বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমি মার্তিনেজকে কেন কেউ কিনল না?
ডেডলাইন ডে’র একেবারে শেষ মুহূর্ত। প্রতিটি ক্লাব ব্যস্ত, শেষ মুহূর্তে নিজেদের দল গুছিয়ে নিতে। এর মাঝেই অপেক্ষায় আছেন এমি মার্তিনেজ, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক। অ্যাস্টন ভিলার সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হয়েই গেছে, পুরো দলবদলের মৌসুমে অপেক্ষায় ছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন মার্তিনেজকে কেনার জন্য লাইন লেগে যাবে ইউরোপিয়ান হেভিওয়েটদের। মার্তিনেজকে হতাশ করেছে সবাই। বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক থেকে গেলেন পুরোনো ঠিকানাতেই। কেন কেউ বেছে নিল না? তিন মাস ধরে চলা দলবদলের মৌসুম শেষে এমি মার্তিনেজ কেন ব্রাত্য?
ঘটনার সূত্রপাত গত মৌসুমের শেষ ম্যাচে। ম্যাচের আগেই ভক্ত আর বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছিলেন এমি—পরের মৌসুমের পরিকল্পনায় যাতে তাঁকে আর রাখা না হয়। তিনি নতুন কোনো দলেই যোগ দিচ্ছেন। নিজ মাঠে, নিজ দর্শকদের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায়ও বলে দিয়েছিলেন। যদিও তাঁর সঙ্গে চুক্তির আরও ৪ বছর বাকি। তবু ভিলা ছেড়ে নতুন দলের খোঁজ করছিলেন তিনি। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ আর গোল্ডেন গ্লাভসের মালিক এই গোলরক্ষককে থামায় কে? বর্তমান সময়ে বড় বড় দলে যখন গোলরক্ষকদের অভাব স্পষ্ট, সেখানে এমি মার্তিনেজ কোথাও না কোথাও তো ঠাঁই পেয়ে যাবেনই।
না, নতুন ক্লাব পাননি মার্তিনেজ, তাঁকে কেনার জন্য এগিয়ে আসেনি কোনো ক্লাব। গুঞ্জন আছে, বেশ কয়েকটি ক্লাব থেকে কিছু প্রস্তাব এসেছিল। লা লিগা, তুরস্ক, সৌদি আরব থেকে বেশ প্রস্তাব পেয়েছিলেন গোল্ডেন গ্লাভসজয়ী গোলররক্ষক। কিন্তু সেগুলো নিজেই প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন এমি মার্তিনেজ। তাঁর লক্ষ্যই ছিল ইউরোপিয়ান হেভিওয়েট কোনো ক্লাবে যোগ দেওয়া। আর তাঁর মনমতো একটা প্রস্তাবই এসেছিল— ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলবারের নিচে অবস্থা বেশ খারাপ। দলের দুই গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা ও আলতায় বায়োন্দর হতাশ করছেন নিয়মিত। সে জায়গায় দক্ষ আর ভরসা করার মতো একজোড়া হাত দরকার ছিল ইউনাইটেডের। এমি মার্তিনেজ নিজেকে মনে মনে ইউনাইটেডের একজন ভাবাও শুরু করেছিলেন বৈকি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলো না।
ইউনাইটেডের কাছে এমি মার্তিনেজের জন্য ৪০ মিলিয়ন ইউরো চেয়েছিল অ্যাস্টন ভিলা। বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক, তার ওপর দলের অধিনায়ক—এমন দাম চাওয়াটাই স্বাভাবিক। ইউনাইটেড পিছু হটেছে সেই দাম শুনেই। ৩৩ বছরে পা দেওয়া একজনের জন্য এত খরচ করতে রাজি ছিল না ইউনাইটেড বোর্ড। শুধু দলবদল না, বেতনের ক্ষেত্রেও পিছু হটতে নারাজ ছিলেন মার্তিনেজ। প্রতি সপ্তাহে ২ লাখ পাউন্ড বেতন চেয়েছিলেন তিনি। তিনি হতেন ইউনাইটেডের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড়। দুই জায়গাতেই বিশাল টাকার হ্যাপা দেখে পিছু হটে ইউনাইটেড। খুঁজতে থাকে অন্য কাউকে। আর সেটাই মিলে যায় একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে। বেলজিয়ামের ‘নাম্বার ওয়ান’ দিন লেমেন্স।
বয়সে মার্তিনেজের থেকে ১০ বছরের ছোট, সঙ্গে বেতন আর দামটাও কম। অভিজ্ঞতা তুলনামূলক কম, বেলজিয়ান লিগ থেকে এসে প্রিমিয়ার লিগে মানানোর ব্যাপারও আছে। শেষ মুহূর্তে এসে ইউনাইটেডের কাছে অপশন ছিল দুটি—মার্তিনেজ অথবা লেমেন্স। অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্য। শেষ পর্যন্ত তারুণ্যের দিকেই ঝুঁকল ইউনাইটেড। ফলে ব্রাত্য হয়ে পড়লেন মার্তিনেজ। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে লেমেন্সের সঙ্গে চুক্তি করল ইউনাইটেড আর মার্তিনেজ রয়ে গেলেন অ্যাস্টন ভিলায়। মার্তিনেজের জন্য যে আরও প্রস্তাব আসেনি, তা নয়। লা লিগার দুটি ক্লাব থেকে তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, শোনার আগেই না করে দিয়েছেন। প্রস্তাব এসেছিল তুর্কি লিগের গ্যালাতেসারে থেকে, সেখানেও তিনি যাবেন না। সৌদি লিগ তো আরও নয়। অ্যাস্টন ভিলা যেমন দাম না পেয়ে ছাড়তে চায়নি, তেমনি এমি মার্তিনেজ নিজের মনমতো বেতন আর দল না পেলে যেতে চাননি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতে হাতছাড়া হয়ে গেছে বাকি সব ট্রেন। ফলে ৩৩ বছর বয়সী গোলরক্ষক রয়ে গেলেন অ্যাস্টন ভিলায়, যেখানেও তিনি ব্রাত্য। কারণ? কোচ উনাই এমেরির ভাষায় ‘মার্কো বিজোত’! গত মৌসুম শেষেই মার্তিনেজকে ছাড়া পরিকল্পনা শুরু করেছিল ভিলা। আর তার অংশ হিসেবেই ফ্রেঞ্চ ক্লাব ব্রেস্ট থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে ৩৪ বছর বয়সী ডাচ গোলরক্ষক মার্কো বিজোতকে। কোচের ভরসার পাত্র হয়ে উঠেছেন ইতিমধ্যে। বিজোতের কারণে এই মৌসুমের একটি ম্যাচেও দেখা যায়নি মার্তিনেজকে। একাদশে দূরে থাক, স্কোয়াডেই জায়গা হয়নি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের।
এমি মার্তিনেজ এখন আছেন দোটানায়। ৩৩ বছরে পা দিয়েছেন সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ, ঠিক যে মুহূর্তে নিশ্চিত হয়েছে অন্য কোনো দল তাঁকে নিতে আসছে না। সেই মুহূর্তেই বেজেছে জন্মদিনের সুর। বয়সটা যেভাবে বাড়ছে, এখনই টা টা বলে দিতে হচ্ছে বড় দলে যাওয়ার সুযোগ। বিশ্বকাপের এক বছর আগে চেয়েছিলেন বড় দলে গিয়ে নিজেকে আরও শাণিত করতে। নতুন ‘চ্যালেঞ্জ’ খুঁজতে গিয়ে হয়েছেন হাস্যরসের পাত্র। কাগজে-কলমে অধিনায়ক হয়েও নিজ দলে ব্রাত্য তিনি।
তবে আশার কথা একটিই, এমি মার্তিনেজের জায়গা আর্জেন্টিনা দল থেকে কেড়ে নিতে পারছে না কেউ। মার্কো বিজোত তেমন কোনো ভালো পারফর্ম করেননি যে তাঁকে দলে পাকাপোক্ত করবেন উনাই এমেরি। আন্তর্জাতিক বিরতি শেষে তাই এমি মার্তিনেজের সামনে কঠিন পরীক্ষা। পুরোনো দলে কীভাবে নিজের জায়গা ফিরে পাবেন, সেই চ্যালেঞ্জ যেমন আছে। তেমনই নতুন দলকে আগ্রহী করা প্রয়োজন। দেখা যাক এমি মার্তিনেজ কোনটি বেছে নেন।