প্রতিদিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে কী ক্ষতি
আমরা যখন বসে থাকি, তখন দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটার তুলনায় শরীর অনেক কম শক্তি খরচ করে। কিন্তু আধুনিক জীবনে অনেক মানুষই দিনের বড় একটা সময় বসে কাটান। ডেস্কে কাজ করেন, গাড়ি চালান কিংবা স্ক্রিনের সামনে বসে থাকেন। গবেষণা বলছে, এভাবে দীর্ঘ সময় বসে থাকা শরীরের জন্য নীরব কিন্তু গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সঙ্গে স্থূলতার সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। শুধু তা–ই নয়, এটি ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’ নামে পরিচিত কয়েকটি সমস্যার সঙ্গেও যুক্ত। এই অবস্থার মধ্যে পড়লে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া, কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব সমস্যা একসঙ্গে থাকলে হৃদ্রোগ ও অন্যান্য জটিল অসুখের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অতিরিক্ত সময় বসে থাকলে হৃদ্রোগ ও ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে। একদল গবেষক ১০ লাখের বেশি মানুষের ওপর করা ১৩টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করেন। সেখানে দেখা যায়, যাঁরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন এবং প্রায় কোনো শারীরিক কর্মকাণ্ড করেন না, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি প্রায় স্থূলতা বা ধূমপানের মতোই বেশি। তবে একই সঙ্গে এটাও জানা গেছে, প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭৫ মিনিট মাঝারি মাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়াম করলে দীর্ঘ সময় বসে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব। অ্যারোবিক ব্যায়াম হলো সেই ধরনের ব্যায়াম, যার ফলে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে শুরু করে। যেমন: জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো, জগিং, দড়ি লাফ, দৌড়ানো, অ্যারোবিক নৃত্য, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
অন্য গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দেয়, যাঁরা খুব সক্রিয় জীবনযাপন করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বসে থাকার সময় বেশি হলেও মৃত্যুঝুঁকিতে তেমন প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ মূল বিষয়টি হলো, সারা দিনে তুমি কতটা নড়াচড়া করো। যত কম বসবে আর যত বেশি শরীর নড়াবে, ততই স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
স্বাস্থ্য ভালো রাখার শুরুটা হতে পারে খুব সহজভাবে। প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বসা থেকে উঠে একটু দাঁড়ানো বা নড়াচড়া করার অভ্যাস করা যেতে পারে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাঁটার সুযোগ বের করাও কাজে দেয়। ফোনে কথা বলার সময় বা টেলিভিশন দেখার সময় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভালো অভ্যাস হতে পারে। ডেস্কে কাজ করলে দিনের কিছু সময় দাঁড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। উঁচু টেবিল বা কাউন্টার ব্যবহার করেও এটা করা সম্ভব। যদিও শুধু দাঁড়িয়ে থাকলেই সব ঝুঁকি কমে যাবে, এমন নিশ্চিত প্রমাণ এখনো নেই।
অফিসে মিটিং বা ক্লাসে পড়া মানেই টেবিল বসে থাকা। এই ধারণা ভেঙে হাঁটতে হাঁটতে আলোচনা করা বা পড়াও একধরনের সমাধান হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেকোনো ধরনের নড়াচড়াই শরীরের জন্য উপকারী। খুব হালকা গতিতে হাঁটাও স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে ক্যালরি খরচ হয়, যা ওজন কমাতে ও শক্তি বাড়াতে সহায়ক। নিয়মিত শারীরিক কর্মকাণ্ড পেশির গঠন মজবুত করে এবং মানসিক সুস্থতা বাড়িয়ে তোলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব বিষয় আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সূত্র: মায়োক্লিনিক