শুভ জন্মদিন, ডেভিড অ্যাটেনবরো!
আজ কিংবদন্তি ভ্রমণকারী ও প্রকৃতিবিদ স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরোর ৯৯তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন, ডেভিড অ্যাটেনবরো! তিনি ১৯২৬ সালের ৮ মে ইংল্যান্ডের আইলওয়ার্থে জন্মগ্রহণ করেন। খুব কম মানুষই আছেন, যাঁরা স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরোকে চেনেন না বা তাঁর কাজ সম্পর্কে জানেন না।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে যত প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে, নিঃসন্দেহে এর মধ্যে সেরাদের অন্যতম বিবিসির ‘প্ল্যানেট আর্থ’। এটি প্রকৃতির বিস্ময়কর বাস্তবতাকে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছে। এর ধারাবর্ণনা করেছেন স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো। লাইফ অন আর্থ, দ্য প্রাইভেট লাইফ অব প্ল্যান্টস এবং দ্য ব্লু প্ল্যানেট-এর মতো প্রাকৃতিক ইতিহাসনির্ভর অনুষ্ঠানগুলোও তিনি উপস্থাপনা করেছেন।
নিজের গম্ভীর ও প্রশান্ত কণ্ঠ দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। তাঁর বর্ণনার ধরন যেন প্রকৃতির নিজস্ব ভাষা। তাঁর সেসব প্রামাণ্যচিত্র ৭০ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি, তাঁর নামে প্রায় ৫০টির বেশি প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। এমনকি একটি প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে তাঁর একটি ডকুমেন্টারি সিরিজের নাম অনুসারে। দ্য প্রাইভেট লাইফ অব প্ল্যান্টস নির্মাণকালে তিনি বিশ্বের বৃহত্তম ফুল অ্যামোরফোফালাস টাইটানাম-এর সন্ধান পান। তিনি এই কঠিন বৈজ্ঞানিক নাম বদলে দেন ‘টাইটান অরাম’। অনেক অভিযানে গিয়ে তিনি এমন সব উপজাতির সন্ধান পেয়েছেন, যাদের সম্পর্কে আগে কেউই জানত না।
ডেভিড অ্যাটেনবরোর অভিযানগুলো রোমাঞ্চে ভরা। প্রকৃতির বিস্ময়ে ভরপুর, যেন রূপকথার ভ্রমণকাহিনি। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে প্রায় এক শ বছর কাটানোর পর আমি এখন বুঝতে পারছি, এই গ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভূমি নয়, সাগর।’
ডেভিড অ্যাটেনবরোর ৯৯তম জন্মদিনে বিশ্বের বহু খ্যাতিমান ব্যক্তি তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কে কী বললেন, একনজরে দেখে নাও।
বারাক ওবামা
৪৪তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডেভিডের অনুষ্ঠানগুলো দেখে আমি জেনেছি, আমাদের সব বাস্তুতন্ত্র একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। কেবল একটি দেশ সঠিক পদক্ষেপ নিলেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে এটা রক্ষা করতে।
অরুন্ধতী রায়
বুকারজয়ী ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও লেখক
তিনি দেখিয়েছেন এই গ্রহের প্রতিটি প্রাণী কীভাবে একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। বিচ্ছিন্নভাবে আমরা কিছুই নই। আমরা কোনো কিছুর মালিক নই, কিছুই নিয়ন্ত্রণ করি না—সম্ভবত সেই ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ছাড়া।
মরগ্যান ফ্রিম্যান
অভিনেতা
তাঁর গল্প বলার জাদুতে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছি এবং আমাদের এই ভাগাভাগির পৃথিবীর সৌন্দর্য ও ভঙ্গুরতার কথা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। ডেভিড অ্যাটেনবরো আমার অন্যতম প্রিয় বর্ণনাকারী, যিনি আমাদের গ্রহের বিস্ময়গুলোকে এমন জীবন্তভাবে তুলে ধরেন, যা একই সঙ্গে অনুপ্রেরণামূলক ও অবিস্মরণীয়।
ডগ অ্যান্ডারসন
ওয়াইল্ডলাইফ ক্যামেরাম্যান
গত ৩০ বছর আমি ওয়াইল্ডলাইফ ক্যামেরাম্যান হিসেবে সাগরতলের গভীর, নীরব ও অন্ধকারে কাজ করেছি। প্রতিটি দৃশ্যের ক্যামেরার পেছন থেকে আমার মনে প্রায়ই ডেভিড অ্যাটেনবরোর কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়—যা প্রতিটি মুহূর্তকে অর্থবহ করে তোলে। যখন সমুদ্র রুদ্রমূর্তি ধারণ করে, যখন মনে সংশয় জাগে, তখনো আমি যেন তাঁকে শান্ত ও স্পষ্ট স্বরে শুনতে পাই: ‘ধৈর্য ধরো, ডগ। আস্থা রাখো। এই যাত্রার ওপর বিশ্বাস রাখো।’
মেরি রবিনসন
সাবেক আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকার কমিশনার এবং জলবায়ু দূত
আমার পরিবার ডেভিড অ্যাটেনবরোর অনুষ্ঠানগুলো গভীর আগ্রহ ও বিস্ময়ের সঙ্গে দেখত। ধীরে ধীরে, যখন আমি আমার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সেগুলো দেখতাম, তখন একটি প্রশ্ন আমাকে অস্থির করে তোলে। কেন তিনি জলবায়ু সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করছেন না কোথাও? পরবর্তী সময়ে, যখন তিনি সমস্যাগুলো নিয়ে তাঁর অবস্থান জানান এবং এই বিষয়ে কথা বলা শুরু করলেন, তখন সত্যিই এক ইতিবাচক পরিবর্তন এল।
বিলি আইলিশ
সংগীতশিল্পী
আমাদের পৃথিবী ও প্রাণিজগতের প্রতি ডেভিড অ্যাটেনবরোর গভীর ভালোবাসা এবং জ্ঞান আমাদের সবার মধ্যে শিশুসুলভ কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। তিনি এক জীবন্ত সম্পদ।
মাইক গানটন
ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, বিবিসি ন্যাচারাল হিস্ট্রি ইউনিট
পঁয়ত্রিশ বছর আগে, আমরা একটি বিশেষ সিরিজে কাজ করছিলাম, যার পর ডেভিড আমাকে বলেছিলেন, তিনি অবসর নিতে চলেছেন। আজ, যখন তাঁর ৯৯ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং তিনি এখনো সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ও কাজটি উপভোগ করছেন। তাঁর থেকে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়েছি, দীর্ঘ ও আনন্দময় জীবনের রহস্য সম্ভবত অবসরে না যাওয়া।
মিয়া মোটলি
বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী
তাঁর কণ্ঠস্বর আমাদের সবার বিবেককে নাড়া দিয়েছে এবং প্রজন্মকে আমাদের প্রাকৃতিক জগৎ রক্ষার বিস্ময় দেখিয়েছে, কতটা জরুরি তার প্রতি আগ্রহ জাগিয়েছে।
ড. পাউলা কাহুম্বু
সিইও, ওয়াইল্ডলাইফ ডাইরেক্ট
তাঁর মাধ্যমে আমি গল্প বলার শক্তি আবিষ্কার করেছি, যা পুরো মানবজাতিকে প্রকৃতিকে ভালোবাসা, যত্ন এবং রক্ষা করার জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। তিনি আমাকে আফ্রিকানদের চোখ দিয়ে আফ্রিকান গল্প বলতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
মাইকেল প্যালিন
উপস্থাপক ও কৌতুকাভিনেতা
মন্টি পাইথন যখন প্রথম সম্প্রচারিত হয়, বিবিসি এটিকে রাতের শেষ ভাগে প্রচার করার চেষ্টা করেছিল। সম্ভবত ভেবেছিল কেউ সেভাবে দেখবে না। বিবিসির সেই সময়ে অনুষ্ঠান পরিচালক ছিলেন ডেভিড অ্যাটেনবরো, যিনি আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলেন। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে যত বেশি এটি প্রচার বন্ধ করার চেষ্টা করবে, ভক্তের সংখ্যা ততই বাড়বে। তাঁর সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল। বহু বছর পর, ডেভিড এখন টেলিভিশনের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে, যখন কানাডিয়ান দূতাবাসে একটি পুরস্কার গ্রহণ করতে আসেন তিনি। তিনি এমনভাবে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করেন, যেন জায়গাটি তাঁর খুব ভালোমতো চেনা। আমি তাঁকে বললাম যে এত সহজে, কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই আসতে পারার জন্য ধন্যবাদ। তিনি হেসে বললেন, ‘ওহ, আসলে আমি তো গতকাল ভুল করে এখানে চলে এসেছিলাম।’
আন্তোনিও গুতেরেস
জাতিসংঘের মহাসচিব
ডেভিড একবার বলেছিলেন, ‘যদি আমরা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করি, তবে আমাদের গ্রহকে অস্থিতিশীল করার ক্ষমতা আমাদের আছে। তবে হ্যাঁ, সম্মিলিতভাবে কাজ করলে একে রক্ষা করার শক্তিও আমরা রাখি।’ তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের নেতাদের জানাতে হবে—আর নয়। মানুষ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নিন।