সাইরোস দ্বীপ থেকে ইসরায়েলি প্রমোদতরি কেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ প্রবল রূপ নিয়েছে। অবরোধে গাজায় খাদ্য ফুরিয়ে গেছে। ১০০ এর বেশি ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থা সতর্ক করেছে, গাজায় তীব্র অপুষ্টি দেখা গেছে। খাদ্য বিতরণে ইসরায়েলি বাহিনীর বাধা রয়েছে। খাদ্য সংগ্রহ করতে আসা মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
তীব্র ক্ষুধায় গাজা এখন দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। অবস্থা এমন যে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ডাক্তার ও ত্রাণকর্মীরা ক্ষুধায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।
গাজার দক্ষিণের নাসের হাসপাতালের একজন অর্থোপেডিক সার্জন বিবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, গাজায় অপুষ্টির কারণে রোগীরা অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হতে সমস্যায় পড়ছে। ত্রাণ স্বল্পতার কারণে রোগীদের ক্ষত সংক্রমিত হচ্ছে এবং তা শুকাতে চাইছে না। সাহায্যের অভাবে এখানে আগে সুস্থ থাকা প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ এখন শুধু চামড়া আর হাড়ে পরিণত হয়েছেন। হাসপাতালের কর্মীদের কর্মক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলছে এই তীব্র অভাব। নার্সরা ডিউটির পুরো সময় দাঁড়িয়ে থাকার মতো শক্তি পাচ্ছেন না।
গাজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ খুব কম। মৌলিক খাদ্যদ্রব্যের দাম বেশিরভাগ পরিবারের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। একজন বাসিন্দা বলেছেন, 'এটা ভয়াবহ। জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিদিন শুধু আটার জন্যই আমাদের ৩০০ ইসরায়েলি শেকেল (প্রায় ৬ হাজার ৪৫০ টাকা) লাগছে! মসুর ডাল ও ছোলার দাম প্রতি কেজিতে ১০ শেকেল থেকে বেড়ে ১০০ শেকেল (প্রায় ২ হাজার ১৫০ টাকা) হয়েছে। এর ফলে সাধারণ খাবার তৈরি করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু মসুর ডাল আর এক টুকরো রুটি খেতে প্রতিদিন ৬০০ শেকেল (প্রায় ১২ হাজার ৯০০ টাকা) দরকার।'
তুলনা করে বলা যায়, বাংলাদেশের সাধারণ সুপার মার্কেটে আটার দাম ৬০-৭০ টাকা কেজি। এক কেজি মসুর ডাল পাওয়া যায় ১২০-১৮০ টাকায়। ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা শুধু খাবারের অভাবে ভুগছেন এমন না, তাদের কাঠ, পানি, বিদ্যুৎ এবং ফোনের ব্যালেন্সও দরকার। এক বাসিন্দা বলেছেন, 'আমরা ক্লান্ত। আমরা আর হাঁটতেও পারছি না।'
বিদেশে থাকা আত্মীয়দের ছোট ছোট ব্যক্তিগত অনুদানের মাধ্যমে কিছু পরিবারটিকে থাকছে। কিন্তু নগদ টাকা পাঠানোর জন্য প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি কমিশন দিতে হচ্ছে। টাকানোর পাঠানোর খরচ এত বেশি হওয়ায় এটি আর বাস্তবে কাজ করছে না।
বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। যেমন গ্রিসের সাইরোস দ্বীপবাসী দেখিয়েছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এই দ্বীপের বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেছেন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভের মুখে পড়েছে একটি ইসরায়েলি প্রমোদতরি (ক্রুজ শিপ)। সাইরোস দ্বীপ থেকে প্রমোদতরিটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্রাউন আইরিস নামের জাহাজটিতে প্রায় ১৬০০ ইসরায়েলি যাত্রী ছিলেন। জাহাজটি সাইরোস দ্বীপের কাছে পৌঁছালে ৩০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো গণহত্যার প্রতিবাদ জানায়। তারা 'গণহত্যা বন্ধ করো' লেখা একটি বিশাল ব্যানার এবং ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে যাত্রীদের জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হয়নি।
বিক্ষোভকারীরা বিবৃতি দিয়েছে গ্রিসের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিরুদ্ধে। এই দুই দেশের ক্রমবর্ধমান 'অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সামরিক' সম্পর্কের নিন্দা জানিয়েছে তারা। তারা বলেছে, 'সাইরোসের বাসিন্দা এবং মানুষ হিসেবে আমরা এমন পদক্ষেপ নিচ্ছি যা আমাদের আশপাশে ঘটে চলা গণহত্যা থামাতে সাহায্য করবে।'
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জাহাজের কিছু যাত্রী এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি পতাকা তুলে ধরে এবং দেশাত্মবোধক স্লোগান দেয়। যদিও এই বিক্ষোভে কেউ আঘাত পায়নি বা গ্রেপ্তার হয়নি। তবু এটি গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপ নিয়ে গ্রিসে বাড়তে থাকা অসন্তোষের প্রকাশ। বিশ্বের বহু দেশের মতো ইসরায়েলবিরোধী গ্রাফিতি এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে সাইনবোর্ড পুরো গ্রিসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
সূত্র: বিবিসি এবং গার্ডিয়ান