ঘোড়ার চোখ মুখের সামনে না থেকে দুপাশে থাকে কেন

ঘোড়া মাথা না ঘুড়িয়ে দেখতে পারে ৩৫০ ডিগ্রিছবি: রয়টার্স

ঘোড়া নিশ্চয়ই দেখেছ। কিন্তু কখনো খেয়াল করেছ, ঘোড়ার চোখে আমাদের মতো মুখের ঠিক সামনে নয়, দুই পাশে। ঘোড়ার চোখ কেন এমন অদ্ভুত জায়গায় থাকে? অনেক প্রাণীর চোখ মুখের দুপাশে থাকে। উদাহরণটা আজ আমরা ঘোড়াকে দিয়েই দেব।

আসলে প্রকৃতিতে একটা নিয়ম আছে। যে প্রাণী শিকারি, তার চোখ থাকে মাথার সামনে। আর যে প্রাণী শিকার হয়, তার চোখ থাকে মাথার পাশে। বাঘ বা ইগলের চোখ যেমন সামনে থাকে। কারণ, এরা লক্ষ্য ঠিক করে শিকার ধরতে পারে। কিন্তু ঘোড়া তো শিকারি নয়, বরং বাঘের মতো প্রাণীর কাছে সে নিজেই শিকার হতে পারে। তাই প্রকৃতি ঘোড়াকে এমন চোখ দিয়েছে, যাতে সে চারদিক দেখতে পারে।

ঘোড়ার চোখ দুপাশে থাকায় ওর দেখার ক্ষমতা অসাধারণ। প্রতিটা চোখ আলাদাভাবে ২০০ থেকে ২১০ ডিগ্রি এলাকা দেখতে পারে। ক্যামেরার প্যানোরামা মোডের মতো অনেকটা। ঘোড়া যখন মাথা উঁচু করে, তখন দুই চোখ মিলে সামনের দিকে ৫৫ থেকে ৮০ ডিগ্রি দেখতে পারে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ঘোড়া শরীরের চারপাশে প্রায় ৩৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখতে পারে। মানুষ মাথা না ঘুরিয়ে মাত্র ১৮০ ডিগ্রি দেখতে পারে। ঘোড়া সেখানে দেখতে পারে ৩৫০ ডিগ্রি, অর্থাৎ পুরো বৃত্তের চেয়ে মাত্র ১০ ডিগ্রি কম।

আরও পড়ুন
রেডিটে এই মিমটি জনপ্রিয়। যদি ঘোড়ার চোখ সামনে থাকত তবে কেমন দেখা যেত।
রেডিট থেকে নেওয়া

তবে ঘোড়ার কিন্তু দুর্বলতাও আছে। ঘোড়া নিজের সামনে প্রায় চার ফুট এবং পেছনের কিছুটা জায়গা দেখতে পায় না। আরেকটা মজার ব্যাপার বলি। ঘোড়ার দুই চোখ আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে। তুমি যখন কিছু দেখো, তোমার দুই চোখ একসঙ্গে দেখে এবং মস্তিষ্কে একটাই ছবি তৈরি হয়। কিন্তু ঘোড়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। ধরো, একটা জিনিস ঘোড়া বাঁ চোখ দিয়ে দেখল, তারপর ডান চোখ দিয়ে দেখল। তাহলে তার মস্তিষ্কে মনে হবে দুবার নতুন জিনিস দেখছে।

তুমি যদি একটা ঘোড়াকে ওর ডান চোখ দিয়ে প্রথমবার একটা লাল ছাতা দেখাও, তাহলে প্রথমবার লাল ছাতাটা দেখে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। কিন্তু পরের দিন যদি তুমি ওই একই ছাতা ওর বাঁ দিক থেকে দেখাও, তাহলে ঘোড়াটা এমনভাবে চমকে উঠতে পারে, যেন সে জীবনে প্রথমবার ছাতা দেখল! এ জন্যই যারা ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেন, তাঁদের যেকোনো নতুন জিনিস ঘোড়ার দুপাশ থেকেই শিখিয়ে নিতে হয়।

আরও পড়ুন

ঘোড়ার চোখ রাতে জ্বলজ্বল করে কেন

ঘোড়ার চোখ আকারে বিশাল। আসলে সব স্থলের প্রাণীর মধ্যে ঘোড়ার চোখই সবচেয়ে বড়! ওরা রাতেও আমাদের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পায়। ঘোড়ার চোখে টেপেটাম লুসিডাম নামে একটা বিশেষ স্তর আছে। এটা চোখের ভেতরে আলো প্রতিফলিত করে। ফলে অন্ধকারে ঘোড়া ভালো দেখতে পারে। পাশাপাশি ঘোড়ার চোখে রেটিনার কোষ অনেক বেশি থাকে। রাতে কখনো টর্চের আলোয় ঘোড়ার চোখ দেখলে দেখবে চকচক করছে। এটা ওই টেপেটাম লুসিডামের জন্যই। মানুষের চোখে এই স্তর নেই, তাই আমরা রাতে অতটা ভালো দেখি না। বিড়াল বা কুকুরের চোখও রাতে একই কারণে জ্বলজ্বল করে!

ঘোড়ারা দূরের নড়াচড়া খুব ভালো বুঝলেও আমাদের মতো এত স্পষ্ট বা ঝকঝকে দেখতে পায় না। প্রায় ২০০ গজ দূর থেকেই ওদের কাছে জিনিসপত্র ঝাপসা লাগতে শুরু করে।

আরও পড়ুন

তা ছাড়া ঘোড়া আমাদের মতো রঙিন জিনিসও দেখতে পারে না। আমরা যেমন লাল, নীল, সবুজসহ অনেক রং দেখি, ঘোড়া শুধু দেখে নীল আর সবুজ রং। লাল বা হলুদ রং সেভাবে আলাদা করতে পারে না।

নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছ, ঘোড়ার চোখে দেখা আমাদের চেয়ে কতটা আলাদা। তাই পরে কখনো ঘোড়ার কাছে যাওয়ার আগে দুটি জিনিস অবশ্যই মনে রাখবে। প্রথমত ঘোড়ার ঠিক পেছনে বা ঠিক সামনে দিয়ে হঠাৎ যাবে না। কারণ, ও তোমাকে দেখতে পায় না। ঘোড়ার পেছন দিয়ে গেলে ভয় পেয়ে চমকে উঠতে পারে বা লাথিও মারতে পারে! দ্বিতীয়ত, ঘোড়ার কাছে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, ওর পাশ দিয়ে মানে কাঁধের কাছ দিয়ে যাওয়া। আর যাওয়ার সময় ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতে যেতে পারো। ওকে তোমার গলার স্বর শুনিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে, তুমি ওর শত্রু নও, বন্ধু।

সূত্র: পপ সায়েন্স

আরও পড়ুন