রেস্তোরাঁয় যে ১০ আচরণ করব না

খাবার পরিবেশন করছেন যিনি, তাঁর সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলবছবি: কবির হোসেন

ঢাকা বা অন্য শহরগুলোতে এখন লাখো মানুষ বাস করে। আমাদের দেশে সবার জন্য এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ঘোরাফেরা বা সময় কাটানোর জন্য ফাঁকা জায়গা নেই। এখন ঘর থেকে বাইরে একটু সময় কাটাতে শহরের বাসিন্দারা সাধারণত রেস্তোরাঁয় যায়। বলা চলে, বাধ্য হয়েই রেস্তোরাঁয় যেতে হয়। রেস্তোরাঁয় বসে একটু ভালো সময় কাটানো, একটু আড্ডা দিলে সময় কাটে। রেস্তোরাঁয় নানা রকম মানুষ আসে। কেউ সময় কাটাতে, বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে আসে কেউ। যে কারণেই আসুক না কেন, রেস্তোরাঁর মূল অনুসঙ্গ হলো খাবার। এভাবে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সঙ্গে দাওয়া যুক্ত হয়েছে। খাওয়াদাওয়া করার সময় রেস্তোরাঁয় কিছু নিয়ম বা ভদ্রতা আমাদের মানতেই হয়। অন্যদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে, কারও যেন অসুবিধা না হয়, সে জন্যই আমাদের নিয়মগুলো মানতে হয়। এই লেখায় আমরা দেখব, কী সেই এটিকেট বা নিয়ম।

১. প্রথম এবং সবচেয়ে জরুরি নিয়ম হলো, আমরা চিৎকার করে কথা বলব না।

বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতে এসেছি, টাকা দিয়ে খাব, তাই বলে পুরো রেস্তোরাঁর মালিকানা আমাদের, এমন না। এত জোরে কথা বলবা না, যেন পাশের টেবিলের লোকজন বিরক্ত হয়। যদি কেউ অভিযোগ করে, ওই টেবিলের লোকজন জোরে কথা বলছে, তবে সেটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা এক্ষেত্রে প্রতিবাদ না করে নিজেদের সংশোধনের চেষ্টা করব।

২. এখন তো অনেক রেস্তোরাঁয় খাবারের পাশাপাশি খেলার জায়গা থাকে। ছোটদের মধ্যে দেখা যায়, খেলাটা বেশি পছন্দ করে তারা। রেস্তোরাঁয় খেলার জায়গায় খেলতে গিয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, খেলাটা নিয়ে না আদি। খেলার জায়গায় খেলা, খাবারের জায়গায় খাবার। অন্য যারা খেতে এসেছে, খেলতে আসেনি, তাদেরকে বিরক্ত না করতেই এই ব্যবস্থা।

আরও পড়ুন

৩. খাবার পরিবেশন করছেন যিনি, তাঁর সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলব। তিনি কোনো ভুল করলে বুঝিয়ে বলব। খাবার পরিবেশন ও ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি হলে তাঁকে বুঝিয়ে বলব। এ সময় অনেকেই রেগে যেতে দেখা যায়। কোনোভাবেই ওয়েটারের সঙ্গে রাগারাগি করা বা তাঁকে অসম্মান করা যাবে না। তাঁকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করব না।

ওরাও মানুষ। তাঁকে হুকুম না দিয়ে ভদ্রভাবে অনুরোধ করতে হবে।

৪. একবার অর্ডার দিয়ে হঠাৎ বদলাব না। ভেবেচিন্তে খাবার অর্ডার করলে পরে আর অর্ডার বদলাতে হবে না। যদি হুটহাট অর্ডার বদলে ফেলতে চেষ্টা করো, তবে রান্নাঘরে বাবুর্চি, কুক বা শেফদের অসুবিধা হয়। তাঁরা একটা কিছু প্রস্তুত করার মাঝখানে সেটা বন্ধ করলে রেস্তোরাঁর ক্ষতি হয়। তাঁদের অতিরিক্ত খাটুনি হয়।

৫. বাসায় যাদেরকে মা খাইয়ে দেন, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। ঠিক কীভাবে খেতে হয়, তারা সেটা শিখতে অসুবিধায় পড়ে। টেবিল নোংরা করে বা খাওয়ার সময় এমন কিছু করে, যেটা পাশের জনের অস্বস্তির কারণ হয়। বিশেষ করে টেবিল নোংরা করে খেলে অনেকেই নোংরা টেবিলে খেতে পারে না। সঠিক নিয়ম হলো, খাওয়া শেষ হলে যেন টেবিল খাওয়ার শুরুর মতোই পরিস্কার থাকে।

৬. সময় কাটাতে আমরা যেহেতু রেস্তোরাঁয় যাই, আমরা স্মৃতি ধরে রাখতে প্রচুর ছবি তুলি। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে অবশ্যই ছবি তুলতে পারো তুমি। কিন্তু খেয়াল রেখো, সেলফি তুলতে গিয়ে যেন অন্যরা তোমার ফ্রেমে চলে না আসে। বিনা আমন্ত্রণে ছবিতে চলে এলে অন্যরা বিরক্ত হয়। খাবার খেতে তখন আর তাঁর ভালো লাগে না।

আরও পড়ুন

৭. একসঙ্গে সবাই বসতে গিয়ে টেবিল চেয়ার টানাটানি করব্র না। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের একটা শৃঙ্খলা থাকে। তাঁরা ভালো জানেন কীভাবে টেবিল সাজালে তোমরা সবাই একসঙ্গে বসতে পারবে। তাঁদের অনুরোধ করে বলো, আমরা এতজন, আমরা একসঙ্গে বসতে চাই। তাঁরাই তোমাদের বসার ব্যবস্থা করে দেবেন।

৮. ঢাকায় জায়গায় কথা বলছিলাম, বেশি জায়গা নেই। রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। অল্প জায়গা, বহু মানুষ। পুরান ঢাকার অনেক রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে মানুষ সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কখন টেবিল ফাঁকা হবে। তাই খেতে বসে খাওয়া শেষ করে টেবিল ছেড়ে দেওয়াই নিয়ম। অতিরিক্ত সময় বসে থেকে ব্যবসায় ক্ষতি করা যাবে না। খাওয়া শেষ, উঠে পড়ো। তবে টেবিলের সবার খাওয়া শেষ হলে, তবেই উঠতে হবে। অন্যরা খাচ্ছে, তোমার খাওয়া শেষ বলে উঠে গেলে, এটা ভালো দেখায় না।

৯. খাবার নষ্ট করবে না। বুফে খেতে গেলে এই সমস্যা হয়। প্রচুর খাবার। প্লেট ভর্তি করে নিয়ে এলাম। মনে হচ্ছিল সব খেয়ে ফেলব। আসলে সব খাওয়া যায় না।

চোখ বড়, পেট ছোট—এটা হলে সমস্যা। যতটুকু পারবে, ততটুকু অর্ডার করবে। অল্প অল্প করে খাবার নিয়ে খাও বুফেতে। খাবার পালিয়ে যাচ্ছে না। তাই একবারে সব নিয়ে বসার প্রয়োজন নেই। আবার চাইলে পরে নেওয়া যাবে।

১০. বিল দেওয়ার সময় হাত ধুতে বা ফ্রেশ হতে চলে যেও না। আমি মানিব্যাগ আনিনি, এমন অজুহাত দিলে কেউ ভরসা করে না। বিশ্বাস নষ্ট হয়। বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে একসঙ্গে খেয়েছে, বিলও ভাগাভাগি করে দাও। তোমার কাছে বেশি থাকলে তুমি অন্যদের বিলও দিয়ে দিতে পারো৷ তোমার চেয়ে বয়সে ছোট, এমন কারও বিল দিতে তোমার দ্বিধা করা উচিত না।

তাই রেস্তোরাঁয় খাও এবং আনন্দ করো। তবে এটিকেট ভুলে যেও না।

আরও পড়ুন