ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের বর্ষসেরা তালিকায় থাকা এই ছবিটি যেভাবে তোলা হলো

২০২৫ সালের ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সেরা ছবির তালিকায় আছে এই ছবিটিরোই গ্যালিটজ

মেরু অঞ্চলের ভাঙা বরফখণ্ডের মাঝখানে ভাসছে একটি বিশাল স্পার্ম তিমি। মরে পরে আছে। পচতে শুরু করেছে শরীর। মুখ হাঁ করা। ড্রোন দিয়ে দৃশ্যটি যখন ক্যামেরাবন্দী করেন আলোকচিত্রী রোই গ্যালিটজ, ছবিটি তাঁকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। প্রথমে এর শরীরের ওপরে থাকা মেরু ভালুকটি চোখেই পড়েনি। এটি ছিল একটি ক্ষুধার্ত মেয়ে মেরু ভালুক। তিমিটির শক্ত, পুরু চামড়া ছিঁড়ে ফেলতে মাত্র মুখ খুলেছে।

নরওয়ের স্বালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি ছবি তোলার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন গ্যালিটজ। তখন দিগন্তে ভাসতে থাকা একটি কালচে ছোপ তাঁর চোখে পড়ে। বরফ ভেঙে তাঁদের জাহাজটি এর কাছে যেতেই বোঝা গেল, এটি একটি বিশাল পচে যাওয়া মৃতদেহ। চোখে দেখার পাশাপাশি গন্ধও নাকে লাগল। গন্ধটা বেশ তীব্র। বিষাক্ত গ্যাসের নিশ্বাসের মতো লাগছিল গ্যালিটজের কাছে।

আরও পড়ুন

আর্কটিক অঞ্চলটা অনেকটা বিশাল ফ্রিজের মতো। কিন্তু কখনো কখনো এখানেও গন্ধ পাওয়া যায়। এই মৃতদেহ অভিযানে থাকার সবার সামনে বড় প্রশ্ন হিসেবে ওঠে, এখানে একটি স্পার্ম তিমি কেন? কীভাবে এল?

এ অঞ্চলে স্পার্ম তিমি দেখা খুবই বিরল। এই প্রজাতির তিমি সাধারণত উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ সাগরে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু আর্কটিকের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠায় কিছু তিমি নিজেদের এলাকা ছাড়িয়ে আরও উত্তরের দিকে চলে আসছে। প্রবল স্রোত ও বাতাসও তিমিটিকে উত্তরের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এই অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি আলোকচিত্রীদের জন্য ছিল চমক। মেরু ভালুকটির জন্যও ছিল এক দারুণ সুযোগ। তবে পেট পুরে খেতে ওকে বেশ পরিশ্রম করতে হচ্ছিল।

ছবিতেই দেখা যাচ্ছে, তিমির দেহের ভেতরে এটি ঢোকার চেষ্টা করছে। চামড়া ভেদ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু ত্বকটা অনেক পুরু।

আরও পড়ুন

তিমিটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। বয়সের কারণেও হতে পারে, আবার কোনো জাহাজের আঘাতেও আহত হয়ে মারা যেতে পারে। স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া এটা বের করা অসম্ভব বলে মনে করেন গ্যালিটজ।

পরের সপ্তাহে আরেকটি অভিযানে গ্যালিটজ আবার সেখানে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে তিমিটি আর সেখানে ছিল না।

মেরু অঞ্চলে আবহাওয়ার মতো এখানে সবকিছুই অনিশ্চিত। গ্যালিটজের মতে, ‘আজ যে দৃশ্যটা দেখা গেল, কাল সেটা হয়তো আর থাকবে না।’

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

আরও পড়ুন