সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বিমানে কী হয়েছিল, প্রবল ঝাঁকুনির কারণ কী

২১ মে মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের এসকিউ ৩২১ ফ্লাইটটির ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমান মাঝ আকাশে প্রবল ঝাঁকুনির কবলে পড়ে। এই তীব্র ঝাঁকুনিতে একজন যাত্রী নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হন। বিমানের ভেতরটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। নিহত যাত্রী ছিলেন ৭৩ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক জিওফ কিচেন। তিনি মূলত হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। বিমানটি জরুরি অবতরণ করে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে।

জরুরি অবতরণের পর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিমানটি বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেছে। বিমানটি লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছিল। এতে মোট ২১১ জন যাত্রী ও ১৮ জন ক্রু ছিলেন। অনেক যাত্রী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান।

বিমানের যাত্রী ২৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী জাফরান আজমির জানান, ‘বিমানটি হঠাৎ করে মনে হলো নিচের দিকে পড়ছে। যাঁরা সিটবেল্ট বাঁধেননি, তাঁরা সজোরে গিয়ে ওভারহেড ব্যাগেজ কেবিনের সিলিংয়ের সঙ্গে জোরে ধাক্কা খান। এটি এতটাই জোরে হয়েছিল যে কেবিনের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। চারপাশ থেকে সবাই চিৎকার দেওয়া শুরু করেন।’

প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, ঝাঁকুনির কারণ তীব্র বাতাস। তবে ঘটনার সঠিক কারণ নির্ধারণের জন্য সিঙ্গাপুরের বিমান কর্তৃপক্ষ একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। ফ্লাইটরাডার ২৪-এর ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফ্লাইটটি ৩৭ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ছিল, যা বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ওড়ার গড় উচ্চতার সীমার মধ্যে।

বিমানটি যখন সবে বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে সিঙ্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল, ঠিক তখন বিমানটি যে উচ্চতায় (ক্রুজিং অল্টিটিউড) উড়ছিল, সেখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে হঠাৎ করে ৬ হাজার ফুট বা ১ হাজার ৮০০ মিটারে নেমে আসে। বিমানটি এক থেকে দেড় মিনিট ধরে ঝাঁকুনি দেয়। এ কারণে বিমানটিতে এত তীব্র ঝাঁকুনি হয়।

সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক কিত্তিপং কিত্তিকাচর্ন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘কেবিন ক্রুরা যখন যাত্রীদের নাশতার খাবার সরবরাহ করছিলেন, তখন বিমানটি তীব্র বাতাসের মধ্যে (এয়ার পকেট) পড়ে।’

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস একটি বিবৃতিতে নিহত যাত্রীর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। বিমান সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে তারা আহত যাত্রীদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য থাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস প্রয়োজনে আহত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সহায়তা প্রদানের জন্য একটি দল ব্যাংককে পাঠাচ্ছে। এদিকে থাই সরকার সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি দল পাঠিয়েছে। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস এ দুর্ঘটনার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছে।

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ান ও আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের পাইলট, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত পরিচালক স্টিভ কর্নেল বলেছেন, ‘বিমানে এই ধরনের ঝাঁকুনি অত্যন্ত বিরল। আমি আমার কর্মজীবনের ১৫ হাজার ঘণ্টার উড্ডয়নের অভিজ্ঞতায় মাত্র একবার এই ধরনের মারাত্মক ঝাঁকির সম্মুখীন হয়েছিলাম।’

মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ওড়ার সময় বিমানে ঝাঁকুনি হওয়া সাধারণ ঘটনা। এয়ার টার্বুলেন্স বা বাতাসের অস্থিরতা হওয়ার কারণ বাতাসের অস্বাভাবিক গতি এবং চাপের পরিবর্তন, যা বিমানে ঝাঁকুনি, কাঁপুনি বা এমনকি হঠাৎ ওপরে-নিচে নড়াচড়ার কারণ হতে পারে। ঠান্ডা ও গরম বাতাসের মিশ্রণ, জেট স্ট্রিম এবং আবহাওয়ার অন্যান্য পরিবর্তন টার্বুলেন্সের কারণ হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা মেঘহীন আকাশে মাঝেমধ্যেই জেট স্ট্রিমের কাছাকাছি অঞ্চলে ঘটে। এটি শনাক্ত করা কঠিন এবং এর পূর্বাভাস দেওয়াও কঠিন। তবে কিছু ক্ষেত্রে পরিষ্কার আবহাওয়ায়ও এমন ঝাঁকুনি দেখা যায়। এই ধরনের ঝাঁকুনি বিমানের রাডারে দেখা যায় না। বিমানে ঝাঁকুনিতে আহত হওয়ার ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল। লাখ লাখ ফ্লাইটের মধ্যে এমন ঘটনা অনেক কম সংখ্যায় ঘটে। তবে যখন ঝাঁকুনি হয়, তখন তা যাত্রীদের জন্য ভয়ানক হতে পারে। এমনই দুর্ভাগ্যের কবলে পড়েছিল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের এসকিউ ৩২১ ফ্লাইটটি।

সূত্র: এবিসি নিউজ, বিবিসি

আরও পড়ুন