মিস্টার বিস্ট ভেঙে ফেলেছেন সব রেকর্ড, ইউটিউবের ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ সাবস্ক্রাইবার তাঁর
‘আমি রাস্তায় থাকব, কিন্তু অন্য কিছু করব না।’—কথাটা বলেছিলেন কলেজপড়ুয়া এক তরুণ। বাসা ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের স্বপ্ন থেকে সরে আসেননি। আজ তিনি সফল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইউটিউবার, অন্তত সাবস্ক্রাইবের হিসেবে। তিনি জিমি ডোনাল্ডসন। অনেকেই তাঁকে ‘মিস্টার বিস্ট’ নামে চেনো। এই নামেই তাঁর ইউটিউব চ্যানেল। সেই চ্যানেলে এখন ৪০০ মিলিয়নের বেশি (৪১৮ মিলিয়ন) সাবস্ক্রাইব। এর চেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইব নেই আর কোনো ইউটিউবারের। কীভাবে তিনি এই স্বপ্ন পূরণ করলেন? চলো, আজ মিস্টার বিস্টের গল্প জানা যাক।
কে এই মিস্টার বিস্ট
১০ বছর আগের কথা। জিমি তখন একজন সাধারণ ছেলে। কনটেন্ট বানানোর স্বপ্ন দেখেন। যদিও পৃথিবীতে তখনো ইউটিউব জিনিসটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কিন্তু জিমি হয়তো এর ভবিষ্যৎ দেখেছিলেন। তা ছাড়া কনটেন্ট বানানো তাঁর কাছে নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। চারপাশের সবাই বলত, ‘তুমি পাগল হয়ে গেছ। এর পেছনে এত সময় ব্যয় করছ কেন? তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।’ কিন্তু থেমে যাননি জিমি। সাত বছর ধরে টানা কাজ করে গেছেন। দিনরাত এক করে ভিডিও বানিয়েছেন। কেউ তখন তাঁকে দেখত না। কিন্তু তবু বানাতেন। কারণ, কাজটাকে তিনি ভালোবাসতেন। বিশ্বাস ছিল, একদিন সফল হবেন। আজ তিনি সফল!
ইতিহাস রচনা
২০২৫ সালের ১ জুন। দিনটি ইউটিউবের ইতিহাসে লেখা থাকবে। মিস্টার বিস্টের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা হয় ৪০০ মিলিয়ন। টি-সিরিজকে পেছনে ফেলে বর্তমানে বিশ্বের সেরা ইউটিউবার জিমি। টি-সিরিজের বর্তমান সাবস্ক্রাইব ৩০০ মিলিয়ন। ১ জুন জিমি লিখেছেন, ‘৪০০ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার! ১০ বছর আগে আমাকে সবাই বলেছিল, আমি কখনো সফল হতে পারব না। তারপরেও আমি কনটেন্ট বানিয়েছি। কেউ দেখেনি, তবু ৭ বছর ধরে কাজ করেছি।’
একই দিনে তিনি একটি ছবিও শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী নিল মোহান জিমির হাতে টাইগার প্লে বাটন তুলে দিচ্ছেন। পুরস্কারটা দেখতে অসাধারণ। চকচকে ধাতুর তৈরি। মাঝখানে আছে নীল রঙের একটা পাথর। একদম আলাদা আর চোখধাঁধানো।
৪০০ মিলিয়ন কত বড়!
এতক্ষণ আমরা বলছি, জিমির মোট সাবস্ক্রাইব ৪০০ মিলিয়ন। মানে ৪০ কোটি। সংখ্যাটা কিন্তু অনেক বড়। বাংলাদেশে যত মানুষ আছে, তাঁর দ্বিগুণের চেয়েও বেশি জিমির সাবস্ক্রাইব সংখ্যা।
মিস্টার বিস্ট এত জনপ্রিয় কেন
প্রশ্নটা অনেকের মনেই। কেন তিনি এত জনপ্রিয়? এর পেছনে আসলে অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত, তাঁর ভিডিওতে অবিশ্বাস্য সব চ্যালেঞ্জ থাকে। সেগুলো তোমার কল্পনাকেও হার মানাবে। যেমন ধরো, জনপ্রিয় টিভি সিরিজ 'স্কুইড গেম'-এর পুরো সেট বানিয়ে সাধারণ মানুষকে নিয়ে সেই খেলার আয়োজন করেছেন জিমি। সেই ভিডিও এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ কোটি মানুষ দেখেছে। টানা ৫০ ঘণ্টা জীবন্ত কবরের নিচে শুয়ে ছিলেন তিনি। মিসরের পিরামিডগুলোর ভেতরে কাটিয়েছেন ১০০ ঘণ্টা। তাঁর ভিডিও মানেই বিশাল আয়োজন আর টান টান উত্তেজনা।
দ্বিতীয়ত, মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেন তিনি। সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি স্বপ্নপূরণের কারিগর। তিনি তাঁর ভিডিওর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে গাড়ি, বাড়ি, এমনকি লাখ লাখ টাকা উপহার দেন। একবার তো তিনি তাঁর এক সাবস্ক্রাইবারকে একটি ব্যক্তিগত দ্বীপই উপহার দিয়ে দিয়েছিলেন! মাত্র কিছুদিন আগে একজনকে দিয়েছেন একটি বিমান। এটিই তাঁর স্বভাব। ভেবো না, আজ তাঁর অনেক টাকা আছে বলে সে এটা করছে। ভিডিও থেকে সে প্রথম ১০ হাজার ডলার ইনকাম করেছিল। কলেজে না যাওয়ার কারণে তখন বাসা থেকে তাঁকে বের করে দিয়েছিলেন তাঁর মা। একটা বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন জিমি। ভেবেছিলেন, এই টাকা দিয়ে আরেকটু বড় বাসা ভাড়া নেবেন। কিন্তু তিনি একজন পিৎজা ডেলিভারি ম্যানকে পুরো ১০ হাজার ডলারই পুরস্কার দিয়েছিলেন। সেটাও ভিডিও করে ছেড়েছিলেন নিজের ইউটিউবে। এভাবেই তাঁর শুরু। আজও চলছে।
তৃতীয়ত, মানুষের জন্য কাজ করেন জিমি। তিনি অনেক দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন, এখনো করছেন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ১০০টি কুয়ো খনন করে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছেন। এক হাজার দৃষ্টিহীন মানুষের চোখের ছানি অপারেশন করিয়ে তাঁদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য লাখ লাখ ডলার দান করেছেন। ২০১৯ সালে ২০ মিলিয়ন গাছ লাগানোর একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। ৫৬ দিনের মধ্যে সেই লক্ষ্য পূরণ করে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪.৮ মিলিয়নের বেশি গাছ লাগিয়েছেন তিনি। সমুদ্র থেকে ৩০ মিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক ও বর্জ্য পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০২১ সালে। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে স্কুলে সহায়তা, দরিদ্রদের উপকার করা তো তাঁর জন্য নিয়মিত ব্যাপার। এসব কারণে জিমি আজ এত সফল।
মিস্টার বিস্টের স্বপ্ন
তাঁর স্বপ্ন এখানেই শেষ নয়। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য আরও বড় এবং ভালো ভিডিও বানানো। আরও বেশি মানুষকে সাহায্য করা। হয়তো একদিন দেখবে, মিস্টার বিস্ট বন্ধুদের নিয়ে চলে গেছেন চাঁদে। সেখান থেকে ভিডিও বানাচ্ছেন। তাঁকে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই! যাহোক, মিস্টার বিস্টের জীবন থেকে কিন্তু আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। স্বপ্ন দেখতে হবে বড়। সেই স্বপ্ন সত্যি করতে ভয় পেলে চলবে না। লেগে থাকতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। গতানুগতিকের পেছনে না ছুটে নতুন কিছু করতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে মানুষের ভালোবাসা। তুমি মানুষকে ভালোবাসলে, সাহায্য করলে সবাই তোমাকে ভালোবাসবে। তুমিও সফল হবে।