ইরানের তারা নামের শিশুটি নেচে নেচে গিয়েছিল ডেন্টিস্টের কাছে, এখন সে আকাশের তারা
ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নিজ বাসায় ইরানের শিশু জিমন্যাস্ট তারা হাজিমিরির (বয়স ৮) ফুলপরির মতোন হাসি নিভে গেছে।
আট বছর বয়সী তারা হাজিমিরি জিমন্যাস্টিক্সের পাশাপাশি নাচতে ভালোবাসত। দাঁতের ডাক্তারের চেম্বারে লাল জামা পরে নাচের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। গত ১৫ জুন, শনিবার ২০২৫ তেহরানের প্যাট্রিস লুমুম্বা স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ভয়াবহ হামলায় তারা হাজিমিরিসহ ৬১ জন বাসিন্দা নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের আবাসিক এলাকায় আঘাত হানলে তারার মৃত্যু হয়।
তারার মৃত্যুতে এশিয়ান জিমন্যাস্টিক্স ইউনিয়ন গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, তারা হাজিমিরি কেবল একজন জিমন্যাস্ট ছিল না, সে ছিল আশা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। তার মৃত্যু পরিবার ও ইরানি জিমন্যাস্টিক্স সম্প্রদায়ের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
ইসরায়েল বারবার দাবি করছে, তারা ইরানের বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে না। কিন্তু চলমান সহিংসতায় শতশত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষাবাহিনী বলেছে, ইরানের ওপর হামলা সামরিক কমান্ডার, সরকারি কর্মকর্তা এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ড। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলো বহুতল ভবন ও অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সেও আঘাত হেনেছে, যেখানে বেসামরিক নাগরিকরাও বাস করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. হোসেন কেরমানপুর বলেছেন, ‘৯০ শতাংশ হতাহত বেসামরিক নাগরিক, সামরিক নন।’
এই আহত বা নিহত মানুষগুলো শুধু সংখ্যা নয়। প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে এক একজন মানুষ, একটি করে গল্প। হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টদের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এ পর্যন্ত ৬৩৯ জন নিহত এবং ১৩২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। বাকিদের পরিচয় সংস্থাটি প্রকাশ করেনি। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছেন। তারা হাজিমিরির মতো আট বছর বয়সী শিশুও এই হতাহতদের তালিকায় রয়েছে।
তেহরানে ইসরায়েলি হামলার কারণে জীবনযাত্রা পুরোপুরি বদলে গেছে। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্রমাগত শব্দ, বিস্ফোরণের বিকট গর্জন এবং অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সাইরেনের আওয়াজ দিয়ে ভরে গেছে এই শহর।
তেহরানের বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তল্লাশি চালাচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুর ধুলায় ঢাকা দেহ উঁকি দিচ্ছে। তেহরানের হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগগুলো রোগীতে ভরে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৬ জুন, সোমবার সব চিকিৎসাকর্মীর ছুটি বাতিল করেছে।
তারা হাজিমিরির মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইসরায়েলের ইরানের ভূখণ্ডে গত ১৪ জুন, শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলার ফলে এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে। এসব হামলায় যারা আহত বা নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সূত্র: তেহরান টাইমস ও নিউইয়র্ক টাইমস