কোন রঙের কলা খাবে, কোন রঙে কী উপকার
কলা সবাই খাই—কখনো সবুজ, কখনো হলুদ, কখনো আবার দাগ দাগ বাদামি; কিন্তু জানো, কলার রং বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় তার খাদ্যগুণ? রং দেখে বোঝা যায়, ওই কলার ভেতরে কোন পুষ্টিগুণ বেশি আছে।
কাঁচা থেকে কলা পাকা হওয়ার রংকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। তবে পুষ্টির জন্য চারটি ব্যবহারিক পর্যায় বা রং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলো—
১. সবুজ: কাঁচা
২. সবুজ-হলুদ: আধা পাকা
৩. পুরো হলুদ: পাকা
৪. হলুদে বাদামি দাগ: বেশি পাকা
কলা যখন এই ধাপগুলো অতিক্রম করে, তখন এর স্টার্চ ধীরে ধীরে ভেঙে চিনিতে পরিণত হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়ে ও ফাইবারের মাত্রা কমে যায়। তাই প্রতিটি রঙের কলার আলাদা আলাদা সুবিধা আছে।
১. সবুজ কলা: রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে ভালো
সবুজ কলা শক্ত ও কম–মিষ্টির হয়। এতে থাকে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ, যা সাধারণ শর্করার মতো দ্রুত হজম হয় না। এ ধরনের কলাকে অপরিপক্ব বা কাঁচা কলা বলা হয়।
এই কলার রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ ক্ষুদ্রান্ত্রে হজম হয় না। এই কলা বেশি সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে খাবার জোগায়, অর্থাৎ হজম ভালো হয়।
সবুজ কলা বিশেষভাবে পরিপাক স্বাস্থ্যের জন্য এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
২. সবুজ-হলুদ কলা: সবচেয়ে বেশি পটাশিয়াম
এ সময় কলা আধা পাকা থাকে—হালকা মিষ্টি; কিন্তু পুরো পাকা নয়।
পুষ্টির দিক থেকে এই কলা ‘মাঝামাঝি’ পর্যায়ে পড়ে। এই কলার রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ কিছুটা কমে যায়, তাই এগুলো একটু মিষ্টি লাগে এবং হজম করাও সহজ হয়। তবে এগুলোতে সম্পূর্ণ পাকা কলার তুলনায় বেশি আঁশ থাকে।
এই কলায় পটাশিয়াম ও আয়রন সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকে (কলার জাতভেদে তা আলাদা হতে পারে)।
যারা মিষ্টি খুব বেশি পছন্দ করে না; কিন্তু কিছুটা মিষ্টি চাই, তাদের জন্য এই কলা দারুণ।
৩. পুরো হলুদ কলা: দ্রুত শক্তির উৎস
এ পর্যায়ে কলা পেকে যায়। এই কলার বেশির ভাগ স্টার্চ ভেঙে গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সুক্রোজে পরিণত হয়ে মিষ্টি হয়ে ওঠে। তাই পাকা কলা দ্রুত শক্তি পাওয়ার একটি অনন্য উৎস।
পাকা কলায় আঁশের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়, তবে মাঝারি পরিমাণ আঁশ তখনো থাকে। এ কারণে এগুলো কাঁচা কলার তুলনায় সহজে হজম হয়।
পাকা কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়তে থাকে, যা তোমার শরীরের ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
৪. বাদামি দাগওয়ালা কলা: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের শিখরে
কলা বেশি পেকে গেলে তার ওপর বাদামি দাগ দেখা দেয়। এই কলা অনেক বেশি মিস্টি ও নরম হয়।
এই কলার অধিকাংশ রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ চিনি হয়ে গেছে ও আঁশের পরিমাণ কমে গেছে।
তবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনলিক, ক্যারোটিনয়েড এই কলায় থাকে সবচেয়ে বেশি।
এই কলা স্মুদি, কেক বা পিঠায় দারুণ লাগে। তবে রক্তে শর্করা বাড়ার ঝুঁকি যাদের আছে, তাদের জন্য কম উপযোগী।