গুগল জিরো কি সর্বনাশের শুরু
অনেক দিন ধরেই একটি কথা ছিল খুব পরিচিত। গুগলে প্রথম পাতায় জায়গা পেলে কাজ বুঝি হয়ে গেল। ওয়েবসাইটে ভিজিটর আসত, বিজ্ঞাপন চলত, ব্যবসা বাড়ত। কিন্তু সেই সময় যেন বদলে যাচ্ছে। এখন অনেকে বলছে গুগল জিরো যুগ শুরু হয়েছে। মানে গুগল নিজেই ব্যবহারকারীকে উত্তর দিয়ে দিচ্ছে, তাকে আর বাইরে পাঠানোর দরকার হচ্ছে না। বিশেষ করে এআই ওভারভিউস বা এআই সারাংশ ফিচারের পর এটি আরও স্পষ্ট।
আগে মানুষ প্রশ্ন করত, গুগল দেখাত বহু লিংক। ব্যবহারকারী লিংক খুলে খবরের সাইটে যেত। এখন অনেক প্রশ্নের উত্তর গুগল সরাসরি দেখিয়ে দেয়। ফলে ক্লিক কমছে, আর অনেক প্রকাশকের ট্রাফিকও কমে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও পড়েও যাচ্ছে।
গুগল জিরো বলতে আসলে কী বোঝায়
ভার্জ পত্রিকার নিলয় প্যাটেল ২০২৪ সালে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। যখন সার্চ ইঞ্জিন শুধু লিংক দেখায় না, প্রশ্নের উত্তরও দেয়, তখন তাকে বলা হয় উত্তর ইঞ্জিন। এআই ওভারভিউস সেই পথেই এগোচ্ছে। সংক্ষেপে ব্যাখ্যা দেয়, অনেক সময় এমনভাবে যে ব্যবহারকারীর আর অন্য লিংক খোলার দরকার পড়ে না। ফলে প্রকাশকের সাইটে মানুষ কম ঢোকে।
আগে কি এমন হয়নি
অনেকে ভাবতে পারেন, ব্যাপারটা কি অতিরঞ্জিত। কিন্তু তথ্য বলছে বিপরীত কথা। এআই ওভারভিউস চালুর পর খবর সম্পর্কিত সার্চের প্রায় সত্তর ভাগেই ব্যবহারকারী কোন লিংকে ক্লিক করে না। আগের হার ছিল ছাপ্পান্ন ভাগ। বিজনেস ইনসাইডার কর্মী ছাঁটাই করেছে এবং তাদের ওয়েব ট্রাফিক নাকি অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। বিজ্ঞাপন বাজারও বদলাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৯ সালের মধ্যে বিজ্ঞাপনদাতারা সার্চ বিজ্ঞাপনের একটি বড় অংশ এআই চালিত সার্চে সরিয়ে নেবে বলে ধারনা।
গুগল কী বলছে
গুগলের দাবি, এআই ওভারভিউস ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ভালো করে। দ্রুত উত্তর পাওয়া যায়। কোম্পানি বলেছিল প্রকাশকদেরও ট্রাফিক বাড়বে। কিন্তু ব্যবহারকারীরা যখন সারাংশ পড়েই সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে আসে, তখন প্রকাশকদের সেই সান্ত্বনা খুব কার্যকর শোনায় না।
একজন ডিজিটাল কৌশল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, গুগল যদি উত্তর দিয়ে কাজ শেষ করে দেয়, তাহলে খোলা ওয়েব সংকুচিত হয়। প্রকাশকরা হারায় দর্শক, ব্র্যান্ড হারায় পরিচিতি, আর বিপণনকারীরা হারায় প্রভাব।
কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ
গুগল সার্চ এখনো যুক্তরাষ্ট্রে সার্চ বাজারের সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে আছে। যদি গুগল পথ দেখানোর পরিবর্তে গন্তব্য হয়ে ওঠে, তাহলে প্রকাশনা ও ইকমার্স দুই ক্ষেত্রেই বড় চাপ তৈরি হয়। প্রকাশকরা বিজ্ঞাপন, সাবস্ক্রিপশন, অ্যাফিলিয়েট আয়ে ক্ষতি দেখতে পায়। ব্র্যান্ডগুলো বিনামূল্যের দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় বিজ্ঞাপনে টাকা খরচ না করে উপায় পায় না।
কারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে
বড় সাধারণ কন্টেন্ট প্রকাশকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষায়িত জ্ঞান বা নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রকাশকরা কিছুটা সুবিধায় থাকতে পারে। যেসব ব্র্যান্ড সরাসরি ব্যবহারকারীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছে, তারাও তুলনামূলক নিরাপদ। কিন্তু যারা মূলত সার্চ ভিজিটরের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, তারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে।
অভিযোজন কি সম্ভব
সম্ভব, তবে সহজ নয়। কেউ নিউজলেটার, নিজস্ব দর্শক গড়ে তোলা, ব্র্যান্ডেড কন্টেন্টের দিকে ঝুঁকছে। কেউ নির্দিষ্ট বিষয়ের গভীর কন্টেন্ট বানাচ্ছে যাতে অথরিটি তৈরি হয়। কিন্তু তবুও আগের মতো ট্রাফিক পাওয়া কঠিন। অনেক মার্কেটার টাকা স্থানান্তর করছে ইউটিউব টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংও বাড়ছে।
পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো সম্ভব হলেও এতে খরচ বাড়ে, অনিশ্চয়তাও থাকে।
তাহলে কি এটিই নতুন নিয়ম
যদি ব্যবহারকারীর অভ্যাস না বদলায়, বা বড় ধরনের আইনগত পরিবর্তন না আসে, তবে এই বাস্তবতা দীর্ঘদিন থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতে ব্র্যান্ডগুলোকে শুধু সার্চ ইঞ্জিনে নয়, গোটা অনলাইন পরিবেশে নিজেদের ছাপ রাখতে হবে। শুধু ইনডেক্স হলে হবে না, আলোচনায় থাকতে হবে।
সূত্র: ডিজিডে ডটকম