আমার বয়স তখন ৬। স্কুলে ভর্তি হইনি। আমার বড় বোন এসএসসি পরীক্ষার্থী। আপু বারান্দার ঘরে দরজা বন্ধ করে পড়ালেখা করত। আমি বারবার বারান্দায় যাওয়ার ফন্দি আঁটতাম। কখনো বলতাম, ‘আমি রাফি না, আমি তোর আম্মু, দরজা খোল।’ আবার কোনো দিন বলতাম, ‘আমি তোর নানু। দরজা খোল!’ কী বোকাই না ছিলাম তখন। একদিন আপু নিরুপায় হয়ে দরজা খুলে আমাকে ঢুকতে দিল। আমি তো মহা খুশি। আপু বলল, ‘রাফি, তুই তোর পড়া পড়। আমি আমার পড়া পড়ি।’ আমি তখন তার টেবিলের ওপর রাখা বই ঘাঁটছি।
বললাম, ‘আমি কী পড়ব?’ ‘তোকে না দেখে অ আ লিখতে দিই? না দেখে অ আ লিখতে পারিস?’ বলল আপু। আমি তো অবাক। না দেখে অ আ লেখা যায়? আমি তো পারি না। আপু শুনে বলল, ‘এত বড় ছেলে না দেখে অ আ পারে না। ছি ছি ছি।’ আমি বললাম, ‘চেষ্টা করে দেখি।’
আমাদের বাসার বারান্দার জানালা দিয়ে একটা নারকেলগাছ দেখা যেত। আমি যথারীতি খাতার দিকে না তাকিয়ে জানালার বাইরে নারকেলগাছের দিকে তাকিয়ে লেখা শুরু করলাম। খাতায় অ একদিকে তো আ আরেক দিকে। না দেখে লেখা যাকে বলে। আপুর তো দেখে চক্ষু চড়কগাছ। গলা ফাটিয়ে হাসতে হাসতে বলে, ‘আমি তোকে বই না দেখে লিখতে বলেছি, খাতা না দেখে নয়।’