নতুন কিছু তৈরি করতে চায় আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদকজয়ী আরিয়েত্তি

আরিয়েত্তি ইসলামব্র্যাক রোবটিকস ক্লাবের সৌজন্যে

আমি প্রায়ই শুনি, বিদেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নতুন আবিষ্কারগুলো শিশুদেরও দেখানোর সুযোগ করে দেয়। সেখানে ছোটরা তাদের নিজেদের কাজ ও ভাবনার কথা বলতে পারে। শিশুদের প্রতিভা আর কৌতূহলকে সম্মান জানিয়ে এভাবেই তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞানের পথে অনুপ্রাণিত করে। কিছুদিন আগে আমার নিজের দেশেই এমন একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে, তা আমি ভাবতেও পারিনি।

আমার নাম আরিয়েত্তি ইসলাম। আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি এবং কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। রোবট বানাতে ও চালাতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। সম্প্রতি আমার এমনই এক স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে, যেখানে আমি দেখা পেয়েছি বাংলাদেশের গর্ব ‘মঙ্গল-তরি’ রোভারের।

আরও পড়ুন
রোবটিকস ল্যাবে আরিয়েত্তি
ব্র্যাক রোবটিকস ক্লাবের সৌজন্যে

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে পা রাখতেই আমার অন্য রকম লাগছিল। বাংলাদেশে এত সুন্দর স্থাপনা আমি খুব কমই দেখেছি। আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন আমার বাবা। আমাদের স্বাগত জানালেন ‘মঙ্গল-তরি’ দলের প্রধান মাহির আহমেদ ভাইয়া এবং তাঁর দলের সদস্যরা। তাঁদের দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা অনেক পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু তাঁদের চোখেমুখে ছিল স্বপ্ন সত্যি করার আনন্দ।

রোবটিকস ল্যাবে প্রবেশ করতেই আমার চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল। আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল মঙ্গল-তরি! ছবিতে বা ভিডিওতে এত দিন যাকে দেখেছি, তাকে জলজ্যান্ত সামনে থেকে দেখার অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ। শুধু মঙ্গল-তরিই নয়, সেখানে ছিল তাদের বানানো ‘অন্বেষা’, ‘ডুবুরি’ নামের রোবট, বিভিন্ন ধরনের ড্রোন আর মানবাকৃতির রোবটও।

আরও পড়ুন
ভাইয়ারা আমাকে মঙ্গল-তরির রিমোট কন্ট্রোলটি হাতে দিয়ে বললেন, ‘এবার তুমি চালিয়ে দেখাও তো!
ব্র্যাক রোবটিকস ক্লাবের সৌজন্যে

ভাইয়ারা আমাকে মঙ্গল-তরির বিভিন্ন সংস্করণ দেখালেন। মাহির ভাইয়া বুঝিয়ে বললেন, এটি শুধু একটি রোবট নয়, এটি আন্তর্জাতিক ‘ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ’-এ বাংলাদেশের পতাকা বহন করে। মঙ্গলের মতো প্রতিকূল পরিবেশে মাটি পরীক্ষা করা বা নমুনা সংগ্রহ করার মতো জটিল কাজ করার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়েছে। এর চাকার গঠন, রোবোটিক হাত আর ক্যামেরার কাজ দেখে আমি বুঝতে পারছিলাম, এর পেছনে কী পরিমাণ মেধা ও শ্রম দেওয়া হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি মঙ্গল-তরির নকশা দেখে, যা আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী রিকশা আর্টের থিমে তৈরি।

তবে আমার সেরা মুহূর্তটি ছিল, যখন ভাইয়ারা আমাকে মঙ্গল-তরির রিমোট কন্ট্রোলটি হাতে দিয়ে বললেন, ‘এবার তুমি চালিয়ে দেখাও তো!’ আমার ছোট্ট হাতে রিমোট কন্ট্রোলটা ধরতেই উত্তেজনায় বুক কাঁপছিল। আমি যখন রোভারটিকে নিয়ে ইউনিভার্সিটির বিশাল করিডরে চালাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যেন আমি মহাকাশ থেকে মঙ্গলের মাটিতে কোনো যান নিয়ন্ত্রণ করছি।

আরও পড়ুন

এরপর আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন অধ্যাপক ড. মো. খলিলুর রহমান এবং আমার আরেক পরিচিত শিক্ষক সকাল রায়। গণিত অলিম্পিয়াডের কারণে সকাল স্যারকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। তাঁরা আমার স্বপ্নের কথা শুনলেন, বিজ্ঞান আর গণিতের মজার সব দিক নিয়ে আলোচনা করলেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে আমি যখন বললাম যে আমি গল্প লিখি, তখন তাঁরা বেশ অবাক হলেন। আমি আমার গত বইমেলায় প্রকাশিত প্রথম বই ‘আরিয়েত্তির ছোট্ট ছোট্ট গল্পেরা’ তাঁদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিলাম। খলিলুর রহমান স্যার আমাকে রোবোটিকসের যেকোনো বিষয়ে টেকনিক্যাল সাহায্যের আশ্বাসও দিলেন। এত বড় মাপের শিক্ষকেরা যখন আমার মতো ছোট শিশুর কথা এত মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং উৎসাহ দেন, তখন মনটা আনন্দে ভরে যায়।

এই অভিজ্ঞতা আমার স্বপ্নগুলোকে আরও বড় করে দিয়েছে। মঙ্গল-তরি দল ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সব শিক্ষককে ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য। আমি বড় হয়ে তাঁদের মতোই নতুন কিছু তৈরি করে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। এই দিনের কথা আমি কোনো দিন ভুলব না।

আরও পড়ুন