আইনস্টাইন ঠিকই বলেছিলেন, ব্ল্যাকহোল স্থান আর সময়কে টেনে নেয়

মাঝারি ভরের ব্ল্যাকহোল HLX-1 । এটি গবেষকদের বানানো একটি অ্যানিমেশননাসা

আইনস্টাইন একশ বছরেরও বেশি আগে একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ভারী বস্তু স্থান আর সময়কে বাঁকিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেছিলেন ঘূর্ণনশীল বস্তু স্থান সময়কে নিজের সঙ্গে টেনে নেয়। এবার বিজ্ঞানীরা সেই কথার সরাসরি প্রমাণ পেয়েছেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি ভয়ংকর শক্তিশালী ব্ল্যাকহোল পর্যবেক্ষণ করেছেন। এটি একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। এর ভর সূর্যের চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি। এর চারপাশে একটি তারা ঘুরছিল। তারাটি খুব কাছে চলে গিয়েছিল।

প্রবল মাধ্যাকর্ষণে তারার গঠন ভেঙে যেতে শুরু করে। এই ঘটনাকে বলা হয় টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্ট। তারাটি এই প্রভাবের কারণে লম্বা হয়ে যায়। দেখতে অনেকটা স্প্যাগেটির মতো হয় একে বলা হয় স্প্যাগেটিফিকেশন।

আরও পড়ুন

ছিন্নভিন্ন তারার অবশিষ্ট পদার্থ ব্ল্যাক হোলের চারপাশে ঘুরতে থাকে। এতে তৈরি হয় একটি চাকতির মতো কাঠামো। এর নাম অ্যাক্রেশন ডিস্ক। এই ডিস্ক থেকে ধীরে ধীরে পদার্থ ব্ল্যাক হোলের ভেতরে পড়ে।

সব পদার্থ ভেতরে যায় না। কিছু অংশ বাইরে ছিটকে যায়। এগুলো ব্ল্যাক হোলের দুই দিক থেকে বের হয়। এগুলোকে বলা হয় জেট। এই জেট প্রায় আলোর গতিতে ছুটে চলে।

আরও পড়ুন
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন
উইকিমিডিয়া

বিজ্ঞানীরা এই ব্ল্যাক হোলে লক্ষ্য করেন ডিস্ক আর জেট দুলছে। এই দুলুনি নিয়মিত ঘটতে দেখা গেছে। প্রতি বিশ দিনে একবার এই দুলুনি লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই দুলুনি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনাকে বলা হয় লেন্স থিরিং প্রিসেশন। একে ফ্রেম ড্র্যাগিংও বলা হয়। এর মানে ব্ল্যাক হোল নিজের ঘূর্ণনের কারণে স্থান সময়কে টেনে নেয়।

এই ধারণা এসেছে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে। ১৯১৫ সালে আইনস্টাইন এই তত্ত্ব দেন। ১৯১৮ সালে লেন্সে ও থিরিং বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তবু এতদিন এটি দেখা যায়নি। এই পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয় নাসার সুইফট মহাকাশযান। একই সঙ্গে ব্যবহার করা হয় বিশালাকার অ্যারে রেডিও টেলিস্কোপ। এক্স-রে আর রেডিও তরঙ্গের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, আগের ব্যাখ্যার সঙ্গে তথ্য মিলে গেছে। দুলুনির কারণ শক্তি নিঃসরণ নয়। এর কারণ স্থান সময়ের টান। এতে ফ্রেম ড্র্যাগিং নিশ্চিত হয়।

আরও পড়ুন

গবেষকরা বলেন এটি পদার্থবিজ্ঞানের জন্য বড় খবর। এতে একশ বছরের পুরোনো ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হলো। এতে ব্ল্যাকহোলের ঘূর্ণন বোঝা সহজ হবে ।তারারা কীভাবে ভেঙে যায় সেটাও বোঝা যাবে। বিজ্ঞানীরা বলেন ঘূর্ণনশীল ব্ল্যাকহোল বিশেষ ক্ষেত্র তৈরি করে।

একে বলা হয় গ্র্যাভিটোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র। এটি আশপাশের বস্তুগুলোর গতি বদলে দেয়। এই গবেষণা নতুন প্রশ্নও তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে আরও এমন ঘটনা দেখা যাবে। তখন ব্ল্যাকহোলকে আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে তুমি ভাবতে পারো, আইনস্টাইন আজও ঠিক।খাব

সূত্র: স্পেস ডটকম

আরও পড়ুন