স্যামন শিকারে ডলফিনের সঙ্গে দল বেঁধেছে খুনে তিমি অরকা, বিজ্ঞানীদের নতুন পর্যবেক্ষণ

অরকারা ডলফিনকে অনুসরণ করছেছবি: ইন্সটিটিউট ফর দ্য ওশানস অ্যান্ড ফিশারিস, যুক্তরাষ্ট্র

সমুদ্রের শীর্ষ শিকারি হিসেবে অরকার খ্যাতি অনেক দিনের। শক্তি, বুদ্ধি আর দলগত কৌশলে এরা অনন্য। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শিকারের সময় অরকারা এখন শুধু নিজেদের ওপর ভরসা করছে না, স্যামন ধরতে এরা ডলফিনের সাহায্যও নিচ্ছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার উপকূলে প্রথমবারের মতো দেখা গেছে, অরকা আর ডলফিন একসঙ্গে দল বেঁধে শিকার করছে। গবেষকদের মতে, এটি কাকতালীয় কোনো সহাবস্থান নয়, সচেতনভাবেই এরা কাজটি করেছে।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে। এতে দেখা যায়, নর্দান রেসিডেন্ট কিলার হোয়েল, অরকার একটি বিশেষ গোষ্ঠী দল বেঁধেছে প্যাসিফিক হোয়াইট-সাইডেড ডলফিনের সঙ্গে। এদের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ড্রোন ভিডিও, পানির নিচের ফুটেজ, শব্দ ও দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, লিবনিজ ইনস্টিটিউট ও হাকাই ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

আরও পড়ুন

গবেষণার প্রধান লেখক, ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক বিজ্ঞানী সারা ফরচুন বলছেন, অরকারা স্যামন শিকারে দারুণ দক্ষ। এরা নিজেরাই দারুণ শিকারি। অথচ দেখা গেছে, এরা ডলফিনকে অনুসরণ করছে। যেন ডলফিনই এদের পথ দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা বিজ্ঞানীদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত।

নর্দান রেসিডেন্ট অরকারা প্রায় পুরোপুরি চিনুক স্যামন শিকার করে খেয়ে বেঁচে থাকে। অন্যদিকে ডলফিন সাধারণত হেরিংয়ের মতো ছোট মাছ শিকার করে। স্যামন আকারে বড় হওয়ায় ডলফিনের পক্ষে একা ধরা কঠিন। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, স্বচ্ছ প্রশান্ত মহাসাগরের পানিতে ডলফিনরা দ্রুতগতিতে ছুটে স্যামনের খোঁজ করছে। স্যামনগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় তিন ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ডলফিনদের পেছনে পেছনে চলছে অরকার দল।

যখন অরকারা স্যামন ধরে পানির ওপরে ভাগ করে খায়, তখন ডলফিনরা সেই খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ সংগ্রহ করে। সাধারণত শিকারের সময় অরকারা খাবার অন্যকে শেয়ার করে না। পাশাপাশি আক্রমণাত্মকও থাকে। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, অরকারা ডলফিনদের উপস্থিতিতে কোনো বিরক্তি বা আগ্রাসন দেখাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

গবেষকেরা প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়তো ডলফিনরা অরকার পাশে থেকে নিরাপত্তা খুঁজছে। কারণ, এ অঞ্চলে বিগস অরকা নামে আরেক ধরনের কিলার হোয়েল আছে, এরা ডলফিন শিকার করে। বিভিন্ন অরকা গোষ্ঠী সাধারণত একে অন্যকে এড়িয়ে চলে। আরেকটি ধারণা ছিল, ডলফিনরা অরকার পাশে সাঁতার কেটে শক্তি সাশ্রয় করছে। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, এটি হয়তো ‘ক্লেপ্টোপ্যারাসিটিজম’। মানে বিনা পরিশ্রমে খাবারের ভাগ চুরি।

কিন্তু পর্যবেক্ষণে এসব তত্ত্ব টেকেনি। সারা ফরচুন বলছেন, ‘ডলফিনরা যদি শুধু ফ্রি খাবারের জন্য থাকত, তাহলে অরকারা নিশ্চয়ই আক্রমণাত্মক আচরণ করত বা এলাকা ছেড়ে চলে যেত। কিন্তু আমরা প্রজাতির মধ্যে কোনো বিরোধিতার প্রমাণ পাইনি।’

এরা পরস্পরকে সহযোগিতা করছে। ফরচুনের ভাষায়, ‘অরকারা নিজেদের অবস্থান এমনভাবে বদলাচ্ছিল, যেন এরা ডলফিনকে অনুসরণ করছে। এতে ডলফিনদের নেতৃত্বের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।’

আরও পড়ুন

এই শিকার কৌশল আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য গবেষণা দল ঝুঁকিপূর্ণ এক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। ছোট নৌকায় তিনজন গবেষক লম্বা কার্বন ফাইবারের দণ্ড দিয়ে অরকার গায়ে কিছু সময়ের জন্য বাতাসের সাহায্যে আটকে থাকে এমন ক্যামেরা বসান। কিছু সময় পর এই ক্যামেরা নিজে থেকেই খুলে পড়ে। এই যন্ত্রগুলো ভিডিও ও অডিও একই সঙ্গে ধারণ করছে।

পানির ১০০ ফুটের বেশি গভীরে কী ঘটছে, তার চিত্র ধরা পড়েছে গবেষকদের ক্যামেরায়। ডলফিনরা খুব কাছাকাছি অবস্থান করেছে। অরকার গায়ে লাগানো যন্ত্রে এদের শব্দও ধরা পড়েছে। ফরচুন জানিয়েছেন, অনেক সময় দেখা গেছে, অরকা ইকোলোকেশন ব্যবহার করার পর কিছুক্ষণ সব চুপচাপ। এরপর ডলফিনের ক্লিক শব্দ। এতে প্রশ্ন উঠেছে, দুই প্রজাতি কি একে অন্যের কথা শুনছে?

গবেষকেরা বলছেন, এ সহযোগিতা উভয় পক্ষের জন্য কতটা লাভজনক, তা বুঝতে আরও গবেষণা দরকার। ডলফিনের সঙ্গে শিকার করলে অরকারা কি বেশি সফল হয়? ডলফিনরা কি সত্যিই কোনো সুবিধা পাচ্ছে?

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন