১৪ বছর বয়সে আইপিএলে সেঞ্চুরি
বৈভব সূর্যবংশী যা করলেন, তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। সময়ের কাঁটায় তাঁর বয়সটা মাত্র ১৪ বছর ৩২ দিন। এই বয়সের শিশুরা ব্যস্ত থাকে ভিডিও গেমসে আর পড়াশোনায়। কেউ কেউ পাড়ার মাঠে ছক্কা হাঁকিয়ে স্বপ্ন দেখে বিশ্বজয়ের। সেই বয়সের স্বপ্ন বৈভব পূরণ করেছেন। আইপিএলের মঞ্চে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পুরো দুনিয়াকে।
১৩ বছর বয়সী ব্যাটারের জন্য নিলামে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করেছিল রাজস্থান। এমনি এমনি কিন্তু নয়। খরচ করার আগে নিজেদের একাডেমিতে ডেকেছে, তাঁদের খেলা নিয়ে হয়েছে কাটাছেঁড়া। ব্যাটিং টেকনিক, শট পাওয়ার দেখে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন খোদ রাহুল দ্রাবিড়। অতঃপর নিলাম থেকে তাঁকে কেনা।
বৈভবের অভিষেক হতে হতে পেরিয়ে গিয়েছিল ৭ ম্যাচ। রাজস্থানের ওপেনিং জুটি নিয়ে অভিযোগ করার জায়গা ছিল না কারও। জয়সোয়াল-স্যামসন জুটি কয়েক বছর ধরেই রাজস্থানের সেরা ব্যাটার। তাঁদের টপকে বৈভব সুযোগ পাবেন, এমনটা ভাবা অসম্ভব। অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসনের চোটে এল সুযোগ। অভিষেকটাই হলো ছক্কা দিয়ে। অভিজ্ঞ শার্দূল ঠাকুরের বল ডিপ কাভারের ওপর দিয়ে পাঠিয়েছেন সীমানার বাইরে। সেখান থেকে শুরু। এরপরের ম্যাচে সীমানার বাইরে হাঁকিয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার ও জশ হ্যাজলউডের বল। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচটা ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুকে।
গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ২১০ রানের বিশাল টার্গেট রাজস্থানের ওপর। বৈভবের জন্য এগুলো যেন কোনো বিষয়ই না। ৫০ রান পাড়ি দিলেন মাত্র ১৭ বলে। এরপর যেন একটু দম নিলেন। টানা কয়েকটা বল ডট। অনেকে ভেবেছিলেন, এই বয়সে এতটা ধকল শরীরও হয়তো আর নিতে পারছে না। বৈভব পরের ওভারে জানিয়ে দিলেন, তিনি থামছেন না। করিম জানাতের এক ওভারে নিলেন ৩০ রান। এরপর রশিদ খানকে উড়িয়ে মেরে সেঞ্চুরি। মাত্র ৩৫ বলে।
বৈভবের জন্য এ ছিল এক রেকর্ডের রাত। আইপিএলের ১৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম। বৈভবকে ছাড়িয়ে আছেন মাত্র একজন—ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে দশম দ্রুততম সেঞ্চুরি। পুরো ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। ১১ ছয় আর ৭ চার। ১০১ রানের ইনিংসে ৯৪ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন বিধ্বংসী ইনিংস কেউ দেখেছে কি না, সেটাও বড় প্রশ্ন। প্রসিধ কৃষ্ণার দুর্দান্ত ইয়র্কারে আউট না হলে হয়তো বিধ্বংসী ইনিংসটা বড় হতে পারত আরও।
১৪ না ১৬, বয়স নিয়ে এখনো দোটানা আছে অনেকেরই। কিন্তু বয়স যেটাই হোক না কেন, এত কম বয়সেই এমন বিধ্বংসী ইনিংস যাঁর ব্যাট থেকে এসেছে, ভবিষ্যৎটা তাঁর উজ্জ্বল, তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না। কে জানে আগামী দুই দশকের রাজত্ব এখান থেকেই হয়তো শুরু করলেন বৈভব।