স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে কী ক্ষতি

সুষম খাবারের একটা অন্যতম উপাদান হচ্ছে চর্বি বা ফ্যাটছবি: সংগৃহীত

কয়েক দশক ধরে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লাল মাংস, মাখন, ঘন দুগ্ধজাত খাবার, আইসক্রিম বা ডিপ ফ্রাই করা খাবার শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ায়। আর কোলেস্টেরল বাড়লে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বহু বছর ধরে এমন পরামর্শ শোনা যাচ্ছে। এ পরামর্শ সত্যি। আমাদের শরীরের জন্য স্যাচুরেটেড ফ্যাট কি উপকারী, না অপকারী?

স্যাচুরেটেড ফ্যাট মূলত প্রাণিজ উৎসে থাকে। রুম টেম্পারেচার বা ঘরের তাপমাত্রায় এই ফ্যাট বেশির ভাগই শক্ত অবস্থায় থাকে। অন্যদিকে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে মাছ, বাদাম, অ্যাভোকাডো, জলপাই ও সয়াবিন তেলের মতো উদ্ভিজ্জ উৎসে। এগুলো ঘরের তাপমাত্রায় তরল থাকে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশক থেকেই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সম্পৃক্ত চর্বির বদলে উদ্ভিজ্জ তেল বা মাছের মতো উৎস থেকে আসা অসম্পৃক্ত চর্বি খেলে রক্তের অপকারী কোলেস্টেরল এলডিএল কমে। সেই সময়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোতে দেখা গেছে, মাখন বা নারকেল তেলের বদলে সূর্যমুখী বা ভুট্টার তেল খেলে রক্তে কোলেস্টেরল কমে যায়। সে সময়েই বিভিন্ন গবেষণা দেখিয়েছে, যাঁদের ডায়েটে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম, তাঁদের হৃদ্‌রোগও কম।

আরও পড়ুন

১৯৬১ সালেই আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমিয়ে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়ার সুপারিশ করে। ১৯৮০ সালের প্রথম আমেরিকার সরকারি খাদ্য নির্দেশিকায়ও একই পরামর্শ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত এ পরামর্শই দেওয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক গবেষণার ফলও একই দিকে ইঙ্গিত করছে। ১৯৭০ সালের পর থেকে শতাধিক স্বল্পমেয়াদি ট্রায়ালে দেখা গেছে, যত বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া হয়, তত বেশি বাড়ে এলডিএল কোলেস্টেরল। এটি বাড়লে দীর্ঘ মেয়াদে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণাগুলোতেও দেখা গেছে, যাঁরা খাদ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমেছে। বিশাল আকারে করা সমীক্ষা বা পর্যবেক্ষণের ফলও একই। স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে, আয়ু বাড়ে।

আরও পড়ুন

এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য থাকার পরও এখন নতুন করে বিতর্ক দেখা যায়। এ বিতর্কের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক যুক্তি বা ইন্টারনেটনির্ভর খাদ্য ইনফ্লুয়েন্সারদের দাবি কখনো কখনো বৈজ্ঞানিক সত্যকে আড়াল করে দেয়। কিছু মানুষ মনে করেন, ‘যেহেতু আমরা মাংস খেয়ে বিবর্তিত হয়েছি, তাই তা অবশ্যই ভালো।’ কিন্তু এ ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রখ্যাত পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ওয়াল্টার উইলেট এ যুক্তির ‘গোড়ায় গলদ’ আছে। তাঁর মন্তব্য, স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খাওয়া এবং উদ্ভিজ্জ তেলসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া—এই দুই কারণে পঞ্চাশের দশকের তুলনায় হৃদ্‌রোগজনিত মৃত্যুহার প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে।

আরও পড়ুন

তবে সব স্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার সমান ক্ষতিকর—এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। যেমন দই বা চিজের মতো কিছু পূর্ণচর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারে খারাপ প্রভাব দেখা যায় না। আবার অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার বা প্রসেসড মাংস হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা একমত, স্যাচুরেটেড ফ্যাট বাড়ানো কোনো খাবার স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ, এগুলো বাড়তি ক্যালরি যোগ করে, গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর খাবারের জায়গা কমিয়ে দেয়।

আমাদের কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পরিষ্কার। স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া কমিয়ে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি খেতে হবে। চর্বির বদলে জলপাই বা সয়াবিন তেল ব্যবহার করতে হবে। লাল মাংসের বদলে মাছ খেতে হবে। দইয়ের সঙ্গে বাদামবীজ খেতে হবে। ফল, সবজি, ডাল, আস্ত শস্য, বাদাম, মাছ ও উদ্ভিজ্জ তেল—এ ধরনের খাবার খেতে পারলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। হৃৎপিণ্ড থাকবে নিরাপদ।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

আরও পড়ুন