জিপিএ ফাইভ কি শেষ কথা?
আজ ১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ২০২৫ পরীক্ষার ফলাফল। এবারে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ- ৫ দুটি কমেছে। এবার পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ এবং জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন।
যারা জিপিএ-৫ পাওনি, তাদের কি সত্যিই সব শেষ হয়ে গেছে? এই প্রশ্নটি আমাদের জন্য উদ্বেগের। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলছেন ভিন্নকথা। তিনি বলেছেন, জিপিএ-৫ না পেলে সব খারাপ হয়ে যায়, তা কিন্তু মোটেও না। তাঁর মতে, ভালো ফল নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, এবং জিপিএ-৫ পাওয়া অবশ্যই আকাঙ্ক্ষিত। তবে, এর মানে এই নয় যে জিপিএ-৫ না পাওয়া মানেই জীবনের সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া, কিংবা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। বরং, তিনি জোর দিয়েছেন অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর– উচ্চশিক্ষার মূল ভিত্তি জিপিএ-৫ নয়, বরং প্রকৃত জ্ঞান ও চিন্তা করার ক্ষমতা।
তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্থক্য তুলে ধরেছেন। মুখস্থ করে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী এবং যারা সচেতনভাবে চিন্তা করে একটি বিষয় আত্মস্থ করে, এমনকি জিপিএ-৫ না পেলেও, তাদের মধ্যে বিশাল একটি পার্থক্য থাকে। এই পার্থক্যটি হলো সক্ষমতার। তাঁর মতে, মুখস্থবিদ্যা একজন শিক্ষার্থীকে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারবে না। এটি তাকে পুরো পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করবে না। কিন্তু যে শিক্ষার্থী নিজেদের মতো করে শিখে, সচেতনভাবে চিন্তা করে এবং বিশ্লেষণ করে জ্ঞান অর্জন করে, তার মধ্যে অনেক দূর যাওয়ার যোগ্যতা আছে।
এর প্রমাণ হিসেবে তিনি কিশোর আলোর একটি লেখায় কিছু বাস্তব উদাহরণ দিয়েছেন। তাঁর এক বন্ধু এইচএসসিতে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে পাস করেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। আরেকজন প্রতিবেশী, যিনি এইচএসসিতে প্রায় লাড্ডু পেয়ে কোনোমতে পাস করেছিলেন, তিনি এখন সুইজারল্যান্ডের সার্ন ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন এবং জার্মানিতে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীর চেয়েও জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা দেখাচ্ছেন বলে তিনি লিখেছেন। তাঁর টিউটোরিয়াল ক্লাসের সবচেয়ে ভালো তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউই জিপিএ-৫ পায়নি। এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা বলতেই পারি, শুধু জিপিএ-৫ অর্জনই সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি নয়।
যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছ, তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে জিপিএ-৫ না পাওয়াটা কোনো সমস্যাই সৃষ্টি করবে না। বিদেশে গেলে কেউ এসএসসি-এইচএসসির ফল সম্পর্কে জানতে চায় না।
বিদেশে পড়তে গেলে বরং অন্য কিছু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়াটা জরুরি। এখনই যেতে হলে এসএটি, এবং স্নাতক পাস করে গেলে জিআরই বা জি ম্যাট-এর মতো পরীক্ষাগুলো দিতে হয়। ইংরেজিতে যোগ্যতা প্রমাণের জন্য টোয়েফল বা আইইএলটিএস লাগে। এই পরীক্ষাগুলোতে যদি প্রথম ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকা যায়, তাহলে পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়া বা বৃত্তি পাওয়া সহজ হয়। যারা দেশে থাকবে, পড়াবে বা অন্য চাকরি করবে, তাদের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এবার এবার পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর মানে এবার ৩২ অংশের বেশি পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তাদের জন্য সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, ভেঙে পোড়ো না। আগামী পরীক্ষা পর্যন্ত যে সময় আছে, কাজে লাগাও। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে কেন ফল খারাপ হলো, ঘাটতিগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং এখন থেকেই নতুন উদ্যমে লেগে পড়তে হবে।
যখন একজন সফল মানুষ হবেন (সঠিক পথে থাকলে সফল না হওয়ার কোনো কারণ নেই), তখন এইচএসসিতে প্রত্যাশামতো ফল না পাওয়াটা হয়তো মনেও পড়বে না। এক জীবনের দীর্ঘ ইতিহাসে এইচএসসির ফল একটি ছোট পরিচ্ছেদমাত্র, পুরো বই কোনোক্রমেই নয়।