কিছু গান মাথায় আটকে থাকে কেন
ধরো, রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তুমি আইয়ুব বাচ্চুর একটা ছবি দেখলে বা বক্সে তাঁর কোনো একটা গান বাজতে শুনলে। সঙ্গে সঙ্গে কি তোমার মাথায় কোনো বিশেষ সুর বেজে ওঠে? তুমি কি মনে মনে গাইতে শুরু করো ‘এই রুপালি গিটার ফেলে…’ বা ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো…’ গানের অংশ?
যদি তোমার সঙ্গে সঙ্গে এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে তুমি এইমাত্র ‘ইনভলান্টারি মিউজিক্যাল ইমেজারি’র অভিজ্ঞতা লাভ করলে। চলতি ভাষায় একেই বলে ‘ইয়ারওয়ার্ম’ (Earworm)। বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত। গবেষকেরা এখন জানতে শুরু করেছেন, এটি কীভাবে কাজ করে এবং কেন ঘটে। কেন কিছু গানের কথা আমাদের মাথায় গেঁথে থাকে!
গবেষকেরা দেখেছেন, গানের যে অংশটি কোনো বিরতি ছাড়াই বারবার ফিরে আসে, সেটিই সবচেয়ে সহজে মাথায় আটকে যায়। যেমন আইয়ুব বাচ্চুর ‘সেই তুমি’ গানের অংশটা। একই কথা অন্য যেকোনো শিল্পীর গানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মানে তোমার পছন্দের কোনো শিল্পীর গানের অংশ বারবার মনে মনে গাইলেই তা ইয়ারওয়ার্মের মধ্যে পড়ে।
খেয়াল করলে দেখবে ‘বেবি শার্ক, ডু ডু ডু’ গানের মধ্যে এ ধরনের পুনরাবৃত্তি রয়েছে। আবার কোনো গান খুব বেশি প্রচারের কারণে পরিচিত হয়ে গেলেও তা ইয়ারওয়ার্মে পরিণত হতে পারে। কোক স্টুডিও বাংলায় নতুন গান এলেও এমনটা হতে পারে। এখন কি তোমার মনের মধ্যে ‘আমার বন্ধু মহা জাদু জানে’ বেজে উঠল?
আমাদের মস্তিষ্কে কোনো গান টেপ রেকর্ডারের মতো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জমা থাকে না; বরং গানগুলো পরিচিতি ও মিলের ওপর ভিত্তি করে ছোট ছোট ‘পকেটে’ সাজানো থাকে। এই পকেটগুলো কিছু নির্দেশনার মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। অনেক কারণেই ইয়ারওয়ার্ম শুরু হতে পারে। যেমন সম্প্রতি গানটি শোনা, গানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো শব্দ শোনা বা দেখা, এমনকি একই রকম সুরের অন্য কোনো গান শোনা। তোমার অভ্যাসও এর কারণ হতে পারে। যেমন তুমি যদি প্রতিদিন সকালে বাসে গান শুনতে শুনতে যাও, তবে কোনো একদিন গান না শুনলেও তোমার মাথায় গানের কোনো অংশ বেজে উঠতে পারে।
তবে এর পেছনে একটি গভীর কারণও আছে। আমাদের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ নেটওয়ার্ক রয়েছে, যার নাম ‘ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক’। এই নেটওয়ার্ক তখনই সক্রিয় হয়, যখন আমরা দিবা স্বপ্ন দেখি বা কোনো কিছু নিয়ে এলোমেলোভাবে চিন্তা করি। গান মনে করার ক্ষেত্রে এই নেটওয়ার্ক অনেক সময় র্যান্ডমলি গানের একটি অংশ বেছে নেয়।
কিছু মানুষ তাদের ইয়ারওয়ার্ম উপভোগ করলেও, অনেকের জন্য এটি বেশ বিরক্তিকর। তুমিও যদি এই ব্যাপারটা উপভোগ না করো, তাহলে নাছোড়বান্দা এই গান মাথা থেকে দূর করবে কীভাবে? সে ক্ষেত্রে তোমার ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ককে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। একটি উপায় হলো, গানটি অন্যদের সামনে জোরে জোরে গাইতে পারো। সামাজিক কার্যকলাপ ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ককে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তবে এতে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হতে পারে!
আরেকটি উপায় হলো, আটকে যাওয়া গানটিকে অন্য কোনো কম পুনরাবৃত্তিমূলক গান দিয়ে প্রতিস্থাপন করা। অন্য কোনো গান মনে মনে গাইতে পারো। তাহলে আগের ওই গানের লাইন মন থেকে দূর হয়ে যাবে। আবার অ্যাটলাসিয়ান নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি ৪০ সেকেন্ডের একটি অডিও ট্র্যাক তৈরি করেছে, এই ইয়ারওয়ার্ম দূর করার জন্য। যদি কোনো উপায়েই কাজ না হয়, তাহলে শেষ পরামর্শ হলো, অনেক ধরনের গান শুনতে হবে। তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে ওই গানটিকেই ভালোবেসে ফেলতে পারো। এত চেষ্টা করেও যে গান মাথা থেকে সরানো যাচ্ছে না, ওটাকে সরানোর দরকারই-বা কী!
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট