অরোরা কীভাবে তৈরি হয়

অরোরাফ্রিপিক

তুমি হয়তো জানো, রংধনু কীভাবে তৈরি হয়। আমরা প্রায় সবাই রংধনু দেখেছি। বৃষ্টির ফোঁটার মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো যখন বিচ্ছুরিত হয় বা ভেঙে যায়, তখন রংধনু দেখা যায়। পৃথিবীর বহু জায়গায়ই রংধনু দেখা যায়। যেখানে বৃষ্টি হয় ও সূর্যের আলো আছে, সেখানেই রংধনু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আলোর নাচন হিসেবে আরেকটা সুন্দর জিনিস আছে, যেটা সবখানে দেখা যায় না। এর নাম অরোরা। এটি দেখা বেশ কঠিন। কারণ, এটি তৈরি হয় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অনেক ওপরে, প্রায় মহাকাশের কাছাকাছি। এটি শুধু পৃথিবীর উত্তর বা দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে দেখা যায়। অরোরা কীভাবে তৈরি হয়, চলো জানা যাক।

আরও পড়ুন

সূর্যের ভেতর সব সময়ই প্রচণ্ড শক্তির কাজকর্ম চলে। কখনো কখনো সূর্যে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়, যাকে বলে সোলার ফ্লেয়ার। আবার কখনো সূর্য থেকে বিশাল গরম গ্যাসের দলা ছুটে বের হয়, যাকে বলা হয় করোনাল ম্যাস ইজেকশন। এই দুটি ঘটনার ফলে সূর্য থেকে লাখ লাখ কিলোমিটার বেগে চার্জযুক্ত কণা ছুটে বের হয়। এই কণাগুলো সৌরবাতাসে ভেসে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসে।

পৃথিবীর চারপাশে আছে শক্তিশালী একটি চৌম্বকক্ষেত্র, যাকে বলে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার। এটি সাধারণত সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর কণাগুলোকে ঠেকিয়ে রাখে। কিন্তু সূর্যের বিস্ফোরণ খুব শক্তিশালী হলে কিছু কণা এই চৌম্বকক্ষেত্র ভেদ করে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে ঢুকে পড়ে। এ সময় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে ছোট ছোট ঝড়ের মতো ঘটনা ঘটে, যাকে সাবস্টর্ম বলা হয়।

এই সূর্যকণাগুলো যখন পৃথিবীর ওপরের পাতলা বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন কণার সঙ্গে প্রচণ্ড বেগে ধাক্কা খায়, তখন বায়ুর কণাগুলো কিছুক্ষণের জন্য শক্তিকে ধরে রাখে। পরে সেই অতিরিক্ত শক্তি ছেড়ে দিয়ে এরা আলো ছড়াতে শুরু করে। এই আলোই আমাদের চোখে অরোরা হিসেবে দেখা যায়। কোন গ্যাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে, তার ওপর অরোরার রং নির্ভর করে। অক্সিজেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সবুজ ও লাল আলো দেখা যায়। নাইট্রোজেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দেখা যায় নীল ও বেগুনি আলো। এ কারণে অরোরা দেখতে রঙিন পর্দার মতো মনে হয়।

আরও পড়ুন

মহাকাশযানের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, মেরু অঞ্চলের চারপাশে একটি আলোর বৃত্ত থাকে, যাকে অরোরাল ওভাল বলা হয়। এই বৃত্ত কখনো পুরোপুরি নিভে যায় না। সূর্যের বড় ধরনের বিস্ফোরণ হলে এটি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তখন অনেক জায়গা থেকে অরোরা দেখা যায়।

মেরু অঞ্চলে ভ্রমণ করে তুমিও দেখতে পারো অরোরা। দুই মেরুর অরোরার দুই রকম নাম। একটা হলো অরোরা বোরিয়ালিস (উত্তর মেরুর অরোরা)। আরেকটি হলো অরোরা অস্ট্রালিস (দক্ষিণ মেরুর অরোরা)। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি থাকা বেশ কিছু দেশ থেকেই অরোরা দেখা যায়। গত সপ্তাহে প্রায় পুরো যুক্তরাষ্ট্রে অরোরা দেখা গেছে। হুট করে দেখা যায় এমন নয়, বিজ্ঞানীরা আগেই সম্ভাবনা জানাতে পারেন। বলতে পারেন, অমুক সময়ে অমুক জায়গায় অরোরা দেখা যাবে। ঠিক বৃষ্টির মতো।

সূত্র: নাসা ওয়েবসাইট

আরও পড়ুন