ইংলিশ লিগের সেরা লিভারপুল
‘ভিনি, ভিসি, ভিডি’। আর্নে স্লটকে ব্যাখ্যা করার জন্য এই লাতিন বাক্যটির চেয়ে উপযুক্ত আর কিছু হতে পারে না। ডাচ কোচ লিভারপুলে এসেছেন, দেখেছেন, নিজের মতো করে জয় করেও নিয়েছেন। প্রথম মৌসুমে এসেই প্রিমিয়ার লিগ জিতে নেওয়া কোচের ছোট্ট তালিকায় আর্নে স্লটের নামটাও শোভা পাবে। অথচ ১১ মাস আগে তিনি দলে টিকতে পারবেন কি না, এই প্রশ্নে জর্জরিত ছিল লিভারপুল।
লিভারপুলকে কেন্দ্র করে গত ৯ মাসে ঘুরপাক খেয়েছে হাজারো খবর। মোহাম্মদ সালাহ থাকবেন তো? ফন ডাইক থাকবেন তো? আর্নল্ড কি রিয়ালে যোগ দিচ্ছেন? আর্নে স্লট কি পারবেন ক্লপের জায়গায় মানিয়ে নিতে? লিভারপুল যতটা না শিরোনামে এসেছে নিজেদের জন্য, তার চেয়ে বেশি এসেছে বাকিদের জন্য। আর হাজারো প্রশ্নের মাঝে অল রেডদের নিয়ে স্লট কাজ সেরেছেন চুপিসারে।
১১ মাস আগে এ মাঠেই বিদায় নিয়েছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। সেদিন তাঁর বিদায়ে মলিন ছিল লিভারপুলের রাস্তা, শহর, বন্দর থেকে আকাশটাও। ৬১ হাজার দর্শকের সামনে সেদিন মাইক হাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্লটকে।
নতুন মৌসুমে নতুন করে দল গড়বেন, সে সুযোগই দেওয়া হয়নি আর্নে স্লটকে। ক্লপের ফেলে রাখা দলকে তুলে দেওয়া হয়েছিল তাঁর হাতে। বোর্ড থেকে দেওয়া হয়নি একটি পয়সাও। ফেদেরিকো কিয়েসাকে দলে ভিড়েছিলেন, সেটাও ধারে। ক্লপের সাজিয়ে রাখা দল যে খুব একটা খারাপ ছিল, তা কিন্তু নয়। তবে নতুন কোচ নতুন করে দল সাজাবেন, সে সুযোগটা ছিল না ডাচ কোচের হাতে। তাঁকে নিয়ে তাই ভয়টা ছিল সবার। বোর্ডের কিপটেমির স্বভাব নিয়ে বারবার বলেছেন ক্লপ, লাভ হয়নি। খেলোয়াড় বিক্রি করে যে পয়সা আয় করতেন, তা দিয়েই খেলোয়াড় কিনতেন, লড়াইয়ে নামতেন ট্রফির জন্য। ক্লপ যেভাবে কিপটে বোর্ডকে সামলাতেন, ডাচ কোচও কি পারবেন সেটা করতে? মাত্র ৯ বছরের কোচিং অভিজ্ঞতা নিয়ে স্লট কি পারবেন প্রিমিয়ার লিগের ঝড়ঝাপটা সামলাতে?
স্লট নিজের ইতিহাস লিখলেন ডাগআউটে দাঁড়িয়ে। তাঁর কোচিংয়ে ছিল না বিশাল ট্যাকটিকসের মারপ্যাঁচ, কিংবা উল্লসিত হয়ে ফেটে পড়া। বরং ঠিক খেলোয়াড়কে ঠিক জায়গায় ব্যবহার করার উপায়টা জানা ছিল তাঁর। ছোট চুলের সালাহ হয়ে উঠলেন তাঁর অধীন অপ্রতিরোধ্য। অধিনায়ক ফন ডাইক হয়ে উঠলেন দেয়াল। যখনই গোল প্রয়োজন, তখনই জ্বলে উঠেছেন লুইস ডিয়াজ, কোডি গাকপো। এমনকি ডারউইন নুনেজ, অদ্ভুত সব ভুল করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যিনি দীর্ঘদিন ধরে হাসির পাত্র। তিনিও কিনা দুর্দান্ত হয়ে উঠলেন স্লটের অধীন। তবে স্লটকে দিনের পর দিন সাপোর্ট দিয়ে গেছেন মাঝমাঠের ম্যাক অ্যালিস্টার-সোবোজলাই-গ্রাভেনবার্চ ত্রয়ী।
বাকি দলগুলো যখন একের পর এক হোঁচট খেয়েছে, স্লট সেখানে জয়রথ চালিয়েছেন পুরোদমে। শুধু প্রিমিয়ার লিগ নয়, চ্যাম্পিয়নস লিগেও। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, ট্রেবলের জন্য লিভারপুলের চেয়ে ফেবারিট বোধ হয় আর কেউ নেই। এমন সময় হোঁচট। কিন্তু স্লটের মাথায় ছিল সবটাই। হোঁচট খেলেও দিশাহারা হননি। ফলাফল, পুরো মৌসুমে হারের স্বাদ পেয়েছেন মাত্র দুই ম্যাচে। চার ম্যাচ আর এক মাস বাকি থাকতেই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা এখন তাঁর হাতে। সেটাও মাত্র ৮২ পয়েন্ট নিয়ে।
পাঁচ বছরের মধ্যে লিভারপুলের দ্বিতীয় প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা। ইংলিশ শীর্ষ বিভাগের ইতিহাস ধরলে সংখ্যাটা ২০। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে এখন লিভারপুল। প্রায় এক যুগ আগে যে তকমা হারিয়েছিল অল রেডরা, স্লটের অধীন আবারও লিভারপুল পৌঁছে গেল শীর্ষে। কাগজে–কলমে ইংলিশ লিগের সেরা দল এখন লিভারপুল।
১১ মাস আগে এ মাঠেই বিদায় নিয়েছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। সেদিন তাঁর বিদায়ে মলিন ছিল লিভারপুলের রাস্তা, শহর, বন্দর থেকে আকাশটাও। ৬১ হাজার দর্শকের সামনে সেদিন মাইক হাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্লটকে। সেদিন ‘আর্নে স্লট, লা লা লা লা’ সুরে গা ভাসিয়েছিলেন খুব কম সমর্থকই। ১১ মাস পর আর্নে স্লট সেই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিলেন ক্লপের মতো করেই। ‘ইয়ুর্গেন ক্লপ, লা লা লা’ সুরে লিভারপুল জিতে নিল তাদের ২০তম ইংলিশ লিগ। ফিরে পেল ইংল্যান্ডের সেরা দলের খেতাবটাও।