ফুটবল নিয়ে যত অ্যানিমে
প্রতি মাসে ধৈর্য নিয়ে কিশোর আলোতে তোমাদের পাঠানো চিঠিপত্রগুলো আমি পড়ি। নানা অ্যানিমে সম্পর্কে জানার বা জানানোর আবদার নিয়ে তোমরা আসো। সেসব অনুরোধ সব সময় যে রাখতে পারি, তা নয়। মূলত এখানে লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দ একটু বেশি প্রাধান্য পায়। ভেবে দেখো, যা নিয়ে লিখছি, তা যদি নিজের পছন্দ না হয়ে থাকে, তবে লেখাও কিন্তু অতটা গ্রহণযোগ্য হয় না। তা ছাড়া যেসব অ্যানিমে সম্পর্কে তোমরা ইতিমধ্যেই জানো, সেগুলো নিয়ে বেশি বলার আগ্রহ পাই না। কারণ, প্রতিবছর শতাধিক অ্যানিমে আলোর মুখ দেখলেও সাধারণত গোটা দশেকের বেশি জনপ্রিয় হয় না; থেকে যায় অন্তরালে। তাই আমার আগ্রহ থাকে সেই সব অবহেলিত রত্নের সন্ধান তোমাদের বেশি দিতে। সেই লক্ষ্যে অ্যানিমে দেখা হয় প্রচুর, অধিকাংশই ভুলেও যেতে হয়। কারণ, জনপ্রিয় অ্যানিমেগুলোর যেমন জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে চমৎকার কিছু কারণ থাকে, তেমনি অন্তরালে থাকা অ্যানিমেগুলোর হারিয়ে যাওয়ার পেছনেও কিছু কিছু কারণ থাকে। তোমরা যারা দু-একটি অজনপ্রিয় অ্যানিমে দেখে বিরক্ত বা বিস্মৃত হয়েছ, তারা নিশ্চয়ই এসব কারণের টুকিটাকি ইতিমধ্যে জানো।
তোমাদের চিঠিপত্রে এযাবৎকালে যেসব অ্যানিমে নিয়ে রিভিউ করার অনুরোধ পেয়েছি, তার মধ্যে বোধকরি শীর্ষে থাকবে ব্লু–লক! অ্যানিমেটি ফুটবল–সংক্রান্ত। এমনিতে ক্রীড়াবিষয়ক অ্যানিমে আমার ভালো লাগে। তোমাদের ইতিপূর্বে হাজিমে নো ইপ্পো, মেজর-এর মতো অ্যানিমেগুলো নিয়ে জানিয়েছি। এ ছাড়া আরও একগাদা স্পোর্টস অ্যানিমে আছে, যা নিয়ে তোমাদের বলার আগ্রহ আছে, তবে এই কাতারে কোনো কালেই ব্লু-লক ছিল না।
ফুটবল জাপানের সর্বাধিক চর্চিত খেলা না হলেও যথেষ্ট জনপ্রিয়। তোমরা হয়তো ফুটবল বিশ্বকাপে জাপান দলের খেলা দেখেছ। জাপানের দর্শকদের পরিচ্ছন্নতাবোধ দেখে চমৎকৃত হয়েছ। অ্যানিমে নির্মাণে সংখ্যার বিচারে জাপানের জনপ্রিয়তম খেলা বেসবল। তবে ফুটবল নিয়েও প্রায়ই অ্যানিমে আসে। এর মধ্যে হুইসেল, হাংরি হার্ট ওয়াইল্ড স্ট্রাইকার, ব্লু-লক, ক্যাপ্টেন সুবাসা, ইনাজুমা ইলেভেন, জায়ান্ট কিলিং, আও আশি—অ্যানিমেগুলো আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। আরও কিছু দেখে থাকতে পারি, এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে যা স্পষ্ট মনে আছে, তাতে হাংরি হার্ট ওয়াইল্ড স্ট্রাইকার দেখে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হয়েছিলাম। অ্যানিমের নামেই স্ট্রাইকার, কিন্তু আসল খেলায় তার ভূমিকা অতটা কার্যকর নয়। সেই তুলনায় ব্লু-লক–এর স্ট্রাইকাররা একেকজন রত্ন। তারা একাই একটা খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। আর এই অ্যানিমের আসল উদ্দেশ্যও তা–ই, একজন সুদক্ষ স্ট্রাইকার তৈরি করা, যে স্বার্থপরের মতো বল ছিনিয়ে নিয়ে গোল করবে, দলকে জেতাবে।
আশা করি, তোমরা ফুটবল খেলাটি সম্পর্কে মোটামুটি জানো। প্রতি বিশ্বকাপে যে পরিমাণ উন্মাদনা হয়, তাতে জানাটাই স্বাভাবিক। এ খেলায় দুটি দলে ১১ জন করে মোট ২২ জন মাঠে একে অপরের গোলপোস্টে বল পাঠানোর লড়াই করে। সম্পূর্ণ মাঠকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দলের খেলোয়াড়েরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে থাকে। গোলপোস্টের একেবারে কাছে থাকে গোলকিপার, যে লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে, গুঁতা মেরে, এমনকি হাত দিয়ে ধরে হলেও বল থামাতে তৎপর। এ ছাড়া তাকে সাহায্য করার জন্য দু–তিনজন খেলোয়াড় কাছাকাছি থাকে, এদের বলে ডিফেন্ডার। যারা মাঝমাঠে খেলে তারা হচ্ছে মিডফিল্ডার, আর একেবারে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের কাছে যারা বল নিয়ে নিয়মিত প্রবেশ করার চেষ্টা করে, এরা হলো স্ট্রাইকার। ফুটবল খেলায় মাঠের প্রতিটি অঞ্চলই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সবাই মোটামুটি নিজের কাজটি সঠিকভাবে না করতে পারলে মাঠের এত বড় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। তবে দিন শেষে গোল করতে পারাটাই মূলকথা। কোনো এক দল প্রতিরক্ষায় শতভাগ দিল, মাঝমাঠেও বল তাদের পায়েই রইল; কিন্তু তারা প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে বল ঢোকাতে পারল না—তাহলে তাদের পুরো প্রচেষ্টাই বৃথা। আবার আরেক দল দেখা গেল পুরো খেলায় বল নিয়ন্ত্রণ করতেই পারল না, কিন্তু কোনো এক উপায়ে প্রতিপক্ষ থেকে একটি গোল বেশি করে ফেলল, তবে তারাই জিতে যাবে। ফলে ফুটবল খেলায় স্ট্রাইকারের ভূমিকা হয়ে যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের বিভিন্ন দিক থেকে সতীর্থদের পায়ে ছুঁয়ে বল তার কাছে এলে তার দায়িত্ব থাকে কত সফলভাবে প্রতিপক্ষকে পাশ কাটিয়ে বলটি একটি সফল গোলে পরিণত করবে। যে এ কাজ যত সফলভাবে করতে পারবে, সে তত ভালো স্ট্রাইকার।
এবার ফেরা যাক ব্লু-লক প্রসঙ্গে। গল্পের শুরু হয় একটি ফুটবল খেলা দিয়ে। গল্পের নায়ক ইসাগি, মোটামুটি ভালো খেলোয়াড়। সে দলগত আক্রমণে বিশ্বাসী। স্কুল ফুটবলে নিজের দলকে জাতীয় প্রতিযোগিতার ধাপে উত্তীর্ণ করতে মরিয়া। কিন্তু ম্যাচ নির্ধারণী একটা গোল নিজে করার ঝুঁকি না নিয়ে অপেক্ষাকৃত উপযুক্ত অবস্থানে থাকা সতীর্থ স্ট্রাইকারের কাছে ঠেলে দেয় সে। কিন্তু স্ট্রাইকার সহজ গোল করতে ব্যর্থ হয়। ফলে, হেরে যায় ইসাগির দল। পরাজিত সতীর্থদের ভিড়ে বোধশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ইসাগি। ভাবে, কেন নিজে গোলটা করতে গেল না সে? প্রশিক্ষকের শিক্ষা তার রক্তধারায় প্রবাহিত—ফুটবল একটি দলগত খেলা, সবাই মিলে একটি গোল সম্পূর্ণ করতে হয়, এখানে স্বার্থপরতার কোনো স্থান নেই। এই নীতি কি তবে ভুল? হয়তো নিজে চেষ্টা করলে গোলটা করতে পারত ইসাগি, তার স্বপ্নগুলো ভেঙে যেত না।
পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খেতে বসে বিষণ্ণ ইসাগি জানতে পারল, তার নামে চিঠি পাঠিয়েছে জাপানের ফুটবল সমিতি। চিঠি না বলে বরং আমন্ত্রণপত্র বলাই ভালো। নির্দিষ্টসংখ্যক নির্বাচিত ফুটবলারের মধ্যে সেও এখানে একজন।
পরদিন সে চলল চিঠির ডাকে। গিয়ে দেখে, ওর মতোই আরও ২৯৯ জনকে ডেকে এনেছে জাপানের ফুটবল সমিতি। অচেনা এক প্রশিক্ষক মঞ্চে উঠে জানাল, একটা বিশেষ প্রকল্পের অধীনে ওদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ব্লু-লক। এতে আগত ৩০০ জনের মধ্য থেকে ছেঁকে তুলে আনা হবে একজন দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকারকে। যে হবে বিশ্বমানের, সেরা। যার হাত ধরেই উঠে আসবে জাপানের বিশ্বকাপ শিরোপা। প্রশিক্ষক এগো জিনপাচি আরও জানায়, অনির্বাচিত খেলোয়াড়দের ছুড়ে ফেলা হবে জাপানের জাতীয় দলের বিবেচনা থেকে। তারা জাপানের হয়ে খেলার সুযোগ পাবে না।
অচেনা এক কোচের অদ্ভুত এই প্রস্তাব শুনে খেপে যায় খেলোয়াড়দের অনেকেই। কিন্তু ইসাগি এর ব্যতিক্রম। কোনো প্রশিক্ষকের মুখে সে এই প্রথম শুনল ভিন্ন কিছু। যেখানে একজন স্ট্রাইকারকে স্বার্থপরের মতো আক্রমণাত্মক হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে, দলের নিঃস্বার্থ অংশ হতে বলা হয়নি। ও বোঝে, নিজের ভেতরে পরিবর্তন ঘটিয়ে স্বপ্নকে স্পর্শ করতে হলে এই পথই বেছে নিতে হবে। তাই ছুটে যায় প্রশিক্ষক এগোর পথের দিকে।
এরপর আছে নানা লড়াই, শরীরচর্চা, কৌশল আয়ত্ত ও পরিবর্তন, বিশ্বাসঘাতকতা, আর পরিস্থিতির সঙ্গে ক্রমাগত খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা। এই যাত্রায় ইসাগির পরিচয় হয় বেশ কিছু প্রতিভাধর খেলোয়াড়ের সঙ্গে। এদের মধ্যে বাচিরা, বারোও, চিগিরি, রিন, নাগি, শিদোও প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ব্লু-লক–এর সবচেয়ে বড় শক্তি এর অ্যানিমেশন। স্টুডিও এইট বিট খেলার গতি এবং উত্তেজনার আঙ্গিকগুলো ভালো ধরতে পেরেছে। প্রতিটি আক্রমণে যথাযথ এফেক্ট প্রয়োগ করে সেগুলো করে তুলেছে বিশেষ। খেলোয়াড়দের খেলার ধরনের পার্থক্য, তাদের চলনের তফাত, দেখে তোমাদের ভালো লাগবে। তার সঙ্গে জুড়ে বসেছে উপযুক্ত সাউন্ড এফেক্ট। ফলে লড়াইয়ের দৃশ্যগুলো হয়ে উঠেছে খাঁটি। এ ছাড়া অতি অবশ্যই আছে বিভিন্ন চরিত্রের অতীত পটভূমির গল্প। মূলত তোমরা জানতে পারবে খেলোয়াড়দের হতাশা, আকাঙ্ক্ষা, আগ্রহ কেন কীভাবে তাদের পরিচালিত করেছে ব্লু-লকের মঞ্চে নিজেদের প্রমাণের যুদ্ধে।
তবে ব্লু-লকের কাহিনিতে গভীরতা খুঁজতে গেলে তোমরা কিঞ্চিৎ হতাশ হতে পারো। স্ট্রাইকার হওয়ার বাইরে এর লক্ষ্য বেশ সীমিত। তা ছাড়া এখানে নিয়মিত বন্ধুত্ব ভাঙার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লেখক মানেউকি কানেশিরো বোধ হয় বোঝাতে চেয়েছেন, ফুটবলের এই নির্মম জগতে তুমি যত বেশি পেশাদার, ক্ষুধার্ত, আর অনিবার্য হবে, ততই তোমার সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি। এখানে আবেগের দাম সামান্যই, যদি না তুমি জিততে পারো। তোমার আজকের উন্নতি বা কৌশল ভবিষ্যতে কাজ না–ও করতে পারে। কারণ, নিয়মিত বিশ্লেষণ আর পর্যবেক্ষণের ভেতর দিয়ে একজন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে খোলা বইয়ের মতো পড়ে ফেলে আধুনিক দলগুলো। আর নিত্যনতুনভাবে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করে জোরালো আক্রমণ না চালাতে পারলে একসময় ছিটকে যেতে হয় সাফল্যের ধারা থেকে। সামান্য দুর্বলতায়ও জয় ফসকে যায়।
এমন মাঙ্গার সংখ্যাই সম্ভবত বেশি যেখানে লেখক এবং আঁকিয়ে একজনই। তবে ব্লু-লক–এর ছবি লেখক নিজে আঁকেননি, এঁকেছেন ইউস্কে নমুরা। আঁকিয়ে হিসেবে তাঁর পেশার শুরুটা হয় অ্যাটাক অন টাইটানখ্যাত মাঙ্গাকা হাজিমে ইসায়ামা’র সহকারী হিসেবে। ব্লু-লক–এর বাইরে ডলি কিল কিল শিরোনামের একটা মাঙ্গাও এঁকেছিলেন, তবে তাঁর নিজস্ব কাজগুলোর মধ্যে ব্লু-লকই সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এযাবৎ ব্লু-লক মাঙ্গার ৩৩টি ভলিউম মুক্তি পেয়েছে, তবে কাহিনি এখনো চলমান। দুটী সিজনে অ্যানিমে হয়েছে মোট ৩৮ পর্ব। তবে তাতে কাহিনির সবটুকু রূপান্তর করা হয়নি এখনো।
এই অ্যানিমেতে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র হচ্ছে বাচিরা। ইসাগি প্রধান চরিত্র হলেও তার ভেতরে বৈচিত্র্য বিশেষ লক্ষণীয় নয়। সে শুরু থেকে দ্বিধায় ভোগে, আর প্রতি ধাপেই উদ্দেশ্য হাতড়ে বেড়ায়; খেলার অধিকাংশ সময় তাকে বিচলিত থাকতে দেখা যায়। অন্যদিকে বাচিরা খেলা উপভোগ করে। সে অনুভব করতে পারে সতীর্থদের সুপ্ত প্রতিভা; প্রতিপক্ষের আগ্রাসন তাকে বিচলিত করার পরিবর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুগ্ধ করে, উদ্বুদ্ধ করে আরও ভালো খেলতে। এই ধারাবাহিকের সবচেয়ে প্রতিভাধর খেলোয়াড় নাগি। সে ফুটবল খেলা শুরু করেছে বেশি দিন হয়নি, তবে নিয়মিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাড়ছে তার দক্ষতা। এ ছাড়া তোমাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে চিগিরির গল্প, যেখানে শারীরিক দুর্যোগের শঙ্কা কাটিয়ে সে নিজেকে ঢেলে দেয় লড়াইয়ের মঞ্চে। আবার মিকাগে রিওর মতো খেলোয়াড়ও তোমরা পাবে, যার খেলাধুলায় আত্মনিয়োগের কারণ ও পদ্ধতি প্রায়ই বদলে যায়।
গল্পের সবচেয়ে প্রতিভাধর খেলোয়াড় ইতোশি সায়ে-কে মাঝেমধ্যে দেখা যায় পর্দায়। সে–ও মূলত খুঁজছে এমন কিছু খেলোয়াড়কে, যাদের সঙ্গে একত্রে খেলাধুলায় নিজের হতাশা বাড়বে না। আবার দেখবে শিদোওকে, যে প্রতিভাধর হওয়া সত্ত্বেও ভীষণ বেপরোয়া। মিলেমিশে খেলার সামর্থ্য চর্চায় সে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়।
এযাবৎ ব্লু-লক মাঙ্গার ৩৩টি ভলিউম মুক্তি পেয়েছে, তবে কাহিনি এখনো চলমান। দুটী সিজনে অ্যানিমে হয়েছে মোট ৩৮ পর্ব। তবে তাতে কাহিনির সবটুকু রূপান্তর করা হয়নি এখনো। ফলে ভবিষ্যতে ব্লু-লক–এর আরও নতুন সিজন তোমরা আশা করতে পারো।
প্রসঙ্গত, আরও দুটো বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো। প্রথমত, ব্লু-লকের প্রথম সিজনের এক জায়গায় শিরোপা না পাওয়া খেলোয়াড়দের ভিড়ে মেসির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ, গল্পের এই অধ্যায় যখন লেখা বা অ্যানিমেতে রূপান্তর করা হয়েছিল, তখনো আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শিরোপা হাতে পায়নি। ফলে একে তথ্যের ভুল হিসেবে না ভাবাই শ্রেয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে জাপান ফুটবল দলটির জার্সি ডিজাইন তৈরিতে যাঁরা সাহায্য করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ব্লু-লক মাঙ্গা আঁকিয়ে ইউস্কে নমুরা।
তোমরা যারা নতুন খেলাধুলাসংক্রান্ত অ্যানিমেতে আগ্রহী হচ্ছি, ব্লু-লক হয়তো তাদের ভালো লাগতে পারে। তবে অ্যানিমেটি দেখার সময় কিছু বিষয় অবশ্যই মনে রেখো। এই ধারাবাহিকে ফুটবল খেলা যে আঙ্গিকে ধরা হয়েছে তা শতভাগ যথার্থ নয়। যেমন ধরো, ফুটবল খেলায় ক্রমাগত স্বার্থপর হওয়া যৌক্তিক নয়। হ্যাঁ, গোল করতে একজন স্ট্রাইকার অবশ্যই যাবে, কিন্তু তা যায় অন্যদের সাহায্য পেয়েই। কখনো কখনো গোল করার জন্য ব্যক্তিগত লোভ ত্যাগ করে দলের সঠিক খেলোয়াড়কে সুযোগ করে দিতে হয় বৃহত্তর স্বার্থে। নিয়মিত ফুটবল যারা দেখো, তারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবে এ সত্য। মেসি, লুকা মদ্রিচ, জিদান, রোনালদিনিহো, ফিগোদের মতো অগণিত খেলোয়াড় নিজে যেমন গোল করেছেন, তেমন করিয়েছেনও অনেক। তাই তাঁরা নিজেকে এবং নিজের দলকে নিয়ে যেতে পেরেছেন অনন্য উচ্চতায়। ব্লু-লক-এ একজন স্ট্রাইকারকে চূড়ান্ত স্বার্থপর হওয়ার আপাত প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও খেয়াল করে দেখবে, নানা সময়ে তাদের একত্র হতে হয়েছে, একে অন্যের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রেখে বল দিতে হয়েছে সহখেলোয়াড়দের পায়ে। ফলে অ্যানিমে দেখে তোমরা কেবল একটা আঙ্গিককেই সঠিক হিসেবে ধরে নিয়ো না, বরং নিজেদের বিচার-বিবেচনার দরজাটা খোলা রেখো। গোলকিপার, ডিফেন্ডার, মিডফিল্ডার—তাঁরা সবাই যে স্ট্রাইকারের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নন, তা তোমরা টেলিভিশনে টুকিটাকি খেলা দেখলেই দিব্যি বুঝতে পারবে। আর সুযোগ পেলে ফুটবলের বাইরে গিয়েও কিছু স্পোর্টস অ্যানিমে দেখে ফেলো। হিকারু নো গো, ইনিশিয়াল ডি, হাইকিউ, স্লাম ডাঙ্ক, ওয়ান আউটস, প্রিন্স অব টেনিস-এর মতো অ্যানিমেগুলোও তোমাদের ভালো লাগবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।