একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আগে যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন

বর্তমানে বাংলাদেশের কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিকছবি: মঈনুল ইসলাম

শিক্ষার্থীদের জীবনে এসএসসি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। এই পর্যায়ের সফলতা ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের পথনকশা নির্ধারণ করে দেয়। এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করে কলেজজীবনের প্রস্তুতি পর্বে, যা নতুন এক ধাপে পদার্পণ। কিন্তু এই নতুন অধ্যায় শুরু করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক নানা রকম বিভ্রান্তি ও তথ্যের অভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই কলেজে ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ও সচেতনতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া
বর্তমানে বাংলাদেশের কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ওয়েবসাইট www.xiclassadmission.gov.bd থেকে ভর্তির আবেদন করতে হয়। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একবার রেজিস্ট্রেশন করলেই শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বেছে নিতে পারে। পছন্দক্রমের ভিত্তিতে কলেজ নির্বাচন করার সময় শিক্ষার্থীদের উচিত নিজ এলাকা, কলেজের ফলাফল, শৃঙ্খলা, পরিবেশ, বিষয়ভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় রাখা।

আরও পড়ুন

অনলাইনে আবেদন করতে প্রয়োজন হয়

এসএসসি রোল নম্বররেজিস্ট্রেশন নম্বরপাসের সালশিক্ষা বোর্ডের নামসচল মুঠোফোন নম্বরআবেদন ফি (প্রতি আবেদন ফর্মে সাধারণত ১৫০ টাকা) আবেদন শেষে শিক্ষার্থীদের আবেদন কনফারমেশন কপি ডাউনলোড করে রাখতে হয়, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করে কলেজজীবনের প্রস্তুতি পর্বে, যা নতুন এক ধাপে পদার্পণ
ছবি: দীপু মালাকার

মেধা তালিকা ও ভর্তি নিশ্চিতভর্তির আবেদন জমা দেওয়ার পর কয়েক ধাপে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রথম মেধা তালিকায় যারা স্থান পায়, তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইন বা মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ২০০ টাকা দিয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে  হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেধা তালিকাও প্রকাশ পায় অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের জন্য। কেউ প্রথম পছন্দ না পেলে দ্বিতীয় বা পরবর্তী তালিকায় স্থান পেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রথম ধাপে ভর্তি নিশ্চিত করতে ভুলে যায় অথবা সময়মতো টাকা পরিশোধ না করায় তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। এটি একটি মারাত্মক ভুল। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের উচিত ওয়েবসাইট ও মুঠোফোনে এসএমএস নিয়মিত চেক করা।

বিভাগ নির্বাচন: বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায়শিক্ষার্থী কোন বিভাগে পড়বে সে বিষয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য ৪.০০ বা তার বেশি জিপিএ এবং গণিত ও বিজ্ঞানে ভালো ফল থাকা দরকার।ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩.৫০ বা তার কাছাকাছি জিপিএ থাকলেও হয়।মানবিক বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম জিপিএ হলেও অনেক ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব।তবে কেবল জিপিএ কিংবা কলেজ নয়, নিজের আগ্রহ, ভবিষ্যৎ পেশার পরিকল্পনা (যেমন: চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, শিক্ষক, আইনজীবী ইত্যাদি) এবং বিষয়ভিত্তিক দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ। একবার ভুল বিভাগ বেছে নেওয়ার ফলে উচ্চমাধ্যমিকে সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে।কলেজ পছন্দের সময় বিবেচ্য

আরও পড়ুন
ছবি: সোয়েল রানা

একটি ভালো কলেজ কেবল ফলাফলের ওপর নির্ভর করে না। আরও যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত: কলেজের অবস্থান (বাসা থেকে দূরত্ব)শিক্ষক-শিক্ষিকার মান ও সংখ্যাবিজ্ঞান ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি সুবিধাসহশিক্ষা কার্যক্রম (কুইজ, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান)কলেজের পরিবেশ ও শৃঙ্খলাশিক্ষার্থী–শিক্ষক অনুপাতটিউশন ফি ও অন্যান্য খরচনিরাপত্তা ও পরিবহনব্যবস্থা (বিশেষ করে মেয়েদের জন্য)ভর্তি ফি ও আর্থিক দিকসরকারি কলেজে ভর্তি ফি কম (প্রায় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা)। বেসরকারি কলেজে ৮ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকাও হতে পারে। অনেক ভালো বেসরকারি কলেজে স্কলারশিপ বা ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে, যা ভালো জিপিএ অর্জনকারীরা পেতে পারে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রভর্তি নিশ্চিত করার সময় শিক্ষার্থীদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ সঙ্গে রাখতে হয়:- এসএসসি মার্কশিট ও সার্টিফিকেট (প্রাথমিক পর্যায়ে অনলাইন কপি চলবে)- এসএসসি প্রবেশপত্র (Admit Card)- পাসপোর্ট সাইজ ছবি (২–৪ কপি)- অনলাইন আবেদন কনফারমেশন পত্র- মুঠোফোন নম্বর ও অভিভাবকের নম্বর- সাধারণ ভুল ও করণীয়- অনেক শিক্ষার্থী নিম্নলিখিত ভুল করে:- ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন- সময়মতো ভর্তি নিশ্চয়নের টাকা পরিশোধ না করা- কলেজের পরিবেশ বা সুযোগ-সুবিধা যাচাই না করে ভর্তি হওয়া- অন্যের কথা শুনে নিজের সিদ্ধান্ত ভুল নেওয়া

এসব ভুল এড়িয়ে চলার জন্য আত্মবিশ্বাস, সময়জ্ঞান, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা অপরিহার্য। এসএসসির পর কলেজে ভর্তি কেবল একটি প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক, যা ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার এবং জীবনের দিকনির্দেশ নির্ধারণ করে। তাই এই সময়ে তথ্যসচেতনতা, ব্যক্তিগত সক্ষমতা ও আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সঠিক কলেজ, সঠিক বিভাগ ও সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়াই হবে একান্ত প্রয়োজনীয়। মনে রাখবেন, ভর্তিই শেষ নয়, এই ভর্তির পর শুরু হবে নতুন অধ্যায়, যার প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই

লেখক: প্রভাষক, ব্রেভ জুবিল্যান্ট স্কলার্স অব মনোহরদী মডেল কলেজ, নরসিংদী

আরও পড়ুন