সাগরিকা মাঠে নামছেন, জয় হোক বাংলাদেশের

বাঁ থেকে মোসাম্মৎ সাগরিকা, স্বপ্না রানীছবি: সাগরিকার ফেসবুক পেজ থেকে

সাগরিকা আজ সোমবার মাঠে নামছেন। আজ অলিখিত ফাইনাল। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ যদি আজ নেপালের কাছে হারে, তাহলে নেপালই চ্যাম্পিয়ন। ড্র করতে পারলেও বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারবে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী শিরোপা।

তিন ম্যাচ আগে নেপালের সঙ্গেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে খেলায় ‘লাল কার্ড’ পেয়ে বসেন বাংলাদেশের দুর্দান্ত স্ট্রাইকার সাগরিকা। তাঁকে জড়িয়ে ধরে আটকে রেখেছিলেন নেপালি খেলোয়াড় সিমরান রায়, অনেকক্ষণ।

মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি সাগরিকা। নিজেকে ছাড়াতে আকুল সাগরিকা হাত তুলে ফেলেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের দিকে। ফলে দুজনকেই লাল কার্ড দেখান রেফারি। ৫০০ ডলার জরিমানা হয় সাগরিকার। তিনি এরপর আরও তিনটি ম্যাচ খেলতে পারেননি।

আরও পড়ুন
মা-বাবার সঙ্গে সাগরিকা
ছবি: সাগরিকার ফেসবুক পেজ থেকে

সাগরিকাকে ছাড়াই বাংলাদেশ অন্য তিনটি ম্যাচ জিতেছে। নেপালের সঙ্গে ম্যাচও জিতেছে। চারটি দল অংশগ্রহণ করছে—নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশ। প্রতিটি দল দুবার করে একে অপরের মুখোমুখি হবে, এ নিয়মে খেলা হচ্ছে। আজ বাংলাদেশের শেষ খেলা, সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে বসুন্ধরা কিংস মাঠে।

আজকের খেলায় ড্র করলেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন, কিন্তু হেরে গেলে চ্যাম্পিয়ন হবে নেপাল। কারণ, তাদের স্কোর বেশি। নেপালের মেয়েরা বাংলাদেশের কাছে হারলেও অন্য ম্যাচগুলো দারুণ খেলেছেন। তাই আজ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

মাঠে বল নিয়ে ছুটছেন সাগরিকা
ছবি: শামসুল হক

এর আগের ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশ অনেক গোল করলেও গোলের গড়ে পিছিয়ে আছে নেপালের সঙ্গে। এর কারণ, ভেজা মাঠ আর কোচ পিটার বাটলারের কৌশল। তিনি প্রতিটি ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। আসল একাদশকে মাঠে নামাননি। আরেকটা কারণও ছিল। তা হলো, মূল স্ট্রাইকার সাগরিকার না থাকা।

আরও পড়ুন

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের সাধারণ পরিবারের মেয়ে সাগরিকা। জন্ম ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর। বাবা লিটন আলী রানীশংকৈল-হরিপুর সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকান চালান।

ওই অজপাড়াগাঁয়ে আছে একটি ফুটবল একাডেমি। নাম রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমি। গ্রামের তাজুল ইসলাম নামের এক ফুটবলপ্রেমী গড়ে তুলেন এই একাডেমি। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরের গ্রাম রাঙ্গাটুঙ্গী। দিনমজুর, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রান্তিক কৃষকদের গ্রাম এটা। এই গ্রাম থেকে ১৮ জন নারী ফুটবলার এখন জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলে থাকেন।

২০২৪ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলের ফাইনালে বাংলাদেশ হেরে যেতে বসেছিল ১-২ গোলে। সাগরিকার গোলে সমতা আসে। তারপর টাইব্রেকার। সেটাও একটার পর একটা টাই হতে থাকলে শেষ পর্যন্ত দুই দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম দুই ম্যাচে ৪ গোল করেছেন সাগরিকা (বাঁয়ে)
ছবি: শামসুল হক

এবার প্রথম খেলাতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে সাগরিকা। দ্বিতীয় ম্যাচেও সাগরিকা করেছিলেন দুই গোল। কিন্তু ম্যাচের ৫৫ মিনিটে নেপালের সঙ্গে পেয়ে বসেন লাল কার্ড। লাল কার্ড পাওয়ার আগে সাগরিকা সেই ম্যাচে ১ গোল করেছিল।

আজ টুর্নামেন্টের শেষ খেলা। অলিখিত ফাইনাল। আজ কি চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখতে পারবেন বাংলাদেশের মেয়েরা? কোচ পিটার বাটলার আজ প্রথম থেকেই মূল একাদশকে নামাবেন নিশ্চয়ই। সাগরিকা ছাড়াও আজ খেলতে নামবেন আফঈদা, স্বপ্না রানী, উমেহলা, মুনকি আক্তারের মতো নিয়মিত মুখ। গোলের তৃষ্ণায় ছটফট করবেন তৃষ্ণা রানী।

নেপালও এখন দারুণ ফর্মে। তাই খেলাটা জমে উঠবে দারুণভাবে। চোখ রাখতে হবে টি স্পোর্টসে। আজ সন্ধ্যা সাতটায়।