মাংস ছাড়া আর কী দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটানো যায়
মাংসের এখন বেশ দাম। বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা বা তার বেশি। অনেকে আবার স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে মাংস খেতে পারেন না। বিশেষ করে যাঁদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি আছে, তাঁদের মাংস খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা। আবার প্রোটিনের চাহিদা তো না মিটিয়ে উপায় নেই। মাংসের বিকল্প হিসেবে অন্য কী খাবার আছে, যেগুলো খেলে প্রোটিনের চাহিদা মিটবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাংসের বিকল্প হিসেবে শিম, ডাল, বাদাম এবং শস্যদানা বেছে নেওয়া যেতে পারে। এগুলো পরিবেশের জন্য বেশ ভালো। পাশাপাশি দামেও কম।
অনেকেই মনে করেন স্বাস্থ্যকর খাবার মানেই দামি খাবার। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলেন, এটি মোটেও সত্যি না। ডাল বা শস্যদানার মতো উদ্ভিজ্জ প্রোটিনগুলো খুব সহজে এবং কম খরচে খাওয়া যায়। মূলকথা হলো, যেভাবেই হোক, এই খাবারগুলো প্লেটে থাকলেই হলো।
চলো মাংস ছাড়া আরও পাঁচটি খাবার নিয়ে জানি, যেগুলো খেয়ে সহজেই প্রোটিনের চাহিদা মেটানো যাবে।
শিম ও ডালজাতীয় শস্য
শিম, মটর, মসুর, ছোলা বা বাদাম, এদেরকেই একসঙ্গে বলে লেগিউম। জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক জুলিয়া উল্ফসন এদের ‘সাশ্রয়ী, পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু’ বলে বর্ণনা করেছেন।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রায় শূন্য দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। যেমন, একজন ৬৮ কেজি ওজনের প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দরকার প্রায় ৫৪ গ্রাম প্রোটিন। রান্না করা আধা কাপ মসুর ডাল থেকে একজন প্রায় ৯ গ্রাম প্রোটিন পেতে পারে। প্রোটিন ছাড়াও এই খাবারে থাকে ফাইবার, ভিটামিন-বি, আয়রন এবং পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এমনকি কিছু ডালে বেরির চেয়েও বেশি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে। এটি হৃদ্রোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। সবচেয়ে বড় কথা, এরা পরিবেশের ক্ষতি করে না।
ডিম
যদিও মাঝেমধ্যে ডিমের দাম অনেক বেড়ে যায়, তবু এটি তুলনামূলক সস্তা। সহজে খাওয়া যায় এবং দামে কম, এমন প্রোটিনের উৎস হলো ডিম। অসংখ্য উপায়ে তুমি ডিম খেতে পারবে। একটি ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এতে থাকে ৭০ কিলোক্যালরি। এ ছাড়া এতে ভিটামিন বি১২, রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন ডি-এর মতো পুষ্টি উপাদান আছে। যারা নিরামিষ খাবার বা শাকসবজি বেশি খেতে চায়, তাদের জন্য ডিম খুব ভালো। শুধু সকালের নাশতার জন্যই না, রাতের খাবারেও ডিম যোগ করে তুমি অনেকখানি প্রোটিন পেতে পারো।
মাছ
মাংসের তুলনায় মাছ খানিকটা সস্তা। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ। অনেক মাছ আছে তেল বেশি, যেগুলো প্রোটিন উৎস হিসেবে বেশ ভালো এবং স্বাস্থ্যকর। মাংসের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে যেকোনো মাছ। যেমন আমাদের দেশে সস্তায় বা খুব সহজে তেলাপিয়া পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম তেলাপিয়া মাছে প্রোটিনের পরিমাণ সাধারণত ২৩ থেকে ২৭ গ্রাম। ১০০ গ্রাম মাছ দিয়ে প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদার অর্ধেক পূরণ করা সম্ভব। এতে পাওয়া যাবে ১২৮ কিলোক্যালরি পাওয়া যাবে। ফ্যাট পাওয়া যাবে ৩ গ্রাম। নিয়াসিন, ভিটামিন বি১২, ফসফরাস ও সেলেনিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজও পাওয়া যায় এই মাছে।
বিশেষজ্ঞরা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন। আমাদের দেশে সহজলভ্য সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে এই উপাদানগুলো পাওয়া যায়। মাছ খেলে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে।
দুগ্ধজাত খাবার
কম ফ্যাটযুক্ত বা ফ্যাটছাড়া দুধ, দই বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। এগুলোকে তুমি প্রোটিনের সহজলভ্য উৎস বলতে পারো। এক কাপ কম ফ্যাটযুক্ত দুধে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এক কাপ দইয়ে থাকে প্রায় ১৮ গ্রাম প্রোটিন। এগুলো দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড সঠিক অনুপাতে থাকে। প্রোটিন ছাড়াও এগুলোতে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডির মতো পুষ্টি উপাদান থাকে। তাই এই খাবারগুলো আগ্রহ করে খেতে পারো।
বাদাম ও বীজ
আখরোট, পেস্তা বা কাজুবাদাম আমাদের এখানে খুব একটা সস্তা না। তবে চিনাবাদাম বেশ সস্তা। চিনাবাদাম হলো উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের অন্যতম সেরা উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম চিনাবাদাম থেকে তুমি প্রায় ২৫ গ্রাম প্রোটিন পাবে।
শুধু প্রোটিন নয়, চিনাবাদাম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। স্নেহ পদার্থ পাবে ৫০ গ্রাম। ১৮ গ্রাম শর্করা পাবে, খাদ্য আঁশ পাবে ৮ গ্রাম। শক্তি পাবে ৫৭০ কিলোক্যালরি। চিনাবাদামকে অনেকে ডালজাতীয় শস্য বলে মনে করে। তবে এর পুষ্টিগুণ অন্যান্য বাদামের চেয়ে বেশি। এতে ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস এবং ফোলেটের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিনও প্রচুর পরিমাণে থাকে।
অন্যদিকে তিল, কুমড়ো বিজ, চিয়া সিড বা সূর্যমুখীর বীজেও প্রচুর প্রোটিন থাকে। প্রোটিনের পাশাপাশি এতে আছে ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর চর্বি। এগুলো হজমক্ষমতা, হার্টের স্বাস্থ্য এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তাই প্রোটিনের জন্য কেবল মাংসের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এই বিকল্পগুলো প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যোগ করে কিন্তু তুমি তোমার শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে ফেলতে পারো। এই ছোট পরিবর্তনগুলো দীর্ঘ মেয়াদে তোমার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।