এসএসসি পাসের পর কী কী করতে পারো
সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তোমরা যারা পাস করেছ, সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন। জীবনের প্রথম বড় একটি ধাপ সফলভাবে পার করার জন্য তোমরা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই সময়টা ভীষণ আনন্দের। তবে একটু চিন্তার বিষয়ও আছে। এখন কী করবে? এই প্রশ্নটা বারবার তোমাদের মাথায় আসতে পারে, শুনতে পারো অভিভাবকদের থেকেও।
তবে চিন্তার কিছু নেই। এসএসসি পাস মানে পড়াশোনার শেষ নয়, বরং জীবনের অসংখ্য সম্ভাবনার দরজা খুলে যাওয়া। তোমাদের সামনেও এখন অনেক দরজা খোলা। ঠিক কোন দরজা দিয়ে তোমরা ঢুকবে, তা একান্ত তোমাদের ঠিক করতে হবে। আমরা এখন খুঁজে দেখি, তোমরা কী কী করতে পারো।
১. কলেজে ভর্তি (এইচএসসি)
আমাদের দেশের সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় পথ হলো কলেজে ভর্তি হওয়া। তোমারা রেজাল্ট ও পছন্দ অনুযায়ী বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হতে পারো। যারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখো, তাদের জন্য এইচএসসি হলো প্রথম সিঁড়ি। এরপর ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে আরও অনেকটা পথ। তবে সেটা পরের কথা। এখন কলেজে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন বই, বন্ধু আর ক্যাম্পাস।
২. কারিগরি প্রশিক্ষণ (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং)
যারা গতানুগতিক পড়াশোনার বাইরে নিজের হাতকে দক্ষ করে তুলতে চাও, তাদের জন্য রয়েছে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এখানে সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, কম্পিউটার, আর্কিটেকচার বা মেকানিক্যালের মতো বিষয়ে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে পারো। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, পড়ালেখা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির বাজারে অনেক চাহিদা তৈরি হবে। শুধু এই চার বছর মনোযোগ দিয়ে কাজটা শিখতে হবে হাতেকলমে।
৩. কম্পিউটার ও আইটি দক্ষতা অর্জন
এখনকার যুগটাই কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের। যদি পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং বা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিষয়ে কোর্স করো, তাহলে খুব দ্রুত স্বাবলম্বী করতে পারবে। এসব দক্ষতার কারণে সমবয়সী বন্ধু থেকে এগিয়ে থাকবে অনেকটা। তা ছাড়া এই দক্ষতাগুলো কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে পারবে।
৪. বিশেষায়িত ভোকেশনাল ট্রেনিং
তোমরা কি নার্সিং, ফার্মেসি, ফিজিওথেরাপি বা টেক্সটাইলের মতো পেশায় আগ্রহী? তাহলে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্পমেয়াদি কোর্সে ভর্তি হতে পারো। এসব কোর্স তোমাদের দ্রুত চাকরির জন্য প্রস্তুত করে তুলবে। পাশাপাশি দেশে ও বিদেশে কাজের সুযোগ তৈরি হবে।
৫. বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি
অনেকের স্বপ্ন থাকে বিদেশে পড়াশোনা করার। এসএসসি পাসের পর এই সময়টাকে তোমরা কাজে লাগাতে পারো। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য IELTS-এর প্রস্তুতি নিতে পারো। বাংলাদেশে IELTS প্রস্তুতির জন্য বেশ কিছু ভালো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন, ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি এডুকেশন, সাইফুর’স কোচিং সেন্টার, মেন্টর’স এডুকেশন ইত্যাদি। চাইলে ইউটিউবের কিছু চ্যানেল থেকেও টিউটোরিয়াল ও টিপস পেতে পারো। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী অন্য কোনো দেশের ভাষাও (যেমন, জাপানিজ, জার্মান) শিখতে পারো। ভাষা শেখার জন্য কিছু ব্যবহার করতে পারো ডুয়োলিঙ্গ, বাবেল, রোসেটা স্টোন বা বিবিসি ল্যাঙ্গুয়েজের মতো অ্যাপ। এই অভিজ্ঞতাও তোমাদের অন্যদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে।
৬. ছোট্ট ব্যবসা বা নতুন উদ্যোগ
তোমাদের যদি নতুন কিছু করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে ছোট পরিসরে নিজের একটা উদ্যোগ শুরু করতে পারো। সেটা হতে পারে একটি ইউটিউব চ্যানেল, অনলাইন পোশাকের দোকান, ঘরোয়া খাবারের ব্যবসা কিংবা শখের জিনিস বিক্রির একটি ফেসবুক পেজ। ছোট ছোট স্বপ্ন থেকেই কিন্তু বড় উদ্যোক্তার জন্ম হয়।
৭. মানুষের জন্য কাজ (ভলান্টিয়ারিং)
সমাজের জন্য কিছু করার আনন্দ সব সময় অন্যরকম। তোমরা চাইলে বিভিন্ন সংগঠনে (রেড ক্রিসেন্ট, জাগো ফাউন্ডেশন) স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দিতে পারো। এতে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে, নেটওয়ার্কিং বাড়বে, নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ তৈরি হবে।
৮. নিজের শখ খুঁজে বের করো
এই অবসর সময়টা কিন্তু তোমাদের জন্য একটা উপহার। এই সময়ে তোমরা নিজের পছন্দের কাজগুলো করতে পারো। কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকো, গান গাও, দারুণ কবিতা লেখো—যা-ই করো না কেন, এই সময়ে তা করতে পারো। ভালো ভালো কিছু বই পড়েও কাটাতে পারো সময়। নিজের শখকে সময় দাও, দেখবে মনের ভেতর থেকে একটা অন্য রকম আনন্দ পাবে।
কিছু জরুরি পরামর্শ
নিজের মনের কথা শোনো: অন্যরা কী বলছে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজে কী চাও। নিজের ইচ্ছা আর সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেই সিদ্ধান্ত নাও।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলো: যেকোনো সিদ্ধান্তে মা–বাবার মতামত নাও। তাঁদের অভিজ্ঞতা তোমাদের পথচলাকে আরও সহজ করে দেবে।
খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করো: এই সময়ে ভুল পথে পা বাড়ানোর অনেক সুযোগ আসবে। যেকোনো ধরনের নেশা, অনলাইন আসক্তি এবং খারাপ বন্ধুদের থেকে নিজেদের দূরে রাখো।
মোদ্দা কথা, এসএসসি পাস জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু। পথটা নিজের, সিদ্ধান্তও নিজের। সাহস করে নিজের পছন্দের পথ বেছে নাও। মনে রাখবে, পরিশ্রমী আর সৎ থাকলে যেকোনো জায়গা থেকেই সফল হতে পারবে। শুভকামনা রইল তোমাদের আগামীর পথচলার জন্য।