাই বিশ্বমানের বোলার। স্কোরবোর্ডে রান তোলার দায়িত্বে থাকবেন গুরবাজ, জাদরান, গুলবদিনরা। ফলে দলটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হতেই পারে।
আফগানিস্তান দল
রশিদ খান (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, নজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ ইসহাক, মোহাম্মদ নবী, গুলবদিন নাইব, করিম জানাত, নানগায়াল খারোতি, মুজিব উর রেহমান, নুর আহমেদ, নাভিন-উল-হক, ফজলহক ফারুকি ও ফরিদ মালিক।
রিজার্ভ খেলোয়াড়: হজরতউল্লাহ জাজাই, সেদিকউল্লাহ অটল ও সালিম সাফি।
সময়সূচী
সেরা খেলোয়াড়: রশিদ খান
বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার রশিদ খান। বিশ্বব্যাপী প্রায় সব টুর্নামেন্টে খেলেছেন এই রহস্যময় স্পিনার। টি-টোয়েন্টিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা রশিদ খানের। সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও তাঁর। ব্যাট হাতেও দারুণ কার্যকরী এই অলরাউন্ডার। এখন পর্যন্ত ৮৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে নিয়েছেন ১৩৮ উইকেট। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৪৮ রানের ইনিংসসহ মোট ৪০৩ রান করেছেন। বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ৫৭৬ উইকেটের পাশাপাশি রয়েছে ২২০৬ রান। রশিদ খান জ্বলে উঠলে নিভে যেতে পারে রাসেল কিংবা রাচিনের আলো।
উগান্ডা
আফ্রিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে শেষ ম্যাচে জয় পেয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে উগান্ডা। ৬ ম্যাচের ৫টিতে জয় নিয়ে আফ্রিকা অঞ্চল থেকে নামিবিয়ার পাশাপাশি বিশ্বকাপের এবারের আসরে জায়গা পেয়েছে উগান্ডা। দেশটির টি-টোয়েন্টি জয়ের রেকর্ড অবিশ্বাস্য। ৪৯ ম্যাচের ৪১টিতে জয়। জয়ের হার শতকরা ৮৩.৬৭ ভাগ। আলপেশ রামজানি ও অধিনায়ক ব্রায়ান মাসাবা উগান্ডার মূল ভরসা। ২০২৩ আইসিসি পুরুষ বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের মনোয়ন পেয়েছিলেন রামজানি। এই বিশ্বকাপে একটা ম্যাচও জিততে পারলে তাঁদের আত্মবিশ্বাসের পাল্লা আরও ভারী হবে।
উগান্ডা দল
ব্রায়ান মাসাবা (অধিনায়ক), সাইমন সেসাজি, রজার মুকাসা, কসমাস কিয়েউতা, দিনেশ নাকরানি, ফ্রেড আচেলাম, কেনেথ ওয়াসোয়া, আলপেশ রামজানি, ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগা, হেনরি সেনিওন্দো, বিলাল হাসুন, রবিনসন ওবুয়া, রিয়াজাত আলী শাহ, জুমা মিয়াজি ও রোনাক প্যাটেল।
রিজার্ভ খেলোয়াড়: ইনোসেন্ট এমওয়েবাজে ও রোনাল্ড লুটাইয়া।
সেরা খেলোয়াড়: আলপেশ রামজানি
আইসিসির সহযোগী দেশ উগান্ডার নায়ক হতে পারেন আলপেশ রামজানি। ২০২৩ আইসিসি পুরুষ বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৩৯টি টি-টোয়েন্টিতে ২৪.৬৪ গড়ে রান করেছেন ৫৪২। আছে দুটি অর্ধশতক। বল হাতে নিয়েছেন ৬৯ উইকেট। ইকোনমি ৪.৭। এভারেজ চোখে পড়ার মতো—৮.৮। মানে প্রায় প্রতি ৯ রান দিয়ে একটি উইকেট পেয়েছেন রামজানি। ২০২২ সালে অভিষেক হওয়া এই ক্রিকেটারই হতে পারেন উগান্ডার তুরুপের তাস।
পাপুয়া নিউগিনি
দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে পাপুয়া নিউগিনি। শেষ ১৮ ম্যাচের ১৪টিতে জয় পেয়ে বিশ্বকাপে এসেছে তারা। প্রথম ম্যাচেই চমকে দিয়েছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। অনভিজ্ঞতার কারণে শেষ পর্যন্ত চাপে রাখতে পারেনি স্বাগতিকদের, কিন্তু এখান থেকে শিক্ষা নিলে এখনো ভালো কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে এই দ্বীপরাষ্ট্রের। বাছাইপর্বে ৬ ম্যাচের ৬টিতেই জিতেছে তারা। তা ছাড়া দলে অলরাউন্ডারের ছড়াছড়ি। আসাদ ভালা, চার্লস আমিনি, সেসে বাউরা ম্যাচ জেতার মতো রসদ জুগিয়ে দিতে পারেন। দলে আছেন আলেই নাও, জন কারিকোর কার্যকর মতো বোলার। প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে প্রথম ওভারে এসে মেডেন উইকেট নিয়েছে নাও। এ বিশ্বকাপে এক বা দুইটা ম্যাচ জিততে পারলে ওদের বড় পাওয়া হবে।
পাপুয়া নিউগিনি দল
আসাদ ভালা (অধিনায়ক), আলেই নাও, চ্যাড সোপার, চার্লস আমিনি, হিলা ভারে, হিরি হিরি, জ্যাক গার্ডনার, জন কারিকো, কাবুয়া মোরেয়া, কিপলিং দোরিগা, লেগা সিয়াকা, নরমান ভানুয়া, সেমা কামেয়া, সেসে বাউ ও টনি উরা।
সময়সূচী
সেরা খেলোয়াড়: আসাদ ভালা
পাপুয়া নিউগিনির অধিনায়ক। বাঁ হাতে ব্যাট করার পাশাপাশি স্পিন বল করেন তিনি। স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে গেলেও নিজের প্রতিভা দেখিয়েছেন ভালা। ব্যাট হাতে ২১ রানের পাশাপাশি ৪ ওভার বল করে নিয়েছেন ২টি উইকেট। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৬০ ম্যাচ খেলে ২৬.৪ গড়ে ১২৬৫ রান ও ৬.৩৬ ইকোনমিতে ৩৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। দলের সবার সহায়তা পেলে আসাদ ভালার নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একাধিক ম্যাচ জিততে পারে।