নৌকা ডুবে যাচ্ছিল গুড্ডুবুড়াদের

অলংকরণ: নাইমুর রহমান

মা বললেন, গুড্ডুবুড়া, বোন প্লেটে হাড় রাখতে হয়, কাঁটা রাখতে হয়।

গুড্ডুবুড়া বলল, গুড্ডিবুড়ি বোন প্লেটে রাখবে। আমি তো বোন না। আমি ভাই। আমি ছেলে। আমি ভাই প্লেটে রাখব।

মা বললেন, এই বোন মানে সিস্টার নয়, এই বোন মানে হাড়।

গুড্ডুবুড়া বলল, বোন প্লেটে হাড় রাখব। কিন্তু মাছের কাঁটা রাখার জন্য... মা, কাঁটার ইংরেজি কী?

গুড্ডিবুড়ি বলল, আরে বোকা, কাঁটাই হলো মাছের হাড়!

ও।

মা বললেন, গুড্ডিবুড়ি ঠিক বলেছে। কাঁটা হলো মাছের হাড়। আর কাঁটার ইংরেজি হলো থর্ন। যেমন ফুলের কাঁটা।

গুড্ডিবুড়ি বলল, আর ঘড়ির কাঁটার ইংরেজি হলো হ্যান্ড।

হি হি হি। গুড্ডুবুড়া হাসল। ঘড়ির কি হাত আছে?

স্কুলে টিচার বললেন, সবাই ভাইরাস থেকে সাবধান!

গুড্ডুবুড়া স্কুল থেকে ফিরেই ছুটে এল বোনের কাছে। বলল, গুড্ডিবুড়ি, তুই তো বেঁচে গেলি। একটা ভাইরাস এসেছে। ভাইদের ধরবে। তুই তো বোন। তোকে ধরবে না।

গুড্ডিবুড়ি বলল, এমন আজব চিন্তা তোর মাথায় আসে কোত্থেকে?

গুড্ডুবুড়া বলল, আরে, ছেলেধরারা যেমন শুধু ছেলেদের ধরে, মেয়েদের ধরে না।

গুড্ডুবুড়ার ফুফু এসেছেন বাড়িতে। তিনি বললেন, গুড্ডুবুড়া তুমি এত শুকনা কেন? খুব শুকিয়ে গেছ?

গুড্ডুবুড়া বলল, আমি কি সব সময় ভেজা থাকব নাকি!

ফুফু বললেন, না, মানে তোমাকে রোগা দেখা যাচ্ছে। তুমি শুকিয়ে কাঠি হয়ে গেছ। খাও না কিছু?

গুড্ডুবুড়ার মা বললেন, না আপা, কিচ্ছু খায় না। না খেয়ে না খেয়ে ছেলেটার আমার কী অবস্থা!

ফুফু বললেন, গুড্ডুবুড়া একটা কাজ করো তো। তোমার বাবার কাছ থেকে ১০০০ টাকার নোটটা ভাঙিয়ে আনো।

গুড্ডুবুড়া বাবাকে বলল, বাবা, ফুফু বলেছেন এই টাকাটা ভাঙিয়ে দিতে।

বাবা বললেন, না রে আমার কাছে হবে না। গুড্ডুর মা তুমি এক হাজার টাকা ভাঙিয়ে দিতে পারবা?

মা বললেন, না, আমিও এত বড় টাকা ভাঙাতে পারব না।

গুড্ডুবুড়া ভাবল, ফুফু বেড়াতে এসেছেন কদিনের জন্য। আর তাঁর সামান্য একটা কাজ তারা তিনজনে মিলেও করতে পারবে না। এ কী হয়!

গুড্ডুবুড়া একটা হাতুড়ি নিয়ে নোটটাকে পেটাতে লাগল। কিন্তু টাকা ভাঙানো বড় কষ্ট। কিছুতেই টাকাটা ভাঙছে না। এক কাজ করা যায়। শিলপাটা দিয়ে চেষ্টা করা যায়। শিলপাটায় নানাভাবে পিষে টাকাটার মোটামুটি বারোটা বাজাতে পারল গুড্ডু। সেই টাকা যে আদৌ কখনো টাকা ছিল, বোঝাই যাচ্ছে না। নানাভাবে চেষ্টা করে গুড্ডু ফুফুর টাকাটা মোটামুটিভাবে ভাঙতে পারল। কয়েকটা টুকরা করা গেল নোটটাকে।

গুড্ডুবুড়া সেই টুকরাগুলো ফুফুর কাছে নিয়ে গেল। বলল, বাবা ভাঙাতে পারেনি, মা পারেনি, আমি পেরেছি।

ফুফু কাঁদতে লাগলেন। তুই আমার এক হাজার টাকার নোট ছিঁড়ে ফেললি?

ছিঁড়িনি, ভেঙেছি। গুড্ডুবুড়া বলল।

হায় হায়, এ কেমন ছেলে রে। ফুফু চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন।

গুড্ডুবুড়া কিছুতেই বুঝছে না, সমস্যাটা হলো কোথায়!

গুড্ডুবুড়ার কাশি হলো। ফুফু বললেন, শোনো, তুমি কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করো।

আরও পড়ুন

আচ্ছা। বলে গুড্ডুবুড়া পানির মধ্যে ডিমের কুসুম ছেড়ে দিতে আস্ত একটা ডিম ভেঙে ফেলল।

মা বললেন, গুড্ডু কী করো?

মা, ফুফু বলেছেন, কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করতে। তাই ডিমের কুসুম দিচ্ছি।

ফুফু দেখে হায় হায় করতে লাগলেন।

নাহ। এই ছেলেকে আজকেই আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। একে ডাক্তার দেখাতেই হবে। এর মাথার মগজ তো শুকিয়ে একেবারে আঠা হয়ে গেছে।

ডাক্তার দেখলেন গুড্ডুবুড়াকে। নাড়ি টিপলেন, স্টেথোস্কোপ দিয়ে বুক–পেট চেক করলেন। তারপর বললেন, আরে এই ছেলের সব ভালো। শুধু একটাই সমস্যা। সে ঠিকভাবে খায় না। তাকে ঠিকভাবে খেতে হবে। গুড্ডুবুড়া তুমি ঠিকভাবে খাবে। ভাত খাবে, মাছ খাবে, মাংস খাবে, ডিম খাবে, দুধ খাবে, শাক খাবে, সবজি খাবে, ফল খাবে, পানি খাবে, রুটি খাবে। আর বেশি করে খেলাধুলা করবে। দেখবে, তোমার স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে, আর তোমার ব্রেনও খুব ভালো হয়ে যাবে। আর তুমি যদি না খাও, তোমাকে ইনজেকশন দিতে হবে। ইনজেকশন বোঝো তো...

না না। আমাকে ইনজেকশন দেবেন না। আমি ঠিকভাবে খাব।

আর তুমি ঠিকভাবে খেলাধুলা করবে।

আচ্ছা।

এরপর গুড্ডুবুড়া ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করে। ঠিকভাবে খেলাধুলা করে। সে ভাত খায়, রুটি খায়, দুধ খায়, ডিম খায়, শাক খায়, সবজি খায়, ফল খায়, ঠিকভাবে পানি পান করে।

গুড্ডুবুড়া একটা হাতুড়ি নিয়ে নোটটাকে পেটাতে লাগল। কিন্তু টাকা ভাঙানো বড় কষ্ট। কিছুতেই টাকাটা ভাঙছে না। এক কাজ করা যায়। শিলপাটা দিয়ে চেষ্টা করা যায়।

আর খেলাধুলা করে। তার স্বাস্থ্য ভালো হতে লাগল। আর তার বুদ্ধিও হতে লাগল দারুণ ধারাল।

একদিন ফুফুর সঙ্গে তারা বেড়াতে গেল ধানমন্ডি লেকের ধারে। একটা প্যাডেল দিয়ে চালানো যায় নৌকা দেখে ফুফু বললেন, আমি নৌকায় উঠব, নৌকা চালাব।

মা বললেন, আচ্ছা চলো, আমরা চারজন চড়ি নৌকায়। গুড্ডুবুড়া, মা, ফুফু আর গুড্ডিবুড়ি উঠল নৌকায়। স্টিলের তৈরি নৌকা। পা দিয়ে প্যাডেল ঘোরাতে হয়। তাহলে নৌকা চলে। গুড্ডুবুড়া হাল ধরে আছে। মা আর ফুফু প্যাডেল ঠেলছেন। গুড্ডুবুড়ি বলছে, হেঁইয়ো হেঁইয়ো...

তখন বর্ষাকাল। লেকের পানি উছলে পড়ছে। মাঝ বরাবর গেছে বোটটা। অমনি দেখা গেল, একটা ছোট্ট ফুটা দিয়ে হুল হুল করে নৌকায় পানি উঠছে।

ফুফু আঁতকে উঠলেন। এইভাবে পানি উঠতে থাকলে নৌকা ভরে যাবে। তখন নির্ঘাত নৌকা যাবে ডুবে। তিনি সাঁতার জানেন না। গুড্ডুবুড়া সাঁতার জানে। সে হয়তো বাঁচবে। কিন্তু গুড্ডিবুড়ি সাঁতার জানে না। গুড্ডুবুড়ার মা বলল, আপা, আমি সাঁতার জানি। আমি গুড্ডিবুড়িকে পিঠে করে নিয়ে পাড়ে যেতে পারব।

আরও পড়ুন

ফুফু সঙ্গে সঙ্গে গুড্ডুবুড়ার মাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি তোমাকে ছাড়ব না। গুড্ডুবুড়ার মা বললেন, আপনিও মরবেন, আমিও মরব, গুড্ডিবুড়িও মারা যাবে। গুড্ডুবুড়া, তুই সাঁতরে যাস।

গুড্ডুবুড়া বলল, দাঁড়াও। ফুটো বন্ধ করছি। তার পকেটে ছিল চুয়িংগাম। সে তাড়াতাড়ি প্যাকেট বের করে বলল, তাড়াতাড়ি সবাই চুয়িংগাম চিবাও। তারপর এই ফুটোতে লাগাও।

চুয়িংগাম চিবিয়ে ফুটোতে লাগানো হলো। ফুটো বন্ধ হলো।

গুড্ডুবুড়া বলল, আমার ক্যাপটা দিয়ে আমি পানি সেচে দিচ্ছি। তোমরা প্যাডেল চালাও। আমাদের তাড়াতাড়ি তীরে ভিড়তে হবে।

গুড্ডুবুড়া পানি সেচতে লাগল।

তারা নিরাপদেই তীরে ভিড়তে পেরেছিল।

এরপর শুরু হলো গুড্ডিবুড়িকে সাঁতার শেখানোর কাজ। গুড্ডুবুড়া বলল, ফুফু, তুমিও যাও গুড্ডিবুড়ির সঙ্গে। ওকেও সাঁতার শেখাও। তুমিও শেখো।

ফুফু বললেন, এই বয়সে আমি আর পানিতে নামতে পারব না।

গুড্ডুবুড়া বলল, ফুফু, শেখার কোনো বয়স নেই। আর সাঁতার কাটলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। শরীরে মেদও জমতে পারে না।

ফুফু বললেন, পাকা ছেলে। তুই এত কিছু কেমনে জানিস?

গুড্ডুবুড়া বললেন, ফুফু, তুমি কি এই কবিতাটা জানো?

কোন কবিতা?

গুড্ডুবুড়া বলল, শোনো ফুফু, তোমাকে একটা কবিতা শোনাই। সুকুমার রায়ের কবিতা:

মাঝি শুধায়, ‘সাঁতার জানো? মাথা নাড়েন বাবু’

মূর্খ মাঝি বলে, ‘মশাই, এখন কেন কাবু?

বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব কোরো পিছে,

তোমার দেখি জীবনখানা ষোল আনাই মিছে!’

সাঁতার না জানলে জীবন ষোলো আনাই মিছে হয়ে যায়।

ফুফু বললেন, আচ্ছা তাহলে আমিও সাঁতার শিখব।

এরপর গুড্ডিবুড়ি আর ফুফু সাঁতার শেখার স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলেন।

আরও পড়ুন