‘চিল গাই’ এখন রিয়াল মাদ্রিদে

গত মৌসুমের মাঝামাঝি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠেছিল একটি কার্টুন। প্যান্টের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে ‘চিল গাই’ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে দর্শকদের দিকে। ফিলিপ ব্যাংকসের আঁকা কার্টুন রীতিমতো ভাইরাল হয়ে উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম থেকে ‘চিল গাই’কে খেলার দুনিয়ায় নিয়ে এসেছিলেন প্রিমিয়ার লিগের তরুণ তুর্কি ডিন হাউসেন। মৌসুম ঘুরতে না ঘুরতেই হাউসেনের পরবর্তী গন্তব্য রিয়াল মাদ্রিদ। 

রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার সাক্ষর করাচ্ছে এ যেন অমাবস্যার আকাশে চাঁদ দেখার মতো ঘটনা। ডিফেন্ডার দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে রিয়াল মাদ্রিদ বরাবরই বেশ কিপটে। আক্রমণভাগে কিংবা মাঝমাঠে কোটি কোটি টাকা ঢেলে ফেলা সম্ভব, কিন্তু ডিফেন্ডারদের বেলাতেই কিপটেমিটা বেশ চোখে লাগে। রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান লাইন-আপের দিকে তাকালেই সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাইট ব্যাক দানি কার্ভাহাল ও লুকাস ভাসকেজ, দুজনই রিয়াল মাদ্রিদের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন। অন্য দলে ঘুরে এসে থিতু হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে। একই ঘটনা লেফট ব্যাক ফ্রান গার্সিয়ার। দলের মূল দুই ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবা ও অ্যান্তোনিও রুডিগার দলে যোগ দিয়েছেন ফ্রি-তে। ২০১৯ সালে রিয়ালে নাম লিখিয়েছেন বাকি দুই ডিফেন্ডার এডার মিলিতাও ও ফেরলান্ড মেন্ডি। দলবদলে দুইজনেরই দাম ছিল ৫০ মিলিয়ন ইউরো। 

হাউসেনের আইকনিক ‘চিল গাই’ উদযাপন।
ছবি: এক্স

করোনার আগে শেষ কোনো ডিফেন্ডারের জন্য টাকা পয়সা খরচ করেছিল রিয়াল। এরপর থেকে বড় বড় অনেক নাম যোগ দিয়েছে রিয়ালে, কিন্তু তাদের কেউ রিয়ালের খরচের খেড়োখাতায় কিছু যোগ করতে পারেনি। যে কারণে করোনার পর ডিফেন্ডার কেনার তালিকায় রিয়াল মাদ্রিদ আছে ২৩৬ তম অবস্থানে। ফ্র্যান গার্সিয়াকে ফেরত আনতে যে ৫ মিলিয়ন খরচ হয়েছিল, সেটাই লেখা আছে নামের পাশে। সেই রিয়াল মাদ্রিদ হন্তদন্ত হয়ে ডিফেন্ডারের পেছনে ছুটবে এমনটা ভাবাই দুষ্কর। কিন্তু মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই দলবদলের বাজারে দেখা গেল নতুন এক রিয়াল মাদ্রিদকে। 

লিভারপুল ডিফেন্ডার ট্রেন্ট আলেকজেন্ডার আর্নল্ডকে আনঅফিসিয়ালি দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল। কাগজে-কলমে এখনও চুক্তি না হলেও তাঁর পরবর্তী গন্তব্য যে রিয়াল, তা সকলেরই জানা। আর্নল্ডের পর রিয়াল যে আরেক ডিফেন্ডারের পেছনে ছুটবে, এমনটা আশা করেনি অনেকেই। সেটাও আবার প্রিমিয়ার লিগ থেকে। ডিন হাউসেনকে কেনাটা তাই অনেকের কাছেই অবাক করার মতো।

খোদ হোসে মোরিনহোর কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন হাউসেন।
ছবি: এক্স

পরীক্ষিত খেলোয়াড় ছাড়া বাজারে কেনাকাটা করা রিয়ালের সঙ্গে যায় না। হাউসেন খুব যে পরীক্ষিত তা বলা কঠিন। তবে এই বয়সেই খোদ ‘স্পেশাল ওয়ান’ হোসে মোরিনহোর প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। মোরিনহো তাঁকে আখ্যা দিয়েছেন ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে। জুভেন্টাসে থাকাকালীন কোচ ম্যাক্সিমিলিয়ানো এলেগ্রির মুখ থেকেও শোনা গিয়েছিল হাউসেনের প্রশংসা। 

কোচেদের প্রশংসা পেলেও কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে হাউসেনের অভিজ্ঞতা বেশ কম। সদ্য ২০ বছরে পা দিলেন, সিনিয়র ক্যারিয়ার সবেমাত্র তিন মৌসুমের। জুভেন্টাস-রোমা ঘুরে এই মৌসুমে পাড়ি জমিয়েছিলেন বোর্নমাউথে। প্রিমিয়ার লিগে দূর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুযোগ পেয়েছেন স্পেনের জাতীয় দলে। হাউসেন নজর কেড়েছেন সেখান থেকেই। যদিও ক্যারিয়ারের শুরুতে ডাচ যুব দলে খেলতেন হাউসেন। ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে দল বদল করে যোগ দেন স্পেনে। স্পেনের জার্সিতে দূর্দান্ত পারফরম্যান্সই ২০ বছর বয়সী ডিফেন্ডারকে নজরে এনেছে রিয়াল মাদ্রিদের।  

স্পেনের হয়ে এই বছর অভিষেক হয়েছে হাউসেনের।
ছবি: এক্স

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই মৌসুমে শীর্ষ দশে লিগ শেষ করবে বোর্নমাউথ। আর তার সবচেয়ে বড় ক্রেডিট যাবে ডিন হাউসেনের কাছে। বয়সে ১৯ হলে কী হবে, প্রিমিয়ার লিগের তাগড়া অ্যাটাকারদের সামনে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগের বড় বড় দলগুলো তাই তাঁকে দলে ভেড়ানোর জন্য উৎসুক ছিল। দামটাও নাগালের মধ্যে, মাত্র ৫০ মিলিয়ন ইউরো। রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে তাঁকে নিয়ে যেতে পারে কেউ। কিন্তু হাউসেনের নজর ছিল রিয়ালের সাদা জার্সিটার দিকে। যে কারণে চেলসি, লিভারপুল, আর্সেনাল, নিউক্যাসেলের মতো দলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফিরিয়ে দিয়েছেন পুরোনো দল জুভেন্টাসকেও। হাউসেনের ইচ্ছেই ছিল স্পেনে ফেরা। যে দেশে বড় হয়েছেন, ফিরতে চেয়েছেন সেই মাটিতে। আর সেটা যদি হয় আইডল সার্জিও রামোসের দল, তবে তো আর কথাই নেই। 

হাউসেনের প্রস্তাবের কাছে মাথা নত করতে হয়েছে বোর্নমাউথকে। প্রথম প্রথম রিয়াল অনীহা দেখালেও ওপর থেকে গ্রিন সিগনাল পাওয়া মাত্র হাউসেনের পেছনে ছুটেছে রিয়াল। সেই ওপরের সিগনাল আর কেউ নন, রিয়ালের ‘নতুন’ কোচ শাবি আলানসো। ক্লাব বিশ্বকাপের আগে দলকে নিজের মতো গড়ে তুলতে চান শাবি। আর্নল্ড, হাউসেন সেই পরিকল্পনারই অংশ। আর তাতে হাউসেনও রাজি। গত তিন মাস ধরে লিভারপুল, চেলসি তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে হাউসেনকে দলে ভেরানোর। সেখানে রিয়াল দৌড়ে যুক্ত হতে না হতেই বদলে গেল সমীকরণ। 

আরেক রিয়াল ডিফেন্ডার রাউল এসেন্সিওর সঙ্গে বেশ সখ্যতা হাউসেনের।
ছবি: এক্স

হাউসেনকে দলে ভেড়াতে ৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হচ্ছে রিয়ালকে। তবে সেটা একবারে নয়। তিন বছরে পরিশোধ করতে হবে সেই অর্থ। ৫ বছরের চুক্তিতে রিয়ালে যোগ দিলেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদে প্রতি বছর ৯ মিলিয়ন ইউরো বেতন পাবেন ‘চিল গাই’। চেলসি-লিভারপুলের দ্বিগুন অফার ছেড়ে রিয়ালে যোগ দিয়েছেন এই ডিফেন্ডার। সব ঠিকঠাক থাকলে ক্লাব বিশ্বকাপেই রিয়ালের জার্সিতে দেখা যাবে ‘চিল গাই’ হাউসেনকে। 

আরও পড়ুন