যে তিন নিয়ম মেনে হার্ভার্ডসহ ১০টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সালমান

মায়ের সঙ্গে সালমান চৌধুরীছবি: নর্থজার্সি ডটকম

সালমান চৌধুরী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক কিশোর। সম্প্রতি হার্ভার্ড, ইয়েল, প্রিন্সটনসহ ১০টি বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার বাবা-মায়ের ত্যাগ। পাশাপাশি সে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলেছে। সালমান জানিয়েছে, তার বাবা-মা তাকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র শিখিয়েছেন, যা তাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়েছে।

সালমানের জন্ম দুবাইয়ে। তার পরিবার ২০০৯ সালে ভিসা লটারির মাধ্যমে নিউ জার্সিতে আসে। প্রথম চার বছর সালমানের বাবা পারিবারিক ব্যবসার জন্য প্রায়ই দুবাইয়ে যাতায়াত করতেন, কিন্তু সবসময় চেষ্টা করতেন ছেলের পড়াশোনা যেন ভালো হয়। তাদের এই ত্যাগ সফল হয়েছে, কারণ সালমান এখন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সব প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ৮টি আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয় হলো ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, কর্নেল ইউনিভার্সিটি, ডার্টমাউথ কলেজ, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া ও ইয়েল ইউনিভার্সিটি।

সালমান সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে এবং ফলিত গণিত নিয়ে পড়াশোনা করবে। ছোটবেলা থেকেই এই বিষয়ে তার অসাধারণ আগ্রহ। ২০১৯ সালে সালমান নিউ জার্সির স্টেট স্ট্যান্ডার্ডাইজড পরীক্ষায় ১৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন ছিল, যে সব বিষয়ে নিখুঁত নম্বর পেয়েছিল।

আরও পড়ুন

সালমানের মতে, তিনটি বিষয় তাকে এগিয়ে দিয়েছে। প্রথমত, সে সবসময় স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তার বাবা-মা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। সালমান যেন সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারে এবং ভালো খাবার খেতে পারে, সেদিকে তারা খেয়াল রাখতেন। সালমানের বাবা প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে তাকে গাড়িতে স্কুলে পৌঁছে দিতেন, যেন সালমান গাড়িতে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ পায় এবং বাসে করে যাতায়াতের কষ্ট করতে না হয়। এই ছোট ছোট যত্নগুলো সালমানের শরীর ও মনকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করেছে।

দ্বিতীয়ত, সালমান ব্যর্থ হলে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তার বাবা-মা তাকে কোনো কিছুতে ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে না দিয়ে বরং নতুন করে চেষ্টা করতে শিখিয়েছেন। তারা সালমানকে নতুন নতুন জিনিস শেখা, বিভিন্ন ক্লাবে যোগ দেওয়া এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহিত করতেন। এমনকি যখন কোনো কাজ তার জন্য কঠিন হতো, কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে হতো, তখনও সালমান চেষ্টা চালিয়ে যেত। এই অভ্যাস তাকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

তৃতীয়ত, সালমান মূল্যবোধের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। বাবা-মা তাকে শিখিয়েছেন, চরিত্রের ভালো দিকগুলোই একজন মানুষকে প্রকৃত সাফল্য এনে দেয়। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি তারা সালমানের নৈতিক মূল্যবোধ গঠনেও মনোযোগ দিয়েছিলেন।

সালমানের সৌভাগ্য যে প্যাটারসনের অ্যাকাডেমি ফর দ্য গিফটেড অ্যান্ড ট্যালেন্টেড-এর শিক্ষকেরা তার মেধা বুঝতে পেরেছিলেন। তারা সাধারণ ক্লাসওয়ার্কের বাইরে গিয়ে সালমানের জন্য বিশেষ কারিকুলাম তৈরি করেছিলেন। সালমান জানায়, ‘অষ্টম শ্রেণিতে আমি জ্যামিতি শেষ করে বীজগণিত, প্রি-ক্যালকুলাস এবং ক্যালকুলাসের কিছু অংশ শিখেছিলাম। এটি হাইস্কুলেও আমাকে সাহায্য করেছিল।’

সালমান স্কুলের প্রথম রোবটিক্স দলেও যোগ দিয়েছিল। তার একটি প্রজেক্ট ছিল চাঁদের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম একটি লুনার রোভার ডিজাইন করা।

আরও পড়ুন

প্যাসেয়িক কাউন্টি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্টেম অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ জোয়াকিম জনসন বলেন, ‘যদি তুমি তোমার সর্বোচ্চটা না দাও, তাহলে তোমার মনে হবে না যে তুমি এখানকার।’

সালমানের মা ফাতেমা জানান, অভিবাসী হিসেবে নতুন দেশে তাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। সালমানের মা প্রথমে একটি স্থানীয় ডলার স্টোর ও পরে স্কুলের ক্যাফেটেরিয়ায় কাজ নিয়েছিলেন। সালমানের বাবা মোহাম্মদ প্রথমে সাবওয়ে ও সেভেন-ইলেভেনে কাজ করতেন। বর্তমানে মা শিক্ষকের সহকারী এবং বাবা বিকল্প শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

স্টেম অ্যাকাডেমি থেকে এর আগেও আইভি লিগে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু সালমানের মতো এক বছরে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আগে কেউ পায়নি। তবুও অধ্যক্ষ জনসন মনে করেন, আইভি লিগে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা নয়, বরং মেধাবী শিক্ষার্থীদের ছোট ভাইবোনরাও তাদের দেখানো পথে হাঁটছে কিনা, সেটাই একটি স্কুলের প্রকৃত সাফল্য।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং নর্থ জার্সি ডটকম

আরও পড়ুন