বুলেটের পর আসছে হাইপারলুপ ট্রেন, চলবে বিমানের গতিতে

দুই কিলোমিটার দীর্ঘ টিউবের ভেতরে চালানো হয়েছে হাইপারলুপ প্রযুক্তি

চীনের প্রকৌশলীরা নিয়ে এসেছেন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির হাইপারলুপ ট্রেন। এই ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। চীনের শানশি প্রদেশে বিশেষভাবে নির্মিত একটি ভ্যাকুয়াম টিউবের ভেতরে এই ট্রেন ঘণ্টায় ৬২১ মাইল বা ১,০০০ কিলোমিটার গতি তুলেছে! এই গতির তুলনা করা হচ্ছে বিমানের সঙ্গে। একটি যাত্রীবাহী বোয়িং ৭৭৭ বিমান প্রায় একই গতিতে ওড়ে।

হাইপারলুপের আগের প্রযুক্তি ছিল বুলেট ট্রেন। চীন, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে বুলেট ট্রেন, যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এর গতি প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

হাইপারলুপ ম্যাগনেটিক লেভিটেশন (ম্যাগলেভ) প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করা হয়েছে। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ টিউবের ভেতরে চালানো হয়েছে এই প্রযুক্তি।

দ্রুতগতির এই হাইপারলুপ ট্রেনে ম্যাগনেটিক লেভিটেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে ট্রেনটি লাইনের ওপরে ঘর্ষণহীনভাবে ভেসে চলতে পারে। আবার এতে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর প্রয়োজন হয় না। এটি বিদ্যুতে চলবে।

ভূমিতে দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ে বহু দেশ বহু বছর ধরে কাজ করছে। গত কয়েক বছরে দেখা গেছে উচ্চগতির নানা ধরনের উদ্ভাবন। এর মধ্যে নতুন উদ্ভাবন হাইপারলুপ সিস্টেম। সম্ভবত প্রকল্পটি ভ্রমণের ধারণাকেই পাল্টে দেবে। কারণ, এর মাধ্যমে স্থলপথে বিমানের মতো দ্রুতগতিতে যাতায়াতের সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভূমিতে বিমানের গতি কি সত্যিই অর্জন করা সম্ভব?

হাইপারলুপ ম্যাগনেটিক লেভিটেশন (ম্যাগলেভ) প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করা হয়েছে। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ টিউবের ভেতরে চালানো হয়েছে এই প্রযুক্তি। এই পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয়ে একটি সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। চৌম্বকীয় লেভিটেশনসহ অত্যাধুনিক কিছু প্রযুক্তির সমন্বয়ে প্রোটোটাইপটি পরিচালনা করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, প্রযুক্তিটি সর্বোচ্চ কত গতি তুলতে পারবে, তবে নির্মাতারা জানিয়েছেন, পরীক্ষায় প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

চৌম্বকীয় লেভিটেশন পদ্ধতিতে ট্রেন বায়ুশূন্য চৌম্বকক্ষেত্র ব্যবহার করে, তাই ট্রেনের যাত্রা হয় ঘর্ষণহীন। হাইপারলুপ প্রকল্পের প্রকৌশলীরা এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছেন, যেখানে ট্রেন ‘মাটির ওপর দিয়ে উড়ে যাবে’। গতি হবে বিমানের গতির সমান।

এই উদ্যোগ নিয়েছে চীনের শানশি প্রাদেশিক সরকার এবং চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন। চীনের দাতং শহরে পরীক্ষামূলকভাবে এই রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে পরের বছরের নভেম্বরের মধ্যেই লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

নির্মাতারা দাবি করেছেন, এটি একটি নতুন রেকর্ড। মনে করা হচ্ছে, হাইপারলুপ চীনের পরিবহনব্যবস্থাকে বদলে দেবে। বিশাল এই দেশের বড় শহরগুলোকে স্থলপথে যুক্ত করবে। সারা বিশ্বের যাতায়াতের ধারণাই বদলে দিতে পারে এই প্রযুক্তি। ভ্রমণের সময়কে কমিয়ে দেবে। যেমন বেইজিং থেকে সাংহাইয়ের দূরত্ব ১ হাজার ২১৩ কিলোমিটার—যার জন্য সময় লাগবে মাত্র ৯০ মিনিট। চৌম্বকীয় ভাসমান প্রযুক্তির সাহায্যে ঘর্ষণ কমানো হবে, কম চাপযুক্ত টিউবের ভেতর বাতাসের প্রতিরোধ কমিয়ে ফেলা হবে। এভাবে এই ব্যবস্থা রেল পরিবহনের ভবিষ্যৎই বদলে দিতে পারে। তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বড় পরিসরে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এটি একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প হবে।

আরও পড়ুন