অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে রাখা হবে

এখন থেকে অস্ট্রেলিয়ার ১৬ বছরের নিচে কেউ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না।ছবি: ম্যাথিউ অ্যাবট, নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া

সারা বিশ্বের শিশু-কিশোরদের মধ্যে এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাপক জনপ্রিয়। অস্ট্রেলিয়ায়ও তেমনি। এ দেশের যেকোনো এলাকায় শিশু-কিশোরেরা ফোনে সময় কাটাচ্ছে, এমন দৃশ্য ছিল স্বাভাবিক। হঠাৎ করে সরকারের সিদ্ধান্তে দৃশ্যটি বদলে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের শেষে এসে দেশটি একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, এখন থেকে অস্ট্রেলিয়ার ১৬ বছরের নিচে কেউ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না।

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, অ্যাপগুলো ছিল কোটি কিশোরের প্রতিদিনের সঙ্গী। হঠাৎ করেই অস্ট্রেলিয়ায় এগুলো ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য বন্ধ হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে শুধু স্ন্যাপচ্যাটেই আছে ৪ লাখ ৪০ হাজার জন। ইনস্টাগ্রামে আছে আরও ৩ লাখ ৫০ হাজার জন। টিকটকে দুই লাখ। আইন চালু হলে এক ঝটকায় বদলে যাবে পুরো ডিজিটাল মানচিত্র।

এই আইন নিয়ে বিশ্বজুড়ে কৌতূহলের শেষ নেই। কেউ একে বলছেন খুব সাহসী উদ্যোগ। কেউ বলছেন অযাচিত হস্তক্ষেপ। কেউ দেখছেন কিশোরদের জন্য নতুন সুযোগ। আবার কেউ ভাবছেন, কিশোরেরা কি সত্যিই এতে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়বে?

আরও পড়ুন

কোন অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ?

ফেসবুক থেকে ইউটিউব, সব বড় প্ল্যাটফর্মই এই আইনের আওতায় আছে। শিশুরা চাইলে ইউটিউব কিডস বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারবে। কারণ, এগুলো মূলত মেসেজিং বা শিশুকেন্দ্রিক অ্যাপ বলে মনে করা হয়। তবে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্পষ্ট করে দিয়েছে, যদি কোনো প্ল্যাটফর্মকে তারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে, তালিকায় নতুন নাম যেকোনো সময় যোগ করা হবে।

কিশোরদের বয়স কীভাবে বের করা হবে?

এই প্রশ্নটি নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। টেক কোম্পানিগুলো কীভাবে জানবে কে ১৫ আর কে ১৬ বছরের? সেই দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে কোম্পানিগুলোকে। তারা অ্যাকাউন্টের ব্যবহারকারীর পুরোনো আচরণ যাচাই করবে। কখন অ্যাপ ব্যবহার করা হয়, তা–ও যাচাই করা হবে। কার সঙ্গে যোগাযোগ হয়, এমনকি কণ্ঠ কেমন, চেহারা বা ছবির বিশ্লেষণ করবে। তবে শর্ত হলো, কোনো ব্যবহারকারীর সরকারি পরিচয়পত্র চাইতে পারবে না প্ল্যাটফর্মগুলো।

আরও পড়ুন

অ্যাকাউন্ট ছাড়া কি সোশ্যাল মিডিয়া দেখা যাবে?

ওপেন কনটেন্ট দেখা যাবে আগের মতোই। তবে সরকারের যুক্তি হলো, অ্যাকাউন্ট না থাকলে শিশু-কিশোরেরা আসক্তি সৃষ্টি করে এমন অ্যালগরিদম, পুশ নোটিফিকেশন বা অবিরাম স্ক্রলিংয়ের ফাঁদে পড়বে না। দায়িত্বশীলদের মতে, এটাই সবচেয়ে ক্ষতিকর। এ থেকেই শিশু-কিশোরদের রক্ষা করতে চান তাঁরা।

টেক কোম্পানিগুলো কী বলছে?

টেক জায়ান্টদের বক্তব্য হলো, আইনটি হঠাৎ করে প্রয়োগ করা হয়েছে। যথেষ্ট গবেষণা করা হয়নি। তারা বলছে, কিশোরদের নিরাপদ রাখতে যে কাস্টম ফিচারগুলো তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলো এখন আর কোনো কাজে লাগবে না। তবু প্রায় সবগুলো প্ল্যাটফর্ম জানিয়ে দিয়েছে, তারা আইন মানবে এবং লক্ষাধিক কিশোরের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেবে।

আরও পড়ুন

বড় অঙ্কের জরিমানা থাকছে

কোনো কোম্পানি যদি ১৬ বছরের নিচের ব্যবহারকারীদের বাদ দিতে ব্যর্থ হয়, তবে জরিমানা হিসেবে গুনতে হতে পারে ৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। তবে কখন এই জরিমানা আরোপ করা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।

কেন এমন আইন?

এই আইন করার ক্ষেত্রে সামাজিক বাস্তবতা বড় ভূমিকা রেখেছে। অস্ট্রেলিয়ায় বেশ কিছু পরিবার সন্তান হারানোর বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে শেয়ার করেছেন। যেমন অনলাইন বুলিং, উদ্বেগ, আত্মহত্যাপ্রবণতা, এসবে সোশ্যাল মিডিয়া বড় ভূমিকা রেখেছিল বলেই তাঁদের ধারণা।

নীতিনির্ধারকেরা বারবার বলছেন, এটি নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং বয়সসীমা সামান্য পিছিয়ে দেওয়া। ঠিক যেমন গাড়ি চালানোর লাইসেন্সের ক্ষেত্রে দেখা যায়।

আরও পড়ুন

কিশোরেরা কী ভাবছে?

সংবাদমাধ্যম এবিসির বড় আকারে করা এক জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ কিশোর এই আইনকে বিশ্বাসই করে না। তারা মনে করে, এই আইন কাজ করবে না। এটি ভালো কোনো সিদ্ধান্তও নয়। ৭৫ শতাংশ কিশোর জানিয়েছে, তারা যেভাবেই হোক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার চালিয়ে যাবে।

আইন কার্যকর হওয়ার আগের সপ্তাহগুলোতে দেখা গেছে, টিকটক বা ইনস্টাগ্রামের বিকল্প ছবি শেয়ারিং অ্যাপ বা চ্যাট অ্যাপগুলো অস্ট্রেলিয়ার অ্যাপ স্টোরে ডাউনলোডের তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে।

এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে দুজন ১৫ বছর বয়সী কিশোর আইনটির বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে। তাদের যুক্তি, এই আইন তাদের মতপ্রকাশ এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার ক্ষুণ্ন করছে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

আরও পড়ুন