৫০ বছর বয়সে সিনেমা হলের স্বপ্ন পূরণ
কার্লোস কস্তার বয়স যখন ছয় বছর তখন প্রথম গিয়েছিলেন সিনেমা হলে। দাদি তাঁকে সিনেমা দেখতে নিয়েছিলেন। সেই দিনই স্বপ্ন দেখেছিলেন, বড় হয়ে একদিন সিনেমা হল বানাবেন। কার্লোসের জীবনে এরপর অনেক জল গড়িয়ে গেছে। তবে হাল ছাড়েননি। অবশেষে ৫০ বছর বয়সে এসে একটা ছোট্ট সিনেমা হল দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
প্রথম সিনেমা হলে ঢোকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কার্লোস বলেন, ‘যখন আমি সেই বিশাল পর্দা দেখেছিলাম, আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তখনই আমি মনে মনে বলেছিলাম, একদিন আমারও একটা সিনেমা হল হবে।’ ২০২২ সালে এসে কার্লোসের সেই স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়। ব্রাজিলের অন্যতম জনবহুল শহর সাও পাওলোতে ‘সিনে এলটি৩’ নামে ৩৫ আসনের একটি সিনেমা হল চালু করেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, এর জন্য অবশ্য কাঠখড় পোড়াতে হয়নি কার্লোসকে। নিজের জীবনের সবটুকু সঞ্চয় এবং ক্রেডিট কার্ডের লোন সব মিলিয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ টাকা জোগাড় করতে হয়েছিল তাঁকে। এর তিনি এক পুরোনো গ্যারেজে সেই সিনেমা হল তৈরির উদ্যোগ নেন।
এদিকে গ্যারেজে সিনেমা হল বানানোর পরিকল্পনা কার্লোস হাতে নিয়েছিলেন এর সঙ্গে একটি স্টুডিও ছিল। করোনা মহামারির কারণে ওই স্টুডিওটি বন্ধ হয়ে যায়। সুযোগটা নেন কার্লোস। ওই স্টুডিওটিকে বানিয়ে ফেলেন হল। আর ওই গ্যারেজ যেখানে এক সময় গাড়ি পড়ে থাকত সেখানে এখন মানুষ বসে আড্ডা দেন। হালকা-খাবারদাবারের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। এদিকে এই গ্যারেজে একটি ছোট্ট টিকিট কাউন্টারও আছে। সেখানে কার্লোস দর্শকদের কাছে টিকিট বিক্রি করেন। কার্লোস জানান, আগেভাগে টিকিট কিনতে হলে দর্শকদের তাকে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে বুকিং করতে হয়।
কীভাবে চলে সিনেমা হল, জানতে চাইলে কার্লোস বলেন, ‘এই সিনেমা হলটা পুরোপুরি আমি একাই চালাই। আমি সিনেমা চালাই, পপকর্ন বানাই, টিকিট বিক্রি করি—সবকিছু করি। আর্থিক কারণে আমি কর্মচারী রাখতে পারি না। তিনি বলেন, ‘তবে আমি মনে করি, এটাও আমার সিনেমা হলের আলাদা একটা আকর্ষণের অংশ। আমি নিয়মিত দর্শকদের নামে চিনি। যেটা অন্য সিনেমা হলগুলো থেকে এটাকে আলাদা করেছে।’
অন্য হল থেকে এটি আলাদা
কার্লোসের সিনেমা হলে বৈশিষ্ট্যও আলাদা। সচরাচর যে সিনেমাগুলো সিনেপ্লেক্সগুলোয় চলে সেগুলো তিনি চালান না। ফলে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এক ছোট আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে কার্লোসের এই সিনেমা হল। একে ঘিরে একটি দর্শকমহল তৈরি হয়েছে।
অন্যান্য দেশের মতো ব্রাজিলেও এমন সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলের সংখ্যা কম। ২০২৪ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এলটি৩-এর মতো ব্রাজিলে মাত্র ৪২৩টি হল আছে। অন্যদিকে, ব্রাজিলের মোট মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলেও সংখ্যা সিঙ্গেল স্ক্রিনের তুলনায় অনেক বেশি। সরকারি হিসাব অনুসারে মাল্টিপ্লেক্সে এমন স্ক্রিন আছে ৩ হাজার ৫৪২টি।
সিনেমার বাজার খারাপ হয়ে যাওয়ায় ব্রাজিলে অনেক সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনোটি ভেঙে চার্চ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আবার টিকে থাকার জন্য অনেক হলে এখন শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমা দেখানো হয়। আর কিছু সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল টিকে আছে করপোরেটদের পৃষ্ঠপোষকতায়। এত প্রতিকূলতা পেরিয়ে কার্লোসের সিনেমা হল এখনো টিকে আছে। অনেকই তাঁর এই কাজের প্রশংসাও করেন।
কার্লোস আসলে একজন সিনেমা পাগল মানুষ। তাঁর প্রিয় সিনেমা ‘সিনেমা প্যারাডিসো’। এর প্রধান চরিত্র, যার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি হলের বাইরের দেওয়ালে একটি ছবি এঁকেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সিনেমার মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার ক্ষমতা আছে।
কার্লোস বলেন, ‘কেউই সিনেমা হলে যেভাবে ঢোকে, সেভাবে বের হয় না। উদাহরণস্বরূপ, আমি একটি সিনেমা চালাই—কেউ কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায়, আবার কেউ কিছুই বুঝতে পারে না। এখানেই আমি মানুষের বৈচিত্র্য দেখতে পাই। যা একজন মানুষকে আবেগতাড়িত করে, এমনও হয় তা অন্যজনের ওপর কোনো প্রভাবই ফেলতে পারে না। এসব থেকে আমি প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন শিখি।’